গুরু-শিষ্য: রাহুল স্যরের নির্দেশ মতো স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে চান শুভমন।
ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন প্রতিভা মনে করা হচ্ছে তাঁকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সীমিত ওভারের দল থেকে যাঁর বাদ পড়া নিয়ে সরব হয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সুন্দর ব্যাটিং এবং সুদর্শন মুখে মন জয় করে নেওয়া শুভমন গিলের মুখে রাহুল দ্রাবিড়ের কথা।
সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শুভমন বলছেন, ‘‘ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলার সময় থেকে রাহুল স্যর আমার কোচ। তার পর ভারতীয় এ দলেও ওঁকে পেয়েছি। রাহুল স্যরের একটা উপদেশ আমি সব সময় মাথায় রাখি।’’ কী সেই উপদেশ? কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্রিকেটারের জবাব, ‘‘উনি বলেছেন, কখনও নিজের স্বাভাবিক খেলা পাল্টাতে যাবে না। মনে রাখবে, সেটাই তোমাকে সাফল্য এনে দিয়েছে।’’
চলতি মাসেই সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণিতে ডাবল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন শুভমন। তিনি ভেঙেছেন গৌতম গম্ভীরের রেকর্ড। যা নিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে এই ডাবল সেঞ্চুরিকে লাল বলে খেলা আমার অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবে বেছে নেব। প্রতিপক্ষ, পিচ এবং ম্যাচের পরিস্থিতি মাথায় রেখে এটা বলছি।’’ ওয়েস্ট ইন্ডিজে বেসরকারি এক দিনের ম্যাচে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন তিনি। মোট করেছিলেন ২১৮ রান। তার পরেও ভারতের ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পাননি। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। শুভমন নিজেও হতাশ হয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন।
কিন্তু কী হবে যদি নিজের স্বাভাবিক খেলা সাফল্য না আনতে পারে? শুভমনের জবাব, ‘‘রাহুল স্যর আমাকে বলেছেন, নিজের খেলা পাল্টালে স্বাভাবিকত্ব হারাতে পারি। তখন সাফল্য না-ও আসতে পারে। তার বদলে উনি মানসিক প্রস্তুতির উপর জোর দিতে বলেছেন।’’ এখানেই শেষ নয়। দ্রাবিড় তাঁকে আরও উপদেশ দিয়েছেন, ‘‘যদি টেকনিকে শক্তিশালী হতে চাও তা হলে নিজেদের প্রাথমিক খেলায় বিঘ্ন না ঘটিয়ে পরিবর্তন আনো।’’
অনেকেই তাঁকে বলছেন, নতুন বিরাট কোহালি। বিশেষ করে সামনের পায়ে কভার ড্রাইভ মারার সময়ে দু’জনের মধ্যে দারুণ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। স্বয়ং কোহালি তাঁকে নেটে দেখে বলেছিলেন, শুভমনের বয়সে এর দশ শতাংশ প্রতিভাও তাঁর ছিল না। শুভমন বলছেন, কভার ড্রাইভ তাঁর স্বভাবসিদ্ধ শট। ‘‘স্পিনারদের বিরুদ্ধে আমি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে পছন্দ করি। ছোটবেলা থেকে স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে অনেক প্র্যাক্টিস করেছি। টার্নিং ট্র্যাকে খেলতে খেলতেই এই শটটা আমি রপ্ত করেছি,’’ ব্যাখ্যা তাঁর। স্পিনারদের বিরুদ্ধে স্টেপ আউট করে মারতেও পছন্দ করেন তিনি। লাল ও সাদা দু’ধরনের বলেই প্রচুর প্র্যাক্টিস করেন এবং তাতে ম্যাচ অনুযায়ী প্রস্তুতিই প্রাধান্য পায়। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দল আসছে। তাদের বেশি পেসার রয়েছে। শুভমন তাই অফস্টাম্পের বাইরে বল ছাড়ার অভ্যেস বেশি করে রপ্ত করার চেষ্টা করছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে ‘এ’ দলের হয়ে সফরে রক্ষণাত্মক মনোভাব মাথাতেই আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন শুভমন। বলেছেন, ‘‘যখন দ্রুত কয়েকটা উইকেট পড়েছে, তখনও ম্যাচ বাঁচানোর কথা আমার মাথায় আসেনি। বরং ভেবেছি, কী ভাবে খেলার রং আবার পাল্টে দিতে পারব।’’ ডাবল সেঞ্চুরি করার সময় প্রথমে লক্ষ্য নিয়েছিলেন তৃতীয় দিনের বাকি থাকা অংশ নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেবেন। পরের দিন পিচে বোলারদের জন্য ভাল রকম সহায়তা ছিল। তাই সতর্কতা নিয়ে শুরু করতে হয়েছিল। তার পর টার্গেট নেন, ৩০ ওভারে ১২০ রান করবেন। কারণ, শেষের দিকে প্রতিপক্ষ বোলাররা ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। এ ভাবেই চিন্তাশীল ব্যাটসম্যান হয়ে উঠছেন তিনি। ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে ‘এ’ দলের সফর আমাকে পরিণত করে তুলেছে। আমি এখন আরও বড় ইনিংস খেলার জন্য মুখিয়ে রয়েছি,’’ বলছেন শুভমন। যিনি পর-পর দু’বার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সেরা জুনিয়র ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন।
ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার সময় কী করেন? ডান হাতি আকর্ষণীয় ব্যাটসম্যানের জবাব, ‘‘সতীর্থ ঈশান কিসানের সঙ্গে স্কোয়াশ খেলি। খেলাটা আমি পছন্দ করি আর কার্ডিয়োর জন্যও ভাল। আর আমরা দু’জনেই মোটামুটি এক স্তরের স্কোয়াশ খেলোয়াড়। ও যেমন পারেন না, আমিও পারি না।’’ আইপিএলের যুগে সামান্য কিছু করতে পারলেই মোটা টাকার হাতছানি। তারকার পৃথিবীতে ঢুকে পড়া যায় টিনএজ বয়সেই। কী ভাবে এক জন তরুণ প্রতিভা নিজেকে ঠিক রাখবেন? শুভমন ভাগ্যবান, তারকা জীবন সামলানোর টোটকা পেয়েছেন যুবরাজ সিংহের কাছ থেকে। যুবির মতোই পঞ্জাবের ছেলে শুভমন। বলছেন, ‘‘যুবি পাজি আমাকে তারকা জীবন সামলানো নিয়ে অনেক উপদেশ দিয়েছে। গুরকিরাত সিংহ মানের (পঞ্জাবের আর এক ক্রিকেটার) সঙ্গে আমি অনেক কথা বলি। এবং, অবশ্যই যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাবার উপর নির্ভর করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy