পঞ্জাবের মানচিত্রে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিন্দু একটা গ্রাম। জনসংখ্যা মোটে তিন হাজার। গ্রামের বাকি বাসিন্দাদের মতো বলবীর সিংহের জীবিকা বলতে আটার কলে চাকরি, সঙ্গে গোপালন।
সিংহ পরিবারের গল্পের শুরুটা খুব সাধারণ। কিন্তু বাকিটা শুনলে মনে হবে বাস্তব নয়, রূপকথা।
পাগড়ি-ভাঙড়া-লস্সির যে গ্রামে পুরুষদের গড় উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুটের আশেপাশে, বলবীর সিংহ সেখানে বাকিদের চেয়ে দু’ফুটেরও বেশি লম্বা! অন্য একটা ব্যাপারেও অবশ্য বাকি গ্রামবাসীদের কয়েকশো ফুট পিছনে ফেলে দিয়েছেন বলবীর। আজ, শুক্রবার থেকে।
বলবীর-পুত্র সতনম সিংহ ভামরা যে আজ এনবিএ ড্রাফটে নাম লিখিয়ে ফেললেন। যে নজির দেশে এই প্রথম, এবং যা অভিভূত করে দিয়েছে দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের। অমিতাভ বচ্চন থেকে সচিন তেন্ডুলকর, জ্বালা গাট্টা থেকে রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর, গোটা দেশ মজে উনিশের তরুণে। সাত ফুট দুইয়ের যে তরুণকে এ দিন সই করিয়ে ফেলল এনবিএর অন্যতম বিখ্যাত টিম ডালাস ম্যাভেরিক্স। এবং সরকারি ঘোষণার পরেও যিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না, জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা এখন বাস্তব।
‘‘মনেই হচ্ছে না ব্যাপারটা সত্যি সত্যিই ঘটেছে। ড্রাফটের ফল নিয়ে এত বেশি চিন্তায় ছিলাম যে ঘুম তো দূরের কথা, খেতে পর্যন্ত পারিনি,’’ ফ্লোরিডা থেকে কনফারেন্স কলে এ দেশের সাংবাদিকদের বলেন সতনম। ২০১০-এর সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা লুধিয়ানার তরুণ। আইএমজি-রিল্যায়ান্স স্কলারশিপের সৌজন্যে সেখানেই ট্রেনিং করছেন।
যার জন্য তিনি ধন্যবাদ দিতে পারেন বাবার বন্ধু রাজিন্দর সিংহকে। ন’বছরের সতনমকে দেখে রাজিন্দরের মনে হয়েছিল, ছেলেটার মধ্যে প্রতিভা আছে। কারণ ওই বয়সেই সতনমের হাইট ছয় ছুঁইছুঁই! বাবার বন্ধুর হাত ধরেই বাস্কেটবল প্র্যাকটিসে যাওয়া শুরু। ‘‘মায়ের প্রার্থনা আর আত্মত্যাগ কোনও দিন ভুলতে পারব না। মা না থাকলে আজ আমি এখানে পৌঁছতে পারতাম না। আমার বোনও গুরুদ্বারে রোজ আমার জন্য প্রার্থনা করেছে। আমার প্রথম কোচ ড. সুব্রহ্মণকেও ধন্যবাদ দেব। উনি সব সময় আমাকে স্বপ্নপূরণের মোটিভেশন দিয়েছেন,’’ বলছেন সতনম।
এনবিএ সেকেন্ড লিস্টে নাম ওঠা সতনম অবশ্য এখনই ডালাসের টিমে খেলবেন বলে মনে করা হচ্ছে না। ডেভেলপমেন্ট লিগে খেলে তার পর প্রথম টিমে সুযোগ দেওয়া হবে। তবে ডালাস কর্তারা মনে করেন, সতনমের সাফল্য তাঁর দেশে বাস্কেটবলকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সতনম নিজেও মনে করেন, তাঁকে বা সিম ভুল্লারকে দেখে ক্রিকেট-পাগল দেশের তরুণ প্রজন্ম ব্যাট-প্যাড ছেড়ে হাতে বাস্কেটবল তুলে নেবে।
এনবিএ-তে খেলা প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভুত হিসেবে ভুল্লার প্রচারের আলোয় এসেছিলেন কয়েক মাস আগে। সেই ভুল্লারের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়েছে সতনমের। ইংরেজিতে এখনও খুব একটা সড়গড় নন পঞ্জাবি তরুণ, তাই ভুল্লারের সঙ্গে মাতৃভাষায় প্রাণ খুলে কথা বলতে পারাটা তাঁর কাছে আলাদা গুরুত্বের। ‘‘ইংরেজিটা আগের চেয়ে এখন বেশি ভাল বলতে বা বুঝতে পারি। কেউ খুব তাড়াতাড়ি কথা বললে একটু অসুবিধে হয়। কিন্তু সেটা বাদ দিলে ভাষাটা এখন কোনও সমস্যা নয়,’’ যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন সতনম।
বলাটাই স্বাভাবিক। উনিশেই যিনি সাফল্যের ভাষায় এত স্বচ্ছন্দ, তাঁর কাছে ইংরেজিটা কোনও বাধা নাকি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy