উচ্ছ্বাস: মেলবোর্নে শেষ আটে না হারার রেকর্ড অক্ষত ফেডেরারের। এএফপি
অবসর নেওয়ার পরে নাতি-নাতনিদের তাঁর খেলোয়াড় জীবনের গল্প বলার অভাব ছিল না রজার ফেডেরারের। সেই তালিকায় আরও একটা অবিশ্বাস্য ম্যাচের কথাও ঢুকে পড়ল মঙ্গলবার। সাত, সাতটা ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে, পাঁচ সেট লড়াই করে ৩৮ বছর বয়সি সুইস কিংবদন্তি যে ভাবে অস্ট্রেলীয় ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন চোখে না দেখলে তা বিশ্বাস করা কঠিন।
ফেডেরারের লড়াই ছিল বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১০০ নম্বরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস স্যান্ডগ্রিনের বিরুদ্ধে। বিশ্বের তিন নম্বর ফেডেরার আগের দিনই মজা করে বলেছিলেন, ‘‘জীবনে অনেক টেনিস খেলেছেন, কিন্তু টেনিসের বিরুদ্ধে নামার কখনও সুযোগ হয়নি।’’ কে জানত এই টেনিসই তাঁর টেনিস জীবনের অন্যতম সেরা ম্যাচ খেলার সুযোগ এনে দেবে। ২২ বছরের পেশাদার সার্কিট জীবনে ফেডেরারের যে ম্যাচকে বলা হচ্ছে, ‘সর্বকালের অন্যতম সেরা কামব্যাক।’
ম্যাচের স্কোর দেখলেও সেটা অনেকটা স্পষ্ট হবে। ফেডেরারের পক্ষে ফল ৬-৩, ২-৬, ২-৬, ৭-৬ (৮), ৬-৩। চতুর্থ সেটে ৪-৫ পিছিয়ে থাকার সময়ে তিনটি ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচান ফেডেরার। এর পরে আরও চারটি ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচান টাইব্রেকে। ‘‘কখনও কখনও ভাগ্য সঙ্গ দেয়,’’ ম্যাচের পরে কোর্টে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলছিলেন ফেডেরার। তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই সময় আশা করছিলাম আমার প্রতিদ্বন্দ্বী যেন এই সময় উইনার না মেরে বসে। দু’-একটা ম্যাচ পয়েন্ট যদি ফস্কায়, তা হলে ম্যাচ কোন দিকে গড়াবে কে বলতে পারে? আমার মনে হয় আজ ভাগ্য দারুণ ভাবে আমার সঙ্গ দিয়েছে।’’
পেশাদার টুরে দেড় হাজারেরও বেশি ম্যাচ খেলেছেন ফেডেরার। কিন্তু কখনও চোটের জন্য ম্যাচ ছেড়ে দেননি। এ দিন ম্যাচে অবশ্য সে রকমই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কোর্টে বিপক্ষের পাশাপাশি চোটকেও সামলাতে হয়েছে তাঁকে। দ্বিতীয় সেট থেকেই ফেডেরারের কোথাও শারীরিক সমস্যা হচ্ছে বোঝা যাচ্ছিল। টেলিভিশনে ধারাভাষ্য দেওয়া জিম কুরিয়র ও টড উডব্রিজেরও যা চোখ এড়ায়নি। তৃতীয় সেটে ফেডেরার ০-৩ গেমে পিছিয়ে থাকার সময় আর থাকতে না পেরে আট মিনিটের মেডিক্যাল টাইম আউট নেন তিনি। তার আগে আবার প্রায় নিঃশব্দে হলেও কোর্টে গালিগালাজ করার জন্য আম্পায়ার তাঁকে সতর্ক করে দেন। এক লাইন জাজ যা শুনে আম্পায়ারকে জানান। পরে এই নিয়ে সুইস তরকা বলেছেন, ‘‘অনেক ভাষা মিলিয়েই কিছু একটা বলছিলাম। ওই লাইন জাজ যে অনেক ভাষা জানেন সেটা বোঝা গেল। এর পর থেকে লাইন জাজদের কথাও মাথায় রাখতে হবে।’’ এ রকম ঘটনা ফেডেরারের ক্ষেত্রে বিরল। তবে সুইস তারকা বলেছেন, শারীরিক সমস্যার জন্য কোর্টে ইচ্ছেমতো নড়াচড়া করতে পারছিলেন না। তাই হতাশ হয়ে পড়ায় গালিগালাজ বেরিয়ে পড়ছিল।
এই দুরন্ত জয়ে অস্ট্রেলীয় ওপেনে কখনও কোয়ার্টার ফাইনালে না হারার রেকর্ড অক্ষত রাখলেন ফেডেরার (১৫-০)। সঙ্গে মেলবোর্ন পার্কে গত ছ’টি পাঁচ সেট ম্যাচ জেতার অনবদ্য ধারাবাহিকতাও ধরে রাখলেন তিনি। এর মধ্যে গত সপ্তাহে জন মিলম্যানের বিরুদ্ধে পঞ্চম সেটের টাইব্রেকে এক সময় ৪-৮ পিছিয়ে গিয়েও ম্যাচ জয় রয়েছে। পাশাপাশি ১৯৭৭ সালে কেন রোজওয়ালের (৪২ বছর, ৬৮ দিন) পরে সব চেয়ে বেশি বয়সের খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলীয় ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন ফেডেরার। একই সঙ্গে জিমি কোনর্সের পরে (৩৯ বছর ৬ দিন, ১৯৯১ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন) দ্বিতীয় বয়স্কতম খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে ওঠার নজির গড়লেন তিনি। শেষ চারে তাঁর সামনে এ বার নোভাক জোকোভিচ। যে লড়াইয়ে তাঁর পাঁচ সেটের পরপর দুটি ম্যাচের ক্লান্তি কাটিয়ে ওঠাটাই সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
সার্বিয়ান তারকা ও বিশ্বের দু’নম্বর জোকোভিচ এ দিন অপর কোয়ার্টার ফাইনালে স্ট্রেট সেটে উড়িয়ে দেন কানাডার মিলোস রাওনিচকে। ফল ৬-৪, ৬-৩, ৭-৬ (৭-১)। ম্যাচের পরে ফেডেরারের এ রকম জয় নিয়ে তিনি যে তিনি অবাক হননি তা জানিয়ে জোকোভিচ বলেন, ‘‘এই হল রজার। এই বয়সে সাতটা ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে ফিরে আসল। ওর কাছ থেকে সব সময়েই এ রকম সর্বোচ্চ মানের টেনিসই সবাই আশা করে। তা সে বিশ্বের যে কোর্টেই হোক না কেন। তবে আশা করি যে ভাবে খেলছি সেটা ধরে রাখতে পারলে বৃহস্পতিবার আমার জেতার সুযোগ থাকবে।’’ পাশাপাশি দুর্ঘটনায় প্রয়াত কিংবদন্তি বাস্কেটবলার কোবি ব্রায়ান্টকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে জোকোভিচ বলেছেন, ‘‘সর্বকালের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট ছিল কোবি। আমায় এবং বিশ্বের বহু খেলোয়াড়কে কোবি প্রেরণা দিয়েছিল।’’
মেয়েদের সিঙ্গলসে বিশ্বের এক নম্বর অ্যাশলে বার্টি ৭-৬ (৬), ৬-২ গেমে গত বারের ফাইনালিস্ট পেত্রা কিতোভাকে হারিয়ে শেষ চারে উঠেছেন। পাশাপাশি বিশ্বের ১৪ নম্বর বাছাই সোফিয়া কেনিন খেলোয়াড় জীবনে প্রথম বার সেমিফাইনালে উঠলেন টিউনিশিয়ার অনস জাবেউরকে ৬-৪, ৬-৪ হারিয়ে।
ভারতীয় সমর্থকদের জন্য খারাপ খবর, মিক্সড ডাবলস থেকে ছিটকে গিয়েছেন লিয়েন্ডার পেজ। ৪৬ বছর বয়সি লিয়েন্ডার ও লাটভিয়ার জেলেনা অস্তাপেঙ্কোর জুটি দ্বিতীয় রাউন্ডে হারেন জেমি মারে ও বেথানি মাটেক স্যান্ডস জুটির বিরুদ্ধে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy