Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Roger Federer

‘কোনও মতে কেটে গেল, তাই না?’, ২৪ বছরের টেনিস জীবন শেষ করে উপলব্ধি রজার ফেডেরারের

১০ বছর আগে অবসর নিয়েছিলেন সচিন। লিখে এনেছিলেন ধন্যবাদ জানানোর তালিকা। আরও এক তারকার বিদায়। তিনি শেষের মঞ্চ সাজিয়েছিলেন নিজের হাতে। চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। কিন্তু আবেগের কাছে হার মানলেন ফেডেরার।

কেঁদে ফেললেন ফেডেরার।

কেঁদে ফেললেন ফেডেরার। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪৭
Share: Save:

অঝোর ধারায় কাঁদছেন। বার বার বলছেন, “এটা আনন্দের কান্না।” সবাইকে বলছেন, “আমি আনন্দে কাঁদছি।” কিন্তু রজার ফেডেরার নিজেকে বোঝাতে পারলেন কি?

টেনিসবিশ্বের এক ‘রাজা’ বিদায় নিচ্ছেন। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচ। তৈরি হচ্ছে কিছু ‘অদ্ভুত’ দৃশ্যপট। ফেডেরারকে জেতাতে কোর্টে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষ নাদাল। ম্যাচ শেষে শিশুর মতো কাঁদতে থাকা ফেডেরারের কাঁধে হাত রেখে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন জোকোভিচ। পাশে দাঁড়িয়ে অ্যান্ডি মারে, মাতেয়ো বেরেত্তিনি, ক্যাসপার রুডরা। রাজার বিদায় তো এমন ভাবেই হওয়া উচিত। ফেডেরার এমনটাই চেয়েছিলেন। জীবনের শেষ ম্যাচ খেলে মাইক হাতে নিয়ে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, “কোনও মতে কেটে গেল, তাই না? আমি খুশি। তোমাদের যেমন বলছিলাম। আমার কোনও দুঃখ নেই।”

লেভার কাপে জ্যাক সক ও ফ্রান্সেস টিয়াফো জুটির বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন রজার ফেডেরার এবং রাফায়েল নাদাল। এক সময়ে যে দু’জনকে দেখা যেত একে অপরের থেকে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ছিনিয়ে নিতে, তাঁরা লড়লেন একে অপরকে জেতাতে। দু’জনে মিলে ৪২টি সিঙ্গলস গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। শনিবার ভোরে যদিও পারলেন না লেভার কাপের ম্যাচটা জিততে। ফেডেরার বলেন, “আরও এক বার জুতোর ফিতেটা বাঁধলাম। যাই করলাম, শেষ বারের মতো করলাম। সমর্থক, বন্ধু, পরিবার, সতীর্থদের পাশে পেয়ে দারুণ লাগছে। খুব ভাল একটা ম্যাচ হল। আমি খুশি।”

ম্যাচ শেষে শিশুর মতো কাঁদতে থাকা ফেডেরারের কাঁধে হাত রেখে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন জোকোভিচ।

ম্যাচ শেষে শিশুর মতো কাঁদতে থাকা ফেডেরারের কাঁধে হাত রেখে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন জোকোভিচ। ছবি: রয়টার্স

মাইক হাতে জীবনের শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের পর কথা বলার সময় অনেক ক্ষণ আবেগকে আটকে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারলেন না। নাদালকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলেন। সেই অবস্থাতেই ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক বলেন, “নাদালের সঙ্গে এক দলে খেলাটা দারুণ উপভোগ করলাম। এখানে যে সব কিংবদন্তি রয়েছে, সকলকে ধন্যবাদ।”

টেনিস খেলার সময় এক জন খেলোয়াড় সাজঘরে নিজেকে একা তৈরি করে। টানেল দিয়ে হেঁটে একা কোর্টে ঢোকে। সেখানে একা এক জন প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করে। অনেকে বলেন টেনিস নাকি খুব একা করে দেয় এক জন খেলোয়াড়কে। ২৪ বছর ধরে টেনিস খেলার অভিজ্ঞতা ফেডেরারকেও এটা বুঝিয়েছে। তাই জীবনের শেষ ম্যাচে একা খেলতে চাননি। একটা দলের হয়ে নামতে চেয়েছিলেন। সেই কারণে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম নয়, লেভার কাপে ইউরোপের হয়ে নেমেছিলেন তিনি। সিঙ্গলস নয়, ডাবলস খেলার জন্য নাদালকে সঙ্গী করে। ফেডেরার বলেন, “আমি একা হয়ে যেতে চাইনি। এক মুহূর্তের জন্যও নিজেকে একা মনে হয়নি। কিন্তু বিদায় জানানোর সময় আমি দলকে পাশে পেয়েছি। নিজেকে একটা দলের খেলোয়াড় মনে হচ্ছে। সিঙ্গলস সেটা মনে হতে দেয় না। যারা এত বছর ধরে আমার পাশে ছিল তাদের ধন্যবাদ। এত বছর ধরে তারা আমার সঙ্গে গোটা বিশ্ব ঘুরেছে। সবাইকে ধন্যবাদ। আমার সঙ্গে যারা খেলেছ, আমার বিরুদ্ধে যারা খেলেছ, সকলকে ধন্যবাদ। মনে হচ্ছে একটা উৎসব চলছে। আমি এটাই চেয়েছিলাম।”

ফেডেরার থামলেন। হাততালি শুরু হল। যে সমর্থকরা এত বছর ধরে ফেডেরারের পাশে ছিলেন, তাঁরা আরও এক বার তাঁদের নায়কের জন্য চিৎকার করে উঠলেন। কোর্টে শেষ বারের মতো সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা। ফেডেরার বলেন, “দুর্দান্ত একটা সফর। এরকমই হওয়ার কথা ছিল। আমি খুশি টেনিস খেলতে পেরে। এই সফরটা আরও এক বার হলে মন্দ হয় না।” লন্ডনের ও২ এরিনায় তখন কান পাতা দায়। হাততালি, চিৎকারে থামতে বাধ্য হলেন ফেডেরার। সেই চিৎকারের উপরে নিজের গলা নিয়ে গিয়ে (মাইকের সাহায্যে) তিনি বলেন, “আমার জন্য এত মানুষ চিৎকার করছে। এ এক অদ্ভুত পাওয়া। আশা করছি আমি ভালই করেছি। অন্তত কথা তো বলতে পারছি (ফোঁপাতে ফোঁপাতে)। সকলে এখানে রয়েছে। খুব ভাল লাগছে। আমার মেয়েরা, ছেলেরা, স্ত্রী, সকলে রয়েছে।” থেমে গেলেন। পারলেন না কান্না আটকাতে। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ও (স্ত্রী মিরকা ফেডেরার) অনেক আগেই আমাকে থামিয়ে দিতে পারত। কিন্তু ও সেটা করেনি। আমাকে খেলার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছে।”

আর পারলেন না। কান্না বাঁধ ভাঙল। কোনও মতে পরিবারকে আরও এক বার ধন্যবাদ জানিয়ে বলা শেষ করলেন।

১০ বছর আগে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। শেষ বার বলার সময় কাগজে লিখে এনেছিলেন ধন্যবাদ জানানোর তালিকা। আরও এক তারকা বিদায় নিলেন। তিনি শেষের মঞ্চটা নিজের হাতে সাজিয়েছিলেন। চিত্রনাট্য লিখেছিলেন নিজের হাতে। কিন্তু আবেগের কাছে হার মানলেন ফেডেরার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy