প্রশ্ন উঠছে, গত কয়েক বছরে ঠিক কত জন টেবিল টেনিস খেলোয়াড় জাতীয় স্তরে উঠে এসেছেন? তা হলে কি টেবিল টেনিসের বদলে ধীরে ধীরে দাপট দেখাচ্ছে ক্রিকেট। যে শিলিগুড়ি এক সময় একের পর এক টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন দিয়েছে সেই শিলিগুড়ি কি এখন ক্রিকেটার তৈরির কারখানা হয়ে উঠছে?
শিলিগুড়িতে কি ক্রিকেটের কাছে আধিপত্য হারাচ্ছে টেবিল টেনিস গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মান্তু ঘোষ, শুভজিৎ সাহা, সৌম্যজিৎ ঘোষ, অঙ্কিতা দাস, কস্তুরী চক্রবর্তী...শিলিগুড়ি থেকে একের পর এক টেবিল টেনিস তারকা উঠে এসেছেন জাতীয় স্তরে। বাংলা তথা ভারতের টেবিল টেনিসে কলকাতাকে সমানে সমানে টক্কর দিত উত্তরবঙ্গের এই শহর। সেই শিলিগুড়ি থেকেই আবার ক্রিকেটে উঠে এসেছেন ঋদ্ধিমান সাহা ও রিচা ঘোষ। এক জন ভারতের ছেলেদের দলে বহু বছর উইকেটরক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন। অন্য জন সবে ভারতের মেয়েদের দলে সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, গত কয়েক বছরে ঠিক কত জন টেবিল টেনিস খেলোয়াড় জাতীয় স্তরে উঠে এসেছেন? তা হলে কি টেবিল টেনিসের বদলে ধীরে ধীরে দাপট দেখাচ্ছে ক্রিকেট। যে শিলিগুড়ি এক সময় একের পর এক টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন দিয়েছে সেই শিলিগুড়ি কি এখন ক্রিকেটার তৈরির কারখানা হয়ে উঠছে?
শিলিগুড়ি থেকে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া প্রথম ক্রিকেটার ঋদ্ধি। দীর্ঘ দিন ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলার হয়ে খেলেছেন। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টেস্ট দলে অভিষেক। সেই বছরই নভেম্বরে এক দিনের দলে সুযোগ পান। এখনও পর্যন্ত ৪০ টেস্ট খেলেছেন ঋদ্ধি। করেছেন ১২৫২ রান। অন্য দিকে ৯টি এক দিনের ম্যাচে ৪১ রান করছেন তিনি। ২০১৪ সালে শেষ বার এক দিনের ম্যাচ খেললেও টেস্ট দলের সদস্য তিনি। ভারত তথা বিশ্বের সেরা উইকেটরক্ষকদের মধ্যে তাঁকে ধরা হয়। ব্যাটিংয়ের জন্য বর্তমানে ঋষভ পন্থ ম্যানেজমেন্টের পছন্দের প্লেয়ার হলেও শুধু মাত্র উইকেটরক্ষক হিসাবে তাঁকে অনেক উঁচুতে রাখেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্য দিকে ভারতীয় ক্রিকেটে রিচা নবীন। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ভারতের টি২০ দলে সুযোগ পান শিলিগুড়ির এই মেয়ে। দেশের হয়ে প্রথম এক দিনের ম্যাচ খেলেন ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। চলতি বিশ্বকাপে নিয়মিত উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। উইকেটের পিছনে দুরন্ত রিচা ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেন। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৬ বলে অর্ধশতরান করেন তিনি। ভারতীয় মেয়েদের মধ্যে এক দিনের ক্রিকেটে দ্রুততম পঞ্চাশ করার রেকর্ড গড়েন রিচা। তাই মিতালি রাজের দলে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন তিনি।
তা হলে কি সত্যিই ক্রিকেটের দাপটে পিছিয়ে পড়ছে টেবিল টেনিস। কী বলছেন অর্জুন পুরস্কার প্রাপ্ত মান্তু। আনন্দবাজার অনলাইনকে ‘বেঙ্গল স্টেট টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন চ্যাপ্টার ২’-এর যুগ্মসচিব মান্তু বললেন, ‘‘কোভিডের কারণে গত দু’বছর সব প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল। তার একটা প্রভাব তো পড়েছে। যারা অনূর্ধ্ব-১২ স্তরে ছিল তারা অনূর্ধ্ব-১৪ স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু মাঝে তারা কোনও প্রতিযোগিতায় নামতে পারেনি। তবে শিলিগুড়ি থেকে খেলোয়াড় উঠে আসছে না, সেটা কিন্তু ঠিক নয়। অঙ্কিতা সরকার, সাগরিকা মুখোপাধ্যায়, আকাশ নাথ, সৌম্যদীপ সরকার, প্রতীতী পাল, পূজা পাল, মৈনাক দাসরা ভাল খেলছে।’’
তা হলে কেন জাতীয় স্তরে শিলিগুড়ির খেলোয়াড়দের নাম দেখা যায় না? এই প্রশ্নের জবাবে মান্তু জানালেন, ভাল খেলোয়াড়রা তো জেলা বা রাজ্যের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতেই পারে না। তা হলে কী ভাবে শিলিগুড়ির নাম দেখা যাবে। মান্তু বললেন, ‘‘এই সব খেলোয়াড়রা জুনিয়র স্তরে ভাল খেলার পরে বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি পেয়ে যায়। যারা চাকরি পায় না তাদের সঙ্গে চুক্তি করে সংস্থাগুলি। পরবর্তীতে এরা যখন রাজ্য বা জাতীয় স্তরে খেলে তখন কেউ ভারত পেট্রোলিয়াম, কেউ ইন্ডিয়ান অয়েল, কেউ বা রেলের হয়ে খেলে। তাই সেখানে তারা ভাল খেললে সেই সংস্থার নাম হয়। আমাদের হয় না।’’
এমনকি সংস্থার দলে সুযোগ না পেলেও ব্যক্তিগত ভাবে সেই সংস্থার হয়েই তাদের খেলতে হয় বলে জানিয়েছেন মান্তু। তিনি বললেন, ‘‘প্রতিটি দলে পাঁচ জন ছেলে ও পাঁচ জন মেয়ে খেলোয়াড় থাকে। তারা বাদে যারা থাকে তারা ব্যক্তিগত ভাবে প্রতিযোগিতায় নামে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট সংস্থার হয়েই নামতে হয় তাদের। আর আমরা জুনিয়র খেলোয়াড়দের নিয়ে সিনিয়র প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য হই। তা হলে ভাল ফল হবে কী ভাবে? ক্রিকেটারদের সেই সমস্যা নেই। তারা রাজ্যের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে। তাই তারা ভাল খেললে নাম হয়ে সেই রাজ্যের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy