Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Tokyo Olympics

Tokyo Olympics 2020: ‘চক দে’-র থেকেও রোমাঞ্চকর, রানিদের জয়ে শিহরিত হচ্ছেন বাস্তবের ‘কবীর খান’

কেউ ভরসা করে না। উৎসাহ দেয় না। তাই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের মেয়েরা জান লড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন মীর।

মেয়েদের জয়ে আবেগ বাঁধ মানছে না বাস্তবের ‘কবীর খান’ মীর রঞ্জনের।

মেয়েদের জয়ে আবেগ বাঁধ মানছে না বাস্তবের ‘কবীর খান’ মীর রঞ্জনের।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২১ ১৩:৩৬
Share: Save:

পেনাল্টি আটকাতে পজিশন নিচ্ছে বিদ্যা। তার আগে ইশারায় কোচের সঙ্গে কথা। তাতেই অসাধ্যসাধন করে ফেলেছিল টিম ‘চক দে’। সোমবার টোকিয়োয় ভারতীয় মহিলা হকি দল যখন একটু একটু করে জয়ের দিকে এগোচ্ছে, তখন ডাগআউট থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে টেলিভিশনের সামনে বসেছিলেন বাস্তবের ‘কবীর খান’। কিন্তু মীররঞ্জন নেগি নিজেকে আলাদা করতে পারছিলেন না রানি রামপাল এবং তাঁর সতীর্থদের থেকে। অলিম্পিক্সে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয়ের পর নেগির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। যিনি বলছিলেন, রানিদের এই জয় রুপোলি পর্দার ‘চক দে মোমেন্ট’-কে ছাপিয়ে গিয়েছে!

টোকিয়ো অলিম্পিক্সের কোয়ার্টার ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারতীয় মহিলা হকি দলের জয় অনেকের কাছেই স্রেফ অঘটন। কিন্তু নেগির কাছে এটা ‘নারীশক্তির জয়’, যা তাঁর জীবনের উপর ভিত্তি করে তৈরি ‘চক দে ইন্ডিয়া’ ছবির শেষ দৃশ্যের থেকেও অনেক অনেক বেশি রোমাঞ্চকর। নেগি বলছিলেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, রবিবার রাত থেকে ঘুমোতে পারিনি। এখনও কাঁপছি আমি। নিজের অজান্তেই কেঁদে চলেছি। চক দে-র থেকে অনেক ভাল খেলেছে আমাদের মেয়েরা। চক দে তো হাজার হোক একটা সাজানো চিত্রনাট্য! বাস্তবের জয় অনেক বেশি রোমাঞ্চকর।’’

নেগির প্রশিক্ষণেই ২০০২ সালে কমনওয়েল্‌থ গেমসে সোনা জিতেছিল ভারতীয় মহিলা হকি দল। ২০০৪ সালে হকি এশিয়া কাপে মেয়েদের সোনা জয়ের সময়ও দলের সঙ্গে সহকারী কোচ ছিলেন তিনি। তার আগে নেগির খেলোয়াড় জীবনের অতীত গ্লানি আর সমালোচনায় ভরা। পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচে গোল খাওয়ায় সামাজিক ভাবেও অপদস্থ হতে হয়েছিল তাঁকে। দেশকে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল। সেই কুৎসা, নিন্দা এবং গ্লানির ঢেউ সামলে প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি দেশকে সোনার পদক এনে দিয়েছিলেন। ‘চক দে ইন্ডিয়া’ ছবি তাঁর জীবন থেকেই অনুপ্রাণিত। নেগি এখন প্রবীণ। রানিদের দলের সঙ্গে যুক্তও নন। কিন্তু প্রাক্তন খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষক নিশ্চিত, আগামী দিনেও এই জয়ের প্রতিধ্বনি থেকে যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেকে ভাল খেলেছে। এটা আসলে নারীশক্তির জয়। মেয়েগুলো এমন এমন জায়গা থেকে উঠে এসেছে, যেখানে হকির নাম পর্যন্ত শোনেনি কেউ! উৎসাহিত করার কেউ নেই। নিজের জেদে এই জায়গায় পৌঁছেছে ওরা। অস্ট্রেলিয়ার মতো একটা দেশ, যারা শারীরিক এবং মানসিক গঠন, দু’দিক থেকেই অনেক এগিয়ে, সাক্ষাৎ কালীরূপে তাদের মোকাবিলা করেছে আমাদের মেয়েরা।’’

টোকিয়োয় জয়ী হওয়ার পর ভারতীয় মহিলা হকি দল।

টোকিয়োয় জয়ী হওয়ার পর ভারতীয় মহিলা হকি দল।

ক্রিকেটের জাঁকজমকের সামনে ভারতের মতো দেশে অন্য খেলার কদর কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন বহুদিনের। টেনিস, ব্যাডমিন্টনের গায়েও অনেকে সেঁটে দিয়েছেন ‘অভিজাত’ তকমা। সেখানে অন্যান্য খেলা প্রথম থেকেই পিছনের সারিতে। পুরুষ হকি দলকে নিয়ে যা-ও বা আলোচনা হয়, মহিলা হকি দলকে নিয়ে আগ্রহ তলানিতে। ‘চক দে ইন্ডিয়া’র সৌজন্যে সেই কৌতূহল তৈরি হয়েছিল বটে। কিন্তু ভারতে মহিলা হকি খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করার লোক নেই বললেই চলে বলে মনে করেন নেগি। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলছিলেন, সে সব সব ধ্যানধারণা ভেঙে দিতেই টোকিয়োয় জান লড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের মেয়েরা। নেগির কথায়, ‘‘আমাদের মেয়েদের চিয়ার করার লোকই নেই! ওরা জিততে পারে, সেই আশাই করেন না কেউ। তার উপর এ বার প্রথম খেলাও ভাল হয়নি। তাই মানসিক ভাবেও আমাদের মেয়েরা পিছিয়ে থাকবে বলেই মনে করেছিলেন সকলে। সেখান থেকেই নিশ্চয়ই ওদের পাল্টা দেখে নেওয়ার একটা মানসিকতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ম্যাচটা দেখে থাকলে বুঝতে পারবেন, পাড়ার খেলায় যে রকম বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দেখা যায়, মাঠে আমাদের মেয়েদের ঠিক সে রকমই বডি ল্যাঙ্গোয়েজ ছিল। ছোট ছোট স্ট্রোক খেলেছে। সেই ছোট ছোট পদক্ষেপই জয় এনে দিয়েছে। খেলার পুরোটাই চক দে মোমেন্ট। অলিম্পিক্সে শুরুর দিকে যা খেলছিল, সোমবারের খেলা তার থেকে অনেক অনেক আলাদা। আমার তো একটা সময়ে বুক ধড়ফড় করছিল।’’

নেগি মনে করেন, কঠোর পরিশ্রমই রানিদের এই জয় এনে দিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিডের সময় ওরা ঠিক মতো প্রশিক্ষণ পায়নি। তেমন টাকাপয়সাও পায় না, যে আলাদা করে জিমে যাবে। তার মধ্যেই কতটা পরিশ্রম করে খেলে দিল।’’ মহিলা খেলোয়াড়দের সঙ্গে কোচের রসায়ন কি আলাদা? নেগির জবাব, ‘‘ছেলেদের কথা সবাই বলে। মেয়েদের কেউ ভরসা করে না। তাই ওরা কোচের কথা শোনে। কোথাও না কোথাও কোচকে বাবার মতো দেখতে শুরু করে। যেখানে কেউ ওদের ভরসা করে না, সেখানে ওরা কোচকে ভরসা করে। তাতে শেখার ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হয়।’’

নেগি আশাবাদী, সোমবারের খেলার ৭০ শতাংশও দিতে পারলে পরের ম্যাচে রানিদের জয় নিশ্চিত। মনে করেন, টোকিয়োয় আবার আসবে ‘চক দে মুহূর্ত’। আর হাজার হাজার মাইল দূরে টেলিভিশনের সামনে শিহরিত হবেন, আনন্দাশ্রু ফেলবেন এক প্রৌঢ়। ছবির ‘কবীর খান’। বাস্তবের মীররঞ্জন নেগি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy