সুখী: বাবা-মা হতে চলেছেন ঘোষণা করার পরে শুভেচ্ছায় ভাসছেন দেশের তারকা কুস্তিগির জুটি গীতা ফোগত ও স্বামী পবন। ফাইল চিত্র
আন্তর্জাতিক কুস্তিতে ভারতীয় মেয়েদের সাফল্যের পথ দেখিয়েছেন তিনি। মহিলা কুস্তিগির হিসেবে কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম সোনা জয়, অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন, তাঁর একের পর এক সাফল্য নিয়ে তৈরি বলিউড তারকা আমির খানের সিনেমা ‘দঙ্গল’ ঝড় তুলেছিল দেশের ক্রীড়ামহলে।
তিনি— গীতা ফোগত।
চলতি মাসের গোড়ার দিকে তিনি মা হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভক্তদের শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসে গিয়েছেন তার পরে। মাতৃত্বকালীন অবসরের জন্য তাই এখন কুস্তির ম্যাটে ফিরতে পারছেন না। তবে নজর রয়েছে দেশের কুস্তি নিয়ে যাবতীয় খুটিনাটিতে। সদ্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জজয়ী বিনেশ ফোগত যে কতটা পরিশ্রমের ফল পেলেন, জানেন। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে পদক জয়ের জন্য কতটা উদগ্রীব বিনেশ, সেটাও অজানা নয়। সব কিছুই মঙ্গলবার নয়াদিল্লি থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে জানালেন গীতা।
মাতৃত্বকালীন অবসর কেমন উপভোগ করছেন? গীতা বলে ওঠেন, ‘‘ছোট্ট একটা শরীর নিজের মধ্যে আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে। এটা অন্য রকম একটা সুখানুভূতি। ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।’’ বাবা মহাবীর ফোগতের কোচিংয়ে তাঁরা ছয় বোন গীতা, ববিতা, প্রিয়াঙ্কা, রীতু, বিনেশ এবং সঙ্গীতা দেশের তারকা কুস্তিগির হয়ে উঠেছেন। যে সাফল্যের কাহিনি দেশের মেয়েদের কুস্তিতে আসার ক্ষেত্রে বড় প্রেরণা। গীতা আগেও বলেছেন, বাবার কড়া কোচিংয়ের জন্য ছোটবেলায় কত কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে রোজ। প্রার্থনা করতেন, বাবার এই প্রত্যেক দিনের রুটিন থেকে যেন মুক্তি পান। ছোটবেলার সেই সব দিনের কথা জানতে চাইলে গীতা বলেন, ‘‘খুব কঠিন গিয়েছে সেই সময়। কড়া অনুশীলন করতে হত। তবে এটাও কিন্তু ঠিক, বাবা ওই সময় আমাদের শক্তপোক্ত তৈরি না করলে আমরা এত দূর আসতে পারতাম না।’’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বিনেশের বাউট দেখেছেন? প্রশ্ন করতেই উচ্ছ্বাস গীতার গলায়। বলে দিলেন, ‘‘বিনেশ খুব খেটেছে এই জায়গায় আসতে। এক সঙ্গে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ আর প্রথম মেয়ে কুস্তিগির হিসেবে টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করার মতো কৃতিত্ব দেখানো সোজা নয়। এই কঠিন লক্ষ্যটাও কিন্তু ও পূরণ করে দেখাল।’’ টোকিয়ো অলিম্পিক্সে বিনেশের পদক জয়ের ব্যাপারেও গীতা আশাবাদী। বলেন, ‘‘রিয়ো অলিম্পিক্সে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে চোট লেগে গিয়েছিল বিনেশের। ওই হাঁটুর চোটটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই পদকের স্বপ্ন পূরণ হয়নি ওর। তবে আশা করছি এ বার চোট-আঘাত সামলে ও পুরো ফিট থাকবে। আমি নিশ্চিত, বিনেশ যদি ওর ক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে পারে, টোকিয়োতে পদক জেতার সম্ভাবনা আছে ওর।’’
এক সময় এ দেশে কুস্তি মানেই একাধিপত্য ছিল ছেলেদের, সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছেন গীতারাই। এখন কুস্তিতে যে ভাবে দেশ এগিয়ে চলেছে তাতে ভবিষ্যতে অলিম্পিক্সে আরও সাফল্য পাবে ভারত, মনে করছেন আয়োডিনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ‘মিসিং আই’ প্রচারের সঙ্গে যুক্ত গীতা। বলছিলেন, ‘‘খুব ভাল লাগে দেখলে যে মেয়েরা শুধু কুস্তিই নয়, বিভিন্ন খেলাধুলোয় এগিয়ে আসছে। সরকারও অনেক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বিদেশে অনুশীলন করার সুযোগ বাড়ছে। সব মিলিয়ে আমরা অন্য খেলায় এবং কুস্তিতে যে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি তাতে দেশের খেলাধুলোর ভবিষ্যতের ছবিটা খুব উজ্জ্বল।’’
বড় হলে সন্তানকে কি কুস্তিগির হওয়ার প্রশিক্ষণ দেবেন বাবার মতো? প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেলেন গীতা। বলে ওঠেন, ‘‘কুস্তিগির হয়ে ওঠা এত সহজ নয়। অনেক সাধনা, পরিশ্রম করতে হয়। সব বাবা-মা চায় সন্তানকে মনের মতো গড়ে তুলতে। সন্তানের কোন দিকে আগ্রহ সেটাও দেখতে হবে। দেখা যাক কী হয়।’’ কুস্তির ম্যাট থেকে দূরে থাকলেও গীতা কিন্তু প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনাও ছকে রেখেছেন। বললেন, ‘‘এই অবস্থায় চিকিৎসক আমায় যতটা শারীরিক কসরৎ করার অনুমতি দিয়েছেন, সেটাই মেনে চলছি। অনেক সময় আবার মানছিও না। কারণ, আমার মনে হয় যার শরীর, সেই সব চেয়ে ভাল জানে কখন কী প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy