নজরে: রোহিত (বাম পাশে), গিলকে দেখতে চান নির্বাচকেরা। ফাইল চিত্র
সব কিছু ঠিকঠাক চললে, ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আসন্ন টেস্ট সিরিজে এক জন নয়, এক জোড়া নতুন ওপেনার পেতে পারেন বিরাট কোহালিরা। এক জন অবশ্যই রোহিত শর্মা। তাঁকে ওপেন করানোর ভাবনা যে চলছে, তা সবার প্রথমে আনন্দবাজারে লেখা হয়েছে। মঙ্গলবার সেই খবরকে আরও নিশ্চয়তার দিকে নিয়ে গিয়ে নির্বাচক প্রধান এম এস কে প্রসাদ বিবৃতি দিয়েছেন, রোহিতকে তাঁরা ওপেনার হিসেবে ভাবতেই পারেন।
আজ, বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট দল বাছতে বসছে। সেখানে ওপেনার রোহিত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং যা ইঙ্গিত, টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে মিডল-অর্ডার থেকে শুরুতে তুলে আনাটা শুধুই সময়ের ব্যাপার। বিশাখাপত্তনমে প্রথম টেস্টেই হয়তো মায়াঙ্ক আগরওয়ালের সঙ্গে ওপেন করতে দেখা যাবে রোহিতকে। তার জন্য প্রস্তুতি ম্যাচে বোর্ড প্রেসিডেন্টস একাদশের হয়ে তাঁকে খেলিয়ে তৈরি হওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথাও তুলছেন কেউ কেউ।
দ্বিতীয় জন শুভমন গিল। ভারতীয় ওপেনারদের সাম্প্রতিক ব্যর্থতা তাঁকেও প্রবল ভাবে আলোচনায় এনে দিতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে দু’টি টেস্টে কে এল রাহুল তো ব্যর্থ হয়েইছেন, আহামরি কিছু করতে পারেননি মায়াঙ্কও। এখনই তাঁকে সরানোর কথা ভাবা না হলেও বিকল্প তৃতীয় ওপেনার হাতে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। প্রশ্ন উঠছে, মাত্র দু’জন ওপেনার রাখলে টেস্ট শুরুর সকালে যদি এক জনের চোট লেগে যায়, তখন কী হবে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, মায়াঙ্ক এবং রোহিত যদি দুই ওপেনার হন, তা হলে তৃতীয় জন কে?
যা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, দল পরিচালন সমিতি এবং নির্বাচকমণ্ডলী দু’পক্ষেরই কে এল রাহুল নিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আসন্ন টেস্ট সিরিজে বাদই পড়তে পারেন তিনি। আপাতত রাহুলকে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে এসে প্রচুর রান করে ফের মন জিততে হবে। তবেই তিনি দলে ফিরতে পারবেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময়েও তৃতীয় ওপেনারের দৌড়ে ছিলেন প্রিয়ঙ্ক পঞ্চাল এবং বাংলার অভিমন্যু ঈশ্বরন। দু’জনের উপরেই নজর থাকছে, তবে এখনই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আসন্ন সিরিজে তাঁদের জায়গা হওয়া কঠিন। প্রিয়ঙ্ক, অভিমন্যু এবং শুভমনের মধ্যে আসন্ন সিরিজের জন্য অন্তত নিঃসন্দেহে এগিয়ে শুভমন।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের সুদর্শন ব্যাটসম্যানের পক্ষে বেশ কয়েকটি যুক্তি থাকছে। একে তো কোহালিদের দল পরিচালন সমিতি শুভমনকে নিয়ে উৎসাহিত। নিউজ়িল্যান্ডে তাঁকে প্রথম দেখে ভারত অধিনায়ক মন্তব্য করেছিলেন, শুভমনের বয়সে তাঁর দশ শতাংশ প্রতিভাও ছিল না তাঁর। শোনা যায়, হেড কোচ রবি শাস্ত্রীও প্রভাবিত তাঁর ব্যাটিং এবং ধারাবাহিকতা দেখে। শুভমনের সব চেয়ে বড় সুবিধা, তিনি প্রয়োজনে ওপেন থেকে তিন নম্বর বা মিডল-অর্ডারে আরও নীচের দিকে, যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে পারেন।
তিরুঅনন্তপুরমে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে চার দিনের বেসরকারি টেস্টে মঙ্গলবারই ১৫৩ বলে ৯০ রান করেছেন শুভমন। উপস্থিত ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের প্রভাবিত করার মতো তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এই ইনিংস তিনি খেলেছেন ওপেনার হিসেবে। দল নির্বাচনী বৈঠকের ঠিক আগে খেলা এই সুন্দর ইনিংস শুভমনের দাবি আরও জোরালো করে তুলেছে।
রোহিতের মতো শুভমনও বুঝতে পারছেন, টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয় দলের মিডল-অর্ডারে এখন ট্র্যাফিক জ্যাম লেগে রয়েছে। তাই জায়গা করতে গেলে ওপেনার হওয়ার চ্যালেঞ্জ নেওয়া ছাড়া গতি নেই। শুভমন ভারতীয় ক্রিকেটে এই মুহূর্তে অন্যতম সেরা প্রতিভা অবশ্যই। রাহুল দ্রাবিড়ের কোচিংয়ে বেড়ে উঠেছেন। অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম স্থপতি ছিলেন। পঞ্জাবের কৃষিবিদের ছেলে আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েও নজর কেড়েছেন। সেখানে আবার নীচের দিকে ব্যাটিং করেছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে প্রচুর রান করে এসেছেন। তার মধ্যে তারুবায় তৃতীয় বেসরকারি টেস্টে ২০৪ নট আউটও ছিল। যদিও সেই রানও তিনি করেছিলেন মিডল-অর্ডারে খেলে।
আশ্চর্যের হচ্ছে, প্রচুর রান করার পরেও ভারতীয় সিনিয়র দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে বাদ পড়ে যান শুভমন। সকলে আশা করেছিলেন, অন্তত সীমিত ওভারের দলে তাঁর নাম থাকবে। তরুণ মুখ হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সীমিত ওভারের দলে সুযোগ পেলেন শ্রেয়স আইয়ার এবং ভাল খেলে দিয়ে তিনি আপাতত বিতর্কিত চার নম্বর জায়গাটি ছিনিয়ে নিয়েছেন। ওদিকে, শাস্ত্রী-সহ দল পরিচালন সমিতির সদস্যরা নিশ্চিত, ভারতীয় দল এই মুহূর্তে প্রজন্ম পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পরের দু’বছরে দু’টি কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ রয়েছে। তাই জাতীয় দলের হেড কোচের মন্ত্র এখন, যত পারো তরুণ রক্ত আনো। নতুন মুখের তালিকায় ঋষভ পন্থ, শ্রেয়স আইয়ারদের সঙ্গে শুভমনও খুব উল্লেখোগ্য নাম। টেস্টের দরজা দিয়ে ঢুকে এর পর সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও তাঁর নাম গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হবে, সন্দেহ নেই।
বরং ঋষভ পন্থ আসন্ন টেস্ট সিরিজে কিছুটা পিছিয়ে থেকে শুরু করছেন। দেশের মাঠে স্পিন-বন্ধু এবং অসমান বাউন্সের পিচের কথা মাথায় রেখে উইকেটকিপার হিসেবে প্রথম পছন্দ হতে যাচ্ছেন ঋদ্ধিমান সাহা। এ ব্যাপারে অধিনায়ক কোহালির কিপিংয়ের উপরে বেশি নজর এবং ঋদ্ধির কিপিং উৎকর্ষের প্রতি আস্থা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তবে ঋদ্ধি এবং ঋষভ দু’জনকেই রেখে পনেরো জনের দল ঘোষণা করা হতে পারে। শোনা যাচ্ছে, দল পরিচালন সমিতির ভোট থাকছে বাংলার উইকেটকিপারের দিকেই। তার কারণ, সকলেই বুঝতে পারছেন, দেশের মাঠে অশ্বিন-জাডেজা-কুলদীপদের কিপিং করার জন্য উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত লাগবে। রক অ্যান্ড রোল দিয়ে হবে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy