Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
নির্মম অস্ট্রেলীয়রা যখন কান্নায় ভেঙে পড়েছিল

চোখের জলে সমর্থন ফিরছে ক্রিকেটবিশ্বের

বৃহস্পতিবার সিডনিতে পা দিয়ে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।

বিপর্যস্ত: আর ধরে রাখতে পারলেন না নিজেকে। সিডনিতে সাংবাদিক বৈঠকে কান্না স্মিথের। ছবি:এএফপি

বিপর্যস্ত: আর ধরে রাখতে পারলেন না নিজেকে। সিডনিতে সাংবাদিক বৈঠকে কান্না স্মিথের। ছবি:এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ০৪:১৮
Share: Save:

ক্রিকেটবিশ্ব কি কোনও দিন ভেবেছিল এই দৃশ্য দেখতে পাবে? নির্মম, পেশাদারিত্বের বলয়ে মোড়া অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা কাঁদছেন!

অভাবনীয়, প্রায় অবিশ্বাস্য এই ছবি দেখা গেল সিডনি থেকে জোহানেসবার্গে। যখন বল-বিকৃতি কাণ্ডে কলঙ্কিত মহাতারকাদের পেশাদারিত্বের বর্ম কিছুটা হলেও খসে গেল। যখন দেখা গেল, দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়ে শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করেছেন স্টিভ স্মিথ।

নির্বাসিত স্মিথের যে কান্না দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। বলছে, এটা ওর প্রাপ্য ছিল না। শেন ওয়ার্ন থেকে মাইকেল ক্লার্ক, রোহিত শর্মা থেকে ফ্যাফ ডুপ্লেসি— সবাই কিন্তু পাশে দাঁড়াচ্ছেন প্রাক্তন অধিনায়কের।

বৃহস্পতিবার সিডনিতে পা দিয়ে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। প্রথমে যখন কথা বলছিলেন, সেই অস্ট্রেলীয় কাঠিন্য ধরা পড়ছিল স্মিথের গলায়। খুব ঠান্ডা ভাবে বলে যাচ্ছিলেন, ‘‘আমি একটা কথা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে চাই। যা ঘটেছে, অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক হিসেবে তার পুরো দায় আমার। তবে যা ঘটে গেল তা সারা জীবন আমাকে তাড়া করে বেড়াবে।’’

আরও পড়ুন: দেশে ফেরানো হচ্ছে কলঙ্কিতদের

কিন্তু কতক্ষণ নিজেকে মুখোশের আড়ালে রাখা সম্ভব? বাবা-মায়ের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন তিনি। বললেন, ‘‘আমি ওদের সম্মান রক্ষা করতে পারলাম না।’’ পাশে দাঁড়ানো স্মিথের বাবা পিটার এগিয়ে এসে ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন। কান্নায় ভেঙে পড়া স্মিথ-কে তুলে নিয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু তখনও যে তাঁর কথা বলা বাকি। ক্ষমা চাওয়া বাকি। স্মিথ বলে চলেন, ‘‘আমার সতীর্থ, ক্রিকেটভক্ত আর দেশবাসীকে একটা কথাই বলতে চাই। ক্ষমা চাইছি ছোটদের কাছে। যা ঘটেছে তার জন্য আমি দুঃখিত। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’’

সান্ত্বনা: স্মিথকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন বাবা পিটার। ছবি: গেটি ইমেজেস

অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমের অন্তর্তদন্তে খলনায়ক হিসেবে উঠে আসছে একটা নামই। ডেভিড ওয়ার্নার। আপনি কি এই ঘটনার জন্য ওয়ার্নার-কে দায়ী করছেন? স্মিথের জবাব, ‘‘আমি কাউকে দায়ী করছি না। আমি অধিনায়ক ছিলাম। সব দায় আমার।’’ কান্নাভেজা গলায় স্মিথ আরও বলে চলেন, ‘‘ক্রিকেট আমার জীবন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমি সব সময় চেয়েছিলাম, বাচ্চাদের আনন্দ দিতে। কিন্তু আজ আমি রক্তাক্ত।’’

‘রক্তাক্ত’ হলেও তিনি এখন পাশে পাচ্ছেন তাঁর বাইশ গজের ‘শত্রু’দেরও। জোহানেসবার্গে বসে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডুপ্লেসি বলেছেন, ‘‘স্মিথ নির্বাসিত হওয়ার পরে আমি ওকে এসএমএস করেছিলাম। আমি মন থেকে বলছি, ছেলেটার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে। কখনও চাইব না, এই রকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কেউ যাক।’ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এর পর ভারত। রোহিত শর্মার টুইট, ‘দু’টো দৃশ্য আমার মনের মধ্যে বারবার ভেসে উঠছে। যে ভাবে স্মিথ-কে জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরে ঘিরে রাখা হয়েছিল। আর স্মিথের শেষ সাংবাদিক বৈঠক। ওরা ভুল করেছিল এবং তা স্বীকার করে নিয়েছে। ঘরে বসে আমার পক্ষে বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। কিন্তু ওরা মহান ক্রিকেটার আর এই ঘটনা দিয়ে ওদের বিচার করা ঠিক হবে না।’

টুইট করেন সচিন তেন্ডুলকরও। লেখেন, ‘ওরা সবাই অনুতপ্ত, ওরা সবাই যন্ত্রণা পাচ্ছে। ওদের পরিবারের কথা ভাবুন। এ বার ওদের একটু একা থাকতে দিন।’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE