Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sagarmoy Sensharma

বেঁচে ফেরার স্বস্তি বোঝাতে পারব না, বললেন করোনাকে হারানো রঞ্জি জয়ী সাগরময়

বল হাতে অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। বাইশ গজে খেলেছেন অনেক হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ। কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিনগুলো ভুলতে পারবেন না কখনও।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৪৯ উইকেট নিয়েছেন সাগরময় সেনশর্মা। —ফাইল চিত্র।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৪৯ উইকেট নিয়েছেন সাগরময় সেনশর্মা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ১৫:৫৭
Share: Save:

রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দও তুচ্ছ! করোনাকে হারিয়ে বাড়ি ফিরে এমনই মনে হচ্ছে সাগরময় সেনশর্মার

প্রথমে স্ত্রী, তার পর নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বাংলার রঞ্জিজয়ী এই ক্রিকেটার। ২৭ মে গিয়েছিলেন রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারে। কিন্তু রাত থেকে শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকায় পরের দিন সকালেই ভর্তি করা হয় বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে। আনন্দবাজার ডিজিটালকে সাগরময় বললেন, “নিঃশ্বাসের কষ্ট হচ্ছিল। ঘুমোতে পারছিলাম না। উঠছি, টয়লেট যাচ্ছি। অক্সিজেন লাগানো ছিল। পাশে থাকা নার্স আমাকে দেখে ডাক্তারকে ফোন করেছিলেন। ডাক্তার এসে বলেছিলেন, পরিস্থিতি সুবিধার নয়। হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।”

হাসপাতালে এসেই আইসিইউতে। সেখানে চার দিন থাকতে হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার কথা বললেন, “শ্বাসকষ্ট বাড়ছিল বলে আইসিইউতে ছিলাম। জ্ঞান থাকলেও কন্ডিশন ভাল ছিল না। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। একটু জোরে শ্বাস নিলেই মনে হচ্ছিল আটকে যাচ্ছে। সকাল-বিকেল মিলিয়ে ১২-১৩ ইঞ্জেকশন, তার মধ্যে পেটে নাভির চারপাশে বেশ কয়েকটা দিত। লাগত খুব। পেটে মোট নিয়েছি ৪৫টা ইঞ্জেকশন। সব মিলিয়ে নিয়েছি ১২০টার মতো ইঞ্জেকশন। দু’বেলা মুঠো করে ওষুধও ছিল।”

আরও পড়ুন: নেতা সচিনের সমস্যা কোথায়? মদন লাল বললেন...​

আরও পড়ুন: পেনাল্টি নিতেই পারলেন না, ফাইনালে হতাশা সঙ্গী রোনাল্ডোর​

নতুন বল হাতে দৌড়ে যাওয়া বাঁ-হাতি পেসার নয়, নিজেকে মনে হয়েছিল অসহায় ব্যাটসম্যান। যে কি না করোনায় উইকেট না দেওয়ার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর। ভয়, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ সঙ্গী হওয়ার কথা, হয়েওছিল। কিন্তু, লড়াকু মানসিকতা নিয়ে মনোবল টানটান রেখেছিলেন। বললেন, “পরিস্থিতি যাই থাক না কেন, আমার তো কিছু করার ছিল না। সহ্য করে, মনের জোর ধরে রাখতেই হত। ছোট থেকেই আমি বিশেষ ভয় পাই না। টেনশন করি না। কারণ, টেনশন করলে ক্ষতিই হয়, লাভ হয় না। আর টেনশন করে কিছু করতেও তো পারতাম না। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ঝড়-ঝাপ্টা সামলেছি। অনেক কঠিন মুহূর্ত দেখেছি। পরিস্থিতি যাই হোক, মানসিক দিক দিয়ে শক্তই থাকি। কাউকে বুঝতে দিই না নিজে কী অবস্থায় আছি।”

৪৭ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৪৯ উইকেট নেওয়া জোরে বোলার বাড়ি ফিরেছিলেন ৮ জুন। বল হাতে অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। বাইশ গজে খেলেছেন অনেক হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ। কিন্তু করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিনগুলো ভুলতে পারবেন না কখনও। একটু সুস্থ হয়ে আইসিইউ থেকে বেরনোর পর অন্য রোগীদের মনোবল জোগাতেন সাগরময়। বললেন, “আশপাশে যাঁরা থাকতেন, তাঁদের সাহস দিতাম। ভাল লাগত, কেউ সুস্থ হয়ে ফিরে গেলে। আবার চোখের সামনে চার জনের মৃত্যুও দেখেছি আইসিইউতে। কথা বলতে বলতে কিডনি ফেলিওর হয়ে একজন মারা গেলেন।” বাড়িতে নব্বই বছর বয়সী বাবা, স্ত্রী, ছেলে –মেয়ে। কোভিড ওয়ার্ডে কারওর প্রবেশাধিকার নেই, ফলে দেখতে পাননি কাউকে। ফোনেই কথা বলতেন। কষ্ট হত, কিন্তু মেনে নিতে হত বাস্তবটা।

ক্রিকেটমহলের সঙ্গে অবশ্য ছিল যোগাযোগ। নিয়মিত ফোন করতেন রঞ্জি ট্রফিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ক্রিকেটীয় লড়াইয়ের সঙ্গে কোভিড-যুদ্ধ মেলানো যায় না, বলছেন সাগরময়। ৫৪ বছর বয়সীর সাফ কথা, “কোনও তুলনা নয়। খেলার জগতের আনন্দ আলাদা। সেটা বোঝানো যায়। কিন্তু বেঁচে ফেরার স্বস্তি বলে বোঝাতে পারব না। জীবন-মরণের সমস্যা এটা।”

ভেসে এল হাসি। স্বস্তির হাসি। করোনাকে হারানোর হাসি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy