মোহালিতে বুধবার মাত্র ৪ রান করেন ঋষভ। ফাইল ছবি।
নয়াদিল্লিতে তাঁর কোচিং ক্যাম্প থেকেই উত্থান বাঁ-হাতির। শুধু কোচ নন, তিনি এখনও হতাশা কাটানোর সেরা ঠিকানা। মোহালিতে ব্যর্থতার পর গভীর রাতে যেমন কথা হয়েছে দু’জনের। তিনি ঋষভ পন্থের ছেলেবেলার কোচ তারক সিনহা। বৃহস্পতিবার দুপুরে আনন্দবাজার ডিজিটালের সামনে চারপাশ থেকে ছুটে আসা সমালোচনার বিরুদ্ধে প্রিয় ছাত্রকে আড়াল করার পাশাপাশি টিম ম্যানেজমেন্টকেও একহাত নিলেন তিনি।
বুধবার ঋষভের ব্যাটিং দেখলেন? আউট নিয়ে কী বলবেন?
তারক সিনহা: ওটা কিন্তু খারাপ শট ছিল না। বাঁ-হাতি স্পিনারের অনেক শর্ট বল ছিল। বলটা যেখানে পাঠাতে চেয়েছিল, সেখানে পাঠাতে পারেনি। আসলে উইকেটে পড়ে বলের গতি কমে গিয়েছিল। স্লো হয়ে যাওয়ায় শটটা ঠিক মারতে পারেনি। মারার বলই ছিল ওটা। ব্যাটসম্যান যেই থাক, ওই বল পেলে সে মারবেই। ঋষভ না থেকে অন্য কেউ হলেও চালাত।
তার মানে বলছেন, উইকেট স্লো থাকায় অ্যাডজাস্টমেন্টে সমস্যা হয়েছিল?
তারক সিনহা: একদমই তাই। অন্য কোনও ব্যাপার নেই। আর লাকও একটা ব্যাপার। কপাল সঙ্গে থাকছে না। খারাপ সময় চলছে। এমন হয় ক্রিকেটে।
৩০ গজ বৃত্তের বাইরে একজনই ফিল্ডার ছিলেন। সেখানেই ক্যাচ গেল। যা দেখতে খুব কুৎসিত লেগেছে।
তারক সিনহা: এটাই তো কপাল! রাতারাতি তো কেউ খারাপ ক্রিকেটার হয়ে ওঠে না। উইকেট স্লো বলে শটটা ফিল্ডারের হাতেই চলে গেল। না হলে বাউন্ডারি হতো।
আরও পড়ুন: ফের ব্যর্থ পন্থ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ধোনিকে ফেরানোর ডাক
আরও পড়ুন: মোহালিতে বিরাটের ব্যাটে কোন কোন রেকর্ড ভাঙল জানেন?
এই আউট তো আরও চাপে ফেলবে ঋষভকে। এমনিতেই ‘ফিয়ারলেস’ ও ‘কেয়ারলেস’ ক্রিকেট নিয়ে চর্চা চলছে। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। তারপর এই ধরনের আউট!
তারক সিনহা: দেখুন, এ ভাবে চাপ দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। যে ক্রিকেটারকে ভবিষ্যৎ বলে মনে করা হচ্ছে, তাঁকে কেন চাপে ফেলা হবে? চাপ তৈরি করলে খেলায় তার প্রভাব তো পড়বেই। চাপ না দিয়ে বরং উৎসাহিত করা উচিত। কারণ, ওঁর উপর আস্থা তো টিম ম্যানেজমেন্টই দেখিয়েছে। দলে নেওয়া হয়েছে, খেলানো হচ্ছে মানে ও নিশ্চয়ই ভাল ক্রিকেটার। ও মুহূর্তের মধ্যে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ধরে, এটা তো দলের তরফেই বলা হয়েছিল। এখন তাই বাজে কথা বলে চাপে ফেললে ভুল করা হবে। দেখুন, সব ক্রিকেটারেরই খারাপ সময় আসে। যখন কোনও কিছু ঠিকঠাক হয় না। তাই পাশে থাকা দরকার, এই সময় কাটিয়ে ওঠার পথে সাহায্য করা উচিত। এখন পজিটিভ তরঙ্গ ওর আশপাশে থাকা দরকার। ও কিন্তু রান পাবে। পাবেই।
এই কঠিন সময়ে ছাত্রকে আপনি কী বলেছেন?
তারক সিনহা: এই তো কাল রাতেই কথা হল ঋষভের সঙ্গে। আমি বললাম, তোমার ভুল ছিল না। অন্য কেউ হলেও ওই বলে মারত। যে স্ট্রোক মেরেছো, তা বিলকুল ঠিক ছিল। আপনাকে যা বলছি, সেটাই ওকে বললাম।
ঋষভ কী বলছিলেন? আউট হওয়ার পর হতাশ দেখাচ্ছিল। যেন মানতে পারছেন না ওই শটে আউট।
তারক সিনহা: ও একটু হতাশ তো ছিলই। বলল, রান করা উচিত ছিল। তা তো হল না। আমি তাই চেষ্টা করলাম ওর মনের মধ্যে জমা কষ্ট দূর করার। বললাম, ব্যাটিং ভালই হচ্ছিল। চিন্তার কিছু নেই। রান আসবে। ব্যাটে তো ঠিকঠাক বল লাগছে।
কোচ তারক সিনহার সঙ্গে ঋষভ। ফাইল ছবি।
চার নম্বরে নামতে হওয়ায় কি সমস্যা হচ্ছে ঋষভের?
তারক সিনহা: না, না। এসব কিছু নয়। এটা তো সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাট। ওভার যত কমছে তত মুশকিল হয়ে পড়ে ব্যাটিং। ও যেখানে নামছে, ঠিক আছে। স্বচ্ছন্দই আছে চার নম্বরে। ব্যাপারটা এমন নয় যে পাঁচ বা ছয় নম্বরে নামলেই রান আসবে। এই চার নম্বর, পাঁচ নম্বর নিয়ে এত বিতর্ক মিডিয়াই তৈরি করে। সামনেই বড় ইনিংস আসবে।
কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজেও তো ঋষভ ভরসা দিতে পারেননি।
তারক সিনহা: ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পরপর দুটো ইনিংস খারাপ গিয়েছিল। স্লগ সুইপ হাতে চলে গিয়েছিল ওখানে। শেষ ম্যাচে কিন্তু রান পেয়েছিল। এগুলো আবার বলছি, ক্রিকেটে হয়। একটা-দুটো ম্যাচে কেউ খারাপ বা ভাল ক্রিকেটার হয়ে ওঠে না। ওকে তো বলা হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার। কিন্তু টেস্টে ওর রেকর্ড সবচেয়ে ভাল। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে। কিপিং নিয়েও দেখুন না। এত প্রশ্ন তোলা হয় কিপিং নিয়ে, কিন্তু টেস্টে দ্রুততম ৫০ শিকারের রেকর্ড ওর দখলে। যা ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজে হল। এই রেকর্ড কিন্তু ধোনিরও নেই। এই রেকর্ডগুলো ঋষভ ভাঙছে মানে ওর মধ্যে দক্ষতা রয়েছে। সেটাকে অস্বীকার করলে চলবে না। তাই পাশে থাকা উচিত। যদি মনে হয় অদূর ভবিষ্যতে ও সাফল্য পাবে, ধোনির জায়গা নেবে, তবে সঙ্গে থাকা দরকার।
আরও পড়ুন: ‘বিরাট’ জয়ের সৌরভে মিশে রয়েছে উদ্বেগ, এক নজরে মোহালির টি টোয়েন্টি
আরও পড়ুন: কোহালি তোমাকে অভিনন্দন, ভারত অধিনায়ককে আফ্রিদির টুইট
ধোনির উত্তরসূরি হিসেবে চিহ্নিত হওয়াও তো সমস্যা। সফল হওয়ার মাপকাঠি অনেক উঁচু হয়ে গেল না?
তারক সিনহা: ধোনি তো চিরদিন খেলবে না। পরিবর্ত হিসেবে কেউ না কেউ আসবেই। এটাই নিয়ম। সবারই রিপ্লেশমেন্ট হয়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জায়গাতেও কেউ খেলেছে তার পর। অথচ, ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার সময়ও আর কিছু ম্যাচ পেলে রান করার ক্ষমতা রাখত সৌরভ। মোদ্দা কথা হল, যেতেই হবে সবাইকে। হয় এখন, না হয় কিছুদিন পরে। তার জন্য তৈরি থাকতেই হবে, কাউকে তৈরি রাখতেই হবে। আমার মতে, ধোনির জায়গায় ঋষভের চেয়ে যোগ্য কেউ এই সময়ে নেই।
ঘরের মাঠে ধুলোওড়া পিচে স্পিনের বিরুদ্ধে ঋষভের কিপিং নিয়েও তো সংশয় রয়েছে অনেকের।
তারক সিনহা: কাউকে সুযোগ না দিয়ে রায় দিয়ে ফেলা ঠিক নয়। ট্রাই করে দেখতে হবে তো। সুযোগ দিয়ে যদি দেখা যায় পারছে না, তখন বাদ দাও। ওকে দিয়ে টেস্টে চলবে না, এই সিদ্ধান্তে তখন এসো। তার আগে নয়। আর ঋষভ কিন্তু উন্নতির রাস্তায় রয়েছে। বলা হতো, ওর কিপিং ভাল নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজে কিন্তু ও দারুণ কিপিং করেছে। আগে তো কিপিংই ইস্যু ছিল। এখন আবার ব্যাটিংকে ইস্যু করা হচ্ছে। আর একটা কথা। ওর রেকর্ডই বলছে যে ও টেস্ট প্লেয়ার।
শেষ প্রশ্ন। রান না আসা কি টেকনিক্যাল কারণে? নাকি মানসিক সমস্যা হচ্ছে ঋষভের?
তারক সিনহা: না, টেকনিক্যাল ব্যাপার নয়। মেন্টার প্রবলেম হচ্ছে। যা কেটে যাবে। আসলে একটা ব্যর্থতা হলে লোকে সতর্ক হয়ে যায়। আবার ব্যর্থ হলে সেটা আরও বেড়ে যায়। এত বেশি সচেতন হয়ে পড়ছে যে সহজাত খেলা খেলতে পারছে না। ক্রিকেটপ্রেমীরাই শুধু নয়, দল থেকেও ‘ফিয়ারলেস’ ও ‘কেয়ারলেস’ ক্রিকেটের মধ্যে সীমারেখা টানার কথা বলা হচ্ছে। এই ধরনের মন্তব্য কিন্তু কোনও কোচের পক্ষে শোভনীয় নয়। একজন কোচের কাজ ক্রিকেটারকে সবসময় উৎসাহিত করা। আমার বিশ্বাস, আশাও যে ঋষভ রান করবে, করবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy