ঘাতক অ্যাবট। ধ্বংস অস্ট্রেলিয়া। ছবি: রয়টার্স
শনিবার এক অস্ট্রেলীয় তরুণ তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ করতে ঢুকেছিলেন। ঠিক সেই সময়ে হোবার্টে ক্রিজে নামছেন ডেভিড ওয়ার্নার এবং জো বার্নস। লাঞ্চ সেরে দম্পতি বেরোতে বেরোতে অস্ট্রেলিয়া ৮৫ অল আউট।
মঙ্গলবার সকালে মিটিংয়ে ঢোকার আগে প্রাক্তন দুই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ম্যাচের স্কোর দেখে খানিকটা আশ্বস্ত হয়েছিলেন। তখনও তাঁদের টিমের হাতে আটটা উইকেট। মিটিং থেকে বেরনোর পর? টেস্ট ম্যাচ শেষ।
দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস এবং আশি রানে হার এবং অতিথিদের কাছে সিরিজ খোয়ানোর পর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মিডিয়ায় এই একজোড়া টিপ্পনি ছড়িয়ে পড়েছে। আপাত রসিকতা হলেও নেপথ্যের যন্ত্রণা, লজ্জা, ক্ষোভ এবং বিভ্রান্তি গোপন করার বিশেষ চেষ্টা বা ইচ্ছে তার মধ্যে নেই।
শ্রীলঙ্কায় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন টেস্টের সিরিজ হারের ব্যাখ্যায় তবু ব্যাগি গ্রিন সমর্থকেরা নিজেদের বোঝাতে পেরেছিলেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশে তরুণ এই টিমের ব্যর্থতা অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু বছর শেষে নিজেদের মাঠ যে এমন লজ্জা উপহার দিচ্ছে, তার ব্যাখ্যা কী হয়?
ময়নাতদন্তে দুটো শব্দ উঠে আসছে— ব্যাটিং ক্যানসার।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্টে ৮৩ অল আউট। তার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৮৬ অল আউট, ৮৫ অল আউট এবং সবচেয়ে টাটকা, হোবার্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩২ রানে ৮ উইকেট। টানা ব্যাটিং বিভীষিকায় বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়া। কেউ বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং দেশে ক্রিকেটের মূল্য কমিয়ে দিচ্ছে! কারও কারও মত, অস্ট্রেলিয়া এখন ক্রিকেটবিশ্বের নতুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ— অপ্রতিরোধ্য মহাশক্তি থেকে যারা নেমে এসেছে গর্ব গুঁড়িয়ে দেওয়া টানা পরাজয়ের পৃথিবীতে।
বেলেরিভ ওভালে এ দিনের অস্ট্রেলীয় আত্মসমর্পণের সঙ্গে সাম্প্রতিক অতীতের বিশেষ তফাত ছিল না। শট বাছাইয়ের ভুলে আউট হয়ে যান উসমান খোয়াজা (৬৪)। শেষ হয়ে যায় স্টিভ স্মিথের (৩১) সঙ্গে তাঁর পাল্টা লড়াইয়ের পার্টনারশিপ। চাপের গন্ধমাদন নিয়ে ক্রিজে নেমেছিলেন অ্যাডাম ভোজেস এবং তিনি আউট হওয়ার পর টেস্টের আয়ুও আর বিশেষ দীর্ঘায়িত হয়নি।
ভার্নন ফিল্যান্ডার, কাইল অ্যাবট এবং কাগিসো রাবাদার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকান সিম এবং সুইং আক্রমণের যথেষ্ট প্রশংসা প্রাপ্য। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এর আগে ভয়ঙ্কর সব পেস আক্রমণ সামলেছে শুধু নয়, খুব ভাল ভাবে সামলেছে। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেস ব্যাটারি তো আছেই। পরে ওয়াসিম আক্রম-ওয়াকার ইউনিস, অ্যালান ডোনাল্ড-শন পোলকদের সামনেও এত শিরদাঁড়াহীন দেখায়নি অস্ট্রেলীয় ব্যাটিংকে।
ম্যাচের পরে স্টিভ স্মিথের মুখেও সেই প্রসঙ্গ। ‘‘আমি এমন প্লেয়ার চাই যারা লড়াইয়ে নামতে মুখিয়ে রয়েছে। আমি এমন প্লেয়ার চাই যারা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলে গর্বিত, যারা ব্যাগি গ্রিনের মালিক হতে পেরে গর্বিত,’’ বলেছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। সঙ্গে এটাও বলেছেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা যেটা করছি, সেটা যথেষ্ট নয়। আর সত্যি বলতে কী, এই কথাটা বলে বলে আমি নিজেও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। এই নিয়ে পরপর পাঁচটা টেস্টে এ রকম হল। অস্ট্রেলিয়ার যে কোনও ক্রিকেট টিমের কাছে যেটা লজ্জার।’’
এতটাই লজ্জার যে, প্রথম এগারো জনের মধ্যে চার জন ছাড়া বাকিরা আদৌ আর পরের টেস্টে খেলবেন কি না, বলতে পারছেন না কোচ ডারেন লেম্যান। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার হাই পারফরম্যান্স চিফ প্যাট হাওয়ার্ড জাতীয় কোচকে বলে দিয়েছেন, নিজেকে নতুন করে তৈরি করতে। বেলেরিভ ওভালের ড্রেসিংরুমে বোর্ড সিইও জেমস সাদারল্যান্ড, প্যাট, মার্ক টেলর, শেন ওয়ার্ন, ইয়ান হিলি, মাইকেল স্লেটার এবং টম মুডির সঙ্গে লেম্যান ও তাঁর টিমের শীর্ষ বৈঠকের পরে অস্ট্রেলীয় কোচ বলেছেন, অ্যাডিলেডে তৃতীয় টেস্টের টিমে আপাতত চার জনের জায়গা পাকা— স্মিথ, ওয়ার্নার, মিচেল স্টার্ক এবং জশ হ্যাজলউড।
যা পরিস্থিতি, তাতে ‘ব্যাগি গ্রিন’ শব্দদ্বয়ের অর্থ আগে যা ছিল, এখন প্রায় তার উল্টো। এত দিন ক্রিকেট বিশ্ব দেখে এসেছে ব্যাগি গ্রিন মানে ঔদ্ধত্য, ব্যাগি গ্রিন মানে আগ্রাসন, ব্যাগি গ্রিন মানে জয়। আর এখন? এখন ওই দুটো শব্দের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে লজ্জা, বিপর্যয়, অসহায় আত্মসমর্পণ। এত দিন যে দুটো শব্দ একটা দেশের ক্রিকেট-দর্শনের জ্বলন্ত প্রতীক ছিল, এখন সেই দুটো শব্দ স্রেফ দুটো শব্দই!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া
৮৫ ও ১৬১ (উসমান খোয়াজা ৬৪, ডেভিড ওয়ার্নার ৪৫,
স্টিভ স্মিথ ৩১, কাইল অ্যাবট ৬-৭৭, কাগিসো রাবাদা ৪-৩৪)
দক্ষিণ আফ্রিকা
৩২৬ (কুইন্টন ডি’কক ১০৪)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy