ঐতিহ্যের ইডেন পেতে চলেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। ঐতিহাসিক ইডেনের নামের সঙ্গে এ বার জুড়তে চলেছে স্পনসরদের নাম। শুক্রবার এই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল বঙ্গ ক্রিকেটের বৈঠকে।
এ দিন এই বিষয়ে আলোচনার জন্য ইডেনের ক্লাব হাউসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সংস্থার সমস্ত অনুমোদিত সংস্থাকে। সেখানেই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় প্রস্তাব দেন ইডেনে ‘ব্র্যান্ডিং’-এর প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে নামী বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিকে। তারা আগ্রহী হলে বড় অঙ্কের অর্থ লাভ হবে সিএবি-র। এমনকী ইডেনের নামের সঙ্গে স্পনসরদের ব্র্যান্ড জুড়ে দিলে (নেমিং রাইট) তা থেকেও প্রচুর আয়ের সুযোগ রয়েছে বলে এ দিনের সভায় সৌরভ জানান। সভায় উপস্থিত সদস্যদের তিনি বলেন, একটি সংস্থার সঙ্গে নাকি এই ব্যাপারে তাঁর কথাও হয়েছে। এবং তারা ইডেনের ‘নেমিং রাইট’-এ আগ্রহীও। এর জন্য পাঁচ বছরে কুড়ি কোটি টাকা পর্যন্ত দিতেও নাকি তারা আগ্রহী বলে সভায় জানান সিএবি প্রেসিডেন্ট। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেই নতুন এই চুক্তি করে ফেলতে চান সিএবি প্রেসিডেন্ট।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে এই ব্যাপারে সৌরভ বলেন, ‘‘বাংলার স্পনসরের মতো সিএবি-তে এখন আয়ের আরও রাস্তা খুঁজে বার করা দরকার। সেই জন্যই এই প্রস্তাবগুলো দিয়েছি। সদস্যরা তো দেখলাম সবাই এই রাজি। কয়েক জন ‘নেমিং রাইট’ নিয়ে টেন্ডার ডাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। তা-ই হবে। টেন্ডার ডেকেই এই স্পনসর আনার কাজটা হবে। সেক্ষেত্রে ইডেনের নামের সঙ্গে স্পনসরদের নামও জুড়ে যাবে। যেমন বিশ্বের অনেক বড় বড় স্টেডিয়ামে আছে।’’
টেন্ডার ডেকে ইডেনের নামের স্পনসর বাছার প্রস্তাবটি আসে অন্যতম যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। তাঁকে সমর্থন জানান হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় ও জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুবীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘বোর্ডে যে নিয়ম মেনে স্পনসর বা রাইট হোল্ডার বাছা হয়, এক্ষেত্রেও সেটাই করা উচিত। এত টাকার ব্যাপার যখন, তখন এর মধ্যে স্বচ্ছতা থাকা উচিত।’’
আরও একটা বিষয়েও আপত্তি রয়েছে সিএবি-র বেশ কিছু ঐতিহ্যপ্রিয় সদস্যের। সভায় থাকা হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় ও কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে দু’জনেই বলেন, ‘‘ঐতিহ্যের কথা ভেবে ইডেন গার্ডেন্সের নামের আগে স্পনসরদের নাম বসানোটা মোটেই ঠিক নয়।’’ এই ব্যাপারে সৌরভের বক্তব্য, ‘‘সারা পৃথিবীতে বহু স্টেডিয়াম রয়েছে, যাদের নামের আগে স্পনসরদের নাম রয়েছে। তা হলে ইডেনের নামের আগেই বা কেন স্পনসরের নাম বসানো যাবে না?’’ ঐতিহ্যপ্রিয় ব্রিটিশদের দেশে লন্ডনের কিয়া ওভাল, ডারহামের এমিরেটস ক্রিকেট গ্রাউন্ড, কার্ডিফের সোয়ালেক স্টেডিয়ামের মতো ক্রিকেট মাঠের দৃষ্টান্ত তো কম নয়ই, অন্য খেলাতেও প্রচুর আছে। আর্সেনাল এফসি-র স্টেডিয়ামের নামকরণ যেমন হয়েছে এমিরেটস স্টেডিয়াম, সেখানে জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখের নিজস্ব স্টেডিয়ামের নাম তাদের স্পনসর আলিয়াঞ্জের নামে। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির স্টেডিয়ামও তাদের স্পনসর এতিহাদ দ্বারা নামাঙ্কিত। জোহানেসবার্গের বিখ্যাত রাগবি স্টেডিয়াম এলিস পার্কের নাম এখন কোকা কোলা স্টেডিয়াম। ‘নেমিং রাইট হোল্ডার’-দের ব্র্যান্ড আগে বসাটাই যেখানে চলতি প্রথা, সেখানে ইডেনের নামের আগেই বা কেন স্পনসরদের নাম বসানো যাবে না, তার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না সৌরভ।
আরও একটা প্রশ্ন তুলছে সিএবি-র একাংশ। ময়দানের আসল ‘মালিক’ যারা, সেই সেনাবাহিনীর অনুমতি পাওয়া যাবে কি না। এই প্রসঙ্গে সৌরভ রাতে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘সিএবি ও আর্মির মধ্যে যে চুক্তি রয়েছে, তাতে এই নিয়ে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে, আইপিএলে তো এটা প্রতি বছরই হয়। তা সত্ত্বেও যদি ওঁরা আপত্তি করেন, তা হলে আলোচনায় বসে ঠিক করে নেব। আশা করি অসুবিধা হবে না।’’ ইডেনের জায়ান্ট স্ক্রিন ও নতুন আনা স্বচ্ছ আউটফিল্ড কভারের স্পনসরও ঠিক হয়ে গিয়েছে বলে এ দিনের সভায় জানান সৌরভ।
ইডেনকে আধুনিকতায় মুড়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রাক্তনদের সম্মান জানিয়ে চারটি স্ট্যান্ড বাংলার চার প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া, বিশ্বনাথ দত্ত,
অমর ঘোষ ও জে সি মুখোপাধ্যায়ের নামে করার প্রস্তাবও উঠে আসে এ দিনের সভায়। উঠে আসে ইডেনের ১৭টি প্রবেশপথ বাংলার সেরা ১৭ ক্রিকেটারের নামে করার প্রস্তাবও।
কিন্তু এই প্রস্তাবগুলো আদৌ নিয়ম মেনে হল কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, শুধুমাত্র আলোচনার জন্যই সবাইকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে সভায় উপস্থিত সদস্যরা জানান। যা না কোনও সাধারণ সভা, না কোনও জরুরি সভা। তা হলে এই সভায় উঠে আসা প্রস্তাবগুলি কোথায় সরকারিভাবে গৃহিত হবে, তা-ই কেউ জানেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy