শেষ লগ্নের প্রস্তুতি। রোহিতের বিধ্বংসী মেজাজ।
ইডেন গার্ডেন্সের সঙ্গে তাঁর রোম্যান্সের রহস্যটা যে ঠিক কী, নিজেই জানেন না রোহিত শর্মা। শুধু জানেন, এই মাঠে নামলে, এই পিচে নামলে তাঁর মধ্যে একটা কিছু হয়। আর জানেন, এই মাঠে খেলা তিনি অসম্ভব ভালবাসেন।
রঞ্জি অভিষেকে সেঞ্চুরি। ওয়ান ডে বিশ্ব কাঁপানো বিশ্বরেকর্ড। টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি। আইপিএলে সেঞ্চুরি। আইপিএল অধিনায়ক হিসেবে ট্রফি জয়। ইডেন আর রোহিত শর্মার যুগ্ম রূপকথায় এ দিন যোগ হয়ে গেল আরও একটা টাটকা অধ্যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫৭ বলে অপরাজিত ৯৮।
রোহিত গুরুনাথ শর্মা এর পরে নিজের নামটা সামান্য পাল্টে যদি রোহিত ইডেন শর্মা করে ফেলেন, কারও বোধহয় আপত্তি থাকবে না!
বৃহস্পতিবারের ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ যতই প্রাক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ওয়ার্ম আপ ম্যাচ হোক, অফিশিয়াল ব্রডকাস্টাররা যতই তার সরাসরি সম্প্রসারণের ব্যবস্থা না রাখুক, ম্যাচ নিয়ে ইডেনে উত্তেজনা তাতে এতটুকু কমেনি। উইকএন্ড নয়, তবু মাঠে ভিড় হাজার তিরিশ ছুঁইছুঁই। ম্যাচের আগে টিম প্র্যাকটিস দেখতে গ্যালারি ভরানো, মোবাইল ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে প্রিয় নায়কের কীর্তির সেলিব্রেশন, দেশের হয়ে বিরামহীন চিত্কার— দেখে মনে হবে প্রাক বিশ্বকাপ কোথায়, এ তো বড় টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে গেল। আর একটা ওয়ার্ম আপ ম্যাচও যে গ্রীষ্ম-শুরুর শহরে বাড়তি উত্তাপ ছড়িয়ে দিল, তার নেপথ্যে সেই রোহিত শর্মা।
বিশ্বকাপের প্রথম প্র্যাকটিস ম্যাচ ভারতের কাছে তাৎপর্যের ছিল মূলত দুটো ব্যাপারে। এক, ভারতীয় ব্যাটিং বড্ড বেশি বিরাট কোহালি নির্ভর, এই সমালোচনার জবাব দেওয়া। আর দুই, চোট পেয়ে দীর্ঘ দিন টিমের বাইরে থাকা প্রধান পেস-অস্ত্রের ফিটনেস যাচাই।
উপরোক্ত দুইয়ের মধ্যে প্রথমটার জবাব সমালোচকদের বেশ ভালই দিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। গোটা ম্যাচে বিরাটকে ব্যাট করতে পাঠাননি ভারত অধিনায়ক। আর রোহিত শর্মা বুঝিয়ে দিলেন, ভারতীয় ব্যাটিং মানে মোটেই শুধুমাত্র দিল্লিবাসী তরুণ নন। বিশ্বকাপের আগে আশ্বস্তও করলেন, রোহিতের ব্যাট যে দিন গর্জে উঠবে সে দিন বিপক্ষকে একাই গুঁড়িয়ে দেবে।
এ দিনের প্র্যাকটিস ম্যাচে টসের কোনও গল্প ছিল না। দুটো টিমের মধ্যে আলোচনায় ঠিক হয় যে, ভারত আগে ব্যাট করবে। ইনিংস শেষে যা হয়ে দাঁড়াল, ভারতের হয়ে ব্যাট করবেন রোহিত। প্রথম ওভারে আন্দ্রে রাসেলকে বাউন্ডারি মেরে শুরু। ন’টা চার, সাত-সাতটা ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র দু’রান দূরে শেষ। বিরাটের ব্যাটিং না দেখার দুঃখ যদি কারও মনে উঁকি দিয়েও থাকে, রোহিতের আতসবাজিতে দিনের শেষে সেটা মুছে যেতে বাধ্য।
আর মহম্মদ শামি? বুধবার টিম ইন্ডিয়ার প্র্যাকটিস শেষে শোনা যাচ্ছিল, এ দিনের ম্যাচটাই মোটামুটি বঙ্গ পেসারের সামনে শেষ সুযোগ। নিজের ফিটনেসের প্রমাণ না দিতে পারলে তিনি বিশ্বকাপ খেলছেনই, নিশ্চিত করে বলা যেত না। তা বৃহস্পতিবারের শামিকে দেখে মনে হল, রবি শাস্ত্রীর ‘প্রবলেম অব প্লেন্টি’ খাতায় ঢুকে যেতে পারেন আশিস নেহরা। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার জনসন চার্লসের উইকেট, দ্রুত গতিতে দৌড়ে দীনেশ রামদিনের ক্যাচ, ইয়র্কার, স্লোয়ার, বাউন্সার— ‘শামি শো’ থেকে বিশেষ কিছু বাদ গেল না।
‘‘শামিকে দেখে মনে হল বেশ ভাল জায়গায় আছে। আজ খুব ভাল বল করল ও। নিজের স্কিলের ভাল প্রয়োগ করল। শামি আমাদের প্রধান বোলারদের একজন,’’ ম্যাচের শেষে বলছিলেন রোহিত। সতীর্থের এই প্রত্যাবর্তন যে কতটা কঠিন, ভালই জানেন ভারতীয় ওপেনার। ‘‘শামি খুব খেটেছে। হাঁটুর চোট সারিয়ে মাঠে ফেরা কখনওই সহজ নয়। আপনারা গতকাল নেটেও নিশ্চয়ই দেখেছেন, শামি কী পরিশ্রম করছিল। একজন বোলারের পক্ষে এত দিন ক্রিকেটের বাইরে থাকা খুব কঠিন। শামি টিমকে বলেছিল, ও ম্যাচে খেলার অনুভূতিটা পেতে মুখিয়ে রয়েছে।’’
শুধু শামি নন। জসপ্রীত বুমরাহ, হার্দিক পাণ্ড্য, পবন নেগী— ভারতীয় বোলিংয়ের তরুণ তুর্কিরাও এ দিন সমান প্রভাবশালী। বুমরাহের যে ফুল লেংথ বলের ধাক্কায় ক্রিস গেইলের মিডল স্টাম্প একা কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল, সেটা যে কোনও পেসারের স্বপ্ন। পরে রোহিত বলছিলেনও যে, প্র্যাকটিস ম্যাচ থেকে তাঁরা যা যা চেয়েছিলেন, সব পেয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, টিম ইন্ডিয়ার সাফল্য কোনও একটা বিভাগের উপর নির্ভর করে নেই। অস্ট্রেলিয়া আর শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়, তার পরে এশিয়া কাপ জেতা— তিনটে বিভাগ একসঙ্গে ক্লিক করছে বলেই টিমের অশ্বমেধ এতটা অপ্রতিরোধ্য।
মাঠে-মাঠের বাইরে টিম ইন্ডিয়ার স্ট্রাইক রেট যে উচ্চতায় বিরাজমান, তাতে ভারত সমর্থকেরা একটা স্বপ্ন দেখতেই পারেন— দোসরা এপ্রিলের ওয়াংখেড়ে ফিরে আসছে তেসরা এপ্রিলের ইডেনে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ১৮৫-৬
(রোহিত ৯৮ নট আউট, যুবরাজ ৩১, জেরোম টেলর ২-২৬)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪০
(নেগী ২-১৫, জাডেজা ২-২৬, শামি ২-৩০, হার্দিক ২-২৫, বুমরাহ ১-৬ হরভজন ১-১২)।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy