ফাইল চিত্র।
বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন ইনিংস শুরু হওয়ার লগ্নে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন সচিন তেন্ডুলকর। মুম্বইয়ে তাঁর বাড়িতে বসে আনন্দবাজারকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে সচিন উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘সৌরভের প্রেসিডেন্ট হওয়ার খবরটা পেয়ে আমি দারুণ খুশি হয়েছি। সবার প্রথমে আমি ওকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। নতুন ইনিংস শুরু করতে চলেছে সৌরভ। আমার শুভকামনা সবসময় ওর সঙ্গে থাকবে।’’
সচিন-সৌরভ সম্পর্ক সেই অনূর্ধ্ব-১৫ ক্রিকেটের দিন থেকে। বাসু পরাঞ্জপের শিবিরে প্রথম দেখা হয়েছিল তাঁদের। সৌরভ এখনও বলেন, সেই প্রথম সাক্ষাতেই সচিনের দু’টো জিনিস তাঁর নজর টেনেছিল। একটা হচ্ছে সেই অনূর্ধ্ব-১৫এর দিন থেকেই কী অসম্ভব ব্যাটিং খিদে ছিল তাঁর। জোর করেও তাঁকে নেট থেকে বার করে আনা যেত না। কোচকে গিয়ে বলতে হত, তুমি এ বার বেরোও। শিবিরে আরও কয়েকজন ব্যাটসম্যান এসেছে তো। তাদেরও তো ব্যাট করার সুযোগ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত সেই কিশোর বয়স থেকেই সচিন যে কত ভারী ব্যাট করতেন, সেটাও খুব অবাক করেছিল সৌরভকে।
২৩ অক্টোবর ২০১৯-এর মুম্বই সেই দুই বন্ধুর স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠার আর একটি দিন। সচিন বলে ফেলছেন, ‘‘সেই অনূর্ধ্ব-১৫ ক্রিকেটের দিন থেকে সৌরভকে আমি দেখছি। এবং সব চেয়ে বেশি করে আমাকে মুগ্ধ করেছে সৌরভের ক্রিকেট নিয়ে আবেগ এবং দেশের হয়ে ভাল করার ইচ্ছাশক্তি। সৌরভ এর আগে একজন ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক হিসেবে দেশের সেবা করেছে। আমি নিশ্চিত, বোর্ড প্রেসিডেন্টের নতুন ভূমিকাতেও ও সম্মান এবং সাফল্যের সঙ্গে দেশের সেবা করে যাবে।’’
যাঁকে নিয়ে বলা, সচিনের সেই ওপেনিং পার্টনার সরকারি ভাবে বোর্ড প্রেসিডেন্টের মসনদে বসার আগের দিনটা এমন চরম ব্যস্ততার মধ্যে কাটালেন, যা ক্রিকেটার বা অধিনায়ক হিসেবে মুম্বই সফরে এসেও কাটাতে হত কি না সন্দেহ। সকালের উড়ানে ক্রিকেটার বন্ধু এবং সিএবিতে এখন সতীর্থ সঞ্জয় দাসকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা থেকে সচিনের শহরে এলেন। তার পরেই সোজা ছুটলেন ওয়াংখেড়েতে বোর্ডের হেড কোয়ার্টারে। সিওএ-র বিদায়ী চেয়ারম্যান বিনোদ রাই থেকে শুরু করে সিইও রাহুল জোহরি, সকলের সঙ্গে সেরে নিলেন জরুরি বৈঠক। চার বছর পরে আবার বোর্ড গঠন হচ্ছে। এত দিন চালিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স। যাবতীয় কাগজপত্র, ফাইল, সব বুঝে নেওয়ারও দায়িত্ব থাকছে। বোর্ডের সদর দফতরে নতুন পদাধিকারীদের টিম নিয়ে সরেজমিনে সব বুঝে নিতে চাইলেন সৌরভ। রাতের দিকে এলেন সিএবি সচিব এবং সম্ভাব্য সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া।
বোর্ডের অফিস থেকে হোটেলে এসেই আর এক প্রস্ত বৈঠক। লবিতেই দেখা হয়ে গেল আরও এক প্রাক্তন তারকার সঙ্গে। তিনি মহম্মদ আজহারউদ্দিন। নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্টের টেস্ট অভিষেকের ক্যাপ্টেন। তবে এ বার অধিনায়ক সৌরভ। আজহার তাঁর সতীর্থ। নতুন সচিব অমিত শাহ-র পুত্র জয় শাহ, নতুন কোষাধ্যক্ষ এবং অন্যান্য পদাধিকারীদের সঙ্গে বুধবারের সভা নিয়ে জরুরি আলোচনা সেরে নেওয়া। রাতে আবার মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার দেওয়া পার্টি ছিল। ক্রিকেটজীবনে এ ধরনের পার্টি সাধারণত এড়িয়েই যেতেন সৌরভ। এখানে তিনি যে আর ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক নন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট। সকলেই চান, তিনি একবার আসুন। তাই যেতেই হল। তবে মেরিন ড্রাইভে যে হোটেলে এসে তিনি উঠতেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল খেলার সময়, সেখানে তাঁর ‘স্যুইট রুমে’ ফিরে এলেন দ্রুতই। জানলা দিয়ে তাকালে সমুদ্র। যা তাঁর অনেক ক্রিকেট-কাহিনির সাক্ষী। এই মুম্বইয়েই তিনি ভারত অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেখানেই মহানাটকীয় মোচড়ে এক সপ্তাহ আগে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। আর বুধবার সরকারি ভাবে বসে পড়ছেন বোর্ডের মসনদে।
ঐতিহাসিক সেই সন্ধিক্ষণের কথা ভাবতে গিয়ে আবেগপ্রবণ তাঁর বিখ্যাত ওপেনিং পার্টনারও। সচিন বললেন, ‘‘সৌরভকে চিনি। ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক হিসেবে সবসময় ভারতীয় ক্রিকেটের মঙ্গল ওর কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে। আমি জানি, বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবেও ওর লক্ষ্য থাকবে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য সেরাটা উজাড় করে দেওয়া।’’ দ্রুত যোগ করলেন, ‘‘আমার মনে হয় সেটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্যটা ঠিক থাকছে কি না, সেটাই আসল। আর আমি নিশ্চিত, ভারতীয় ক্রিকেটের সেবা সব চেয়ে ভাল কী ভাবে করা যায়, সেটাই বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েও সবসময় মাথায় থাকবে সৌরভের।’’ দুজনে অসাধারণ সব ইনিংস খেলে, চিরস্মরণীয় সব পার্টনারশিপ গড়ে ভারতকে অবিশ্বাস্য সব ম্যাচ জিতিয়েছেন। একজন এগারো বছর আগে ক্রিকেটার হিসেবে যাত্রা শেষ করে ফিরে এলেন বোর্ডের সর্বময় কর্তা হিসেবে। অন্যজন বাড়িয়ে দিচ্ছেন শুভেচ্ছার হাত। ‘‘ক্রিকেটার সৌরভ, অধিনায়ক সৌরভ ভারতীয় ক্রিকেটের সেবা করেছে। এ বার প্রেসিডেন্ট সৌরভের পালা। একটা জিনিস বলতে পারি। লক্ষ্যটা পাল্টাবে না।’’ প্রাক্তন সতীর্থ ডাকলে তিনিও কি যোগ দিতে পারেন বোর্ডে ভারতীয় ক্রিকেটের কাজে? জিজ্ঞাসা করায় সচিন বললেন, ‘‘আমার পরামর্শ যখনই যে চেয়েছে, আমি দেওয়ার জন্য তৈরি থেকেছি। এখনও আছি। ভবিষ্যতেও থাকব। তার জন্য কোনও পদে আমাকে থাকতে হবে, তার কোনও মানে নেই। আমি আছি। সাহায্য বা পরামর্শের জন্য সবসময় আছি।’’
ওহো, সৌরভ-সচিন নিয়ে আর একটা তথ্য মনে পড়ে গেল। কৈশোরে দু’জনেই ছুটেছিলেন এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে। আগুনে পেসার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। চেন্নাইয়ের মাউন্ট রোডের হোটেলে তাঁরা এক ঘরেও থাকতেন। ভাগ্যিস, তাঁরা ডেনিস লিলি স্কুলের কৃতী ছাত্র হয়ে উঠতে পারেননি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy