যুগলবন্দি: ভারতের গ্রাস থেকে ম্যাচ বাঁচিয়ে দিলেন দুই অস্ট্রেলীয়। পিটার হ্যান্ডসকম্ব ও শন মার্শ। রয়টার্স
আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিল, সোমবার রাঁচীর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই রোদ থাকবে না। সোমবার তেমন হল ঠিকই। তবে তা রাঁচীর আকাশে নয়, ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমে।
চায়ের বিরতিতে যখন প্যাভিলিয়নে ফেরেন দুই ব্যাটসম্যান, তখনই অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসিংরুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সতীর্থরা হাততালি দিয়ে শন মার্শ ও পিটার হ্যান্ডসকম্বকে স্বাগত জানালেন। যেন তখনই ম্যাচ ড্র হয়ে গিয়েছে।
আগের দিন যে অবস্থায় খেলা শেষ হয়েছিল। এবং দিন যে চাপ নিয়ে নেমে স্টিভ স্মিথ-ম্যাট রেনশ দু’জনেই লাঞ্চের আগে আউট হয়ে যান, তা সামলেও ভারতকে রুখে দেওয়াটা কি কম কৃতিত্বের? ১২৪ রানের পার্টনারশিপ খেলে সেটাই করলেন মার্শ-হ্যান্ডসকম্ব। অর্থাৎ সিরিজ সেই ১-১-ই রয়ে গেল। ধর্মশালার জন্যই তোলা রইল সিরিজের ফয়সালা।
রবীন্দ্র জাডেজার উপর অনেক ভরসা ছিল বিরাট কোহালির। জাডেজা উইকেটে তৈরি হওয়া ‘রাফ’ বা ঘষা জায়গায় বল ফেলে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে ধস নামাবেন, এই রকমই প্রত্যাশা ছিল। রবিবার ঋদ্ধিমান সাহা সাংবাদিকদের বলেও দিয়েছিলেন, ‘‘জাড্ডু উইকেটে একটা রাফ খুঁজে পেয়েছে, যেখানে ঠিকমতো বল ফেলে ওদের আউট করে দেওয়া যাবে।’’ কিন্তু অস্ট্রেলিয়া শিবিরেও কি আর সেই খবর জানা ছিল না?
রবিবার সন্ধে থেকেই যে জাডেজাকে আটকানোর ছক তৈরি শুরু হয়ে গিয়েছিল, তার প্রতিফলন তাঁদের ব্যাটিংয়েই দেখা যায়। জাডেজা-র পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিলেন দুই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ও’কিফের সৌজন্যে জায়গাটা তাঁদেরও যে জানা ছিল। যতটা সম্ভব রাফে বল পড়তে দিচ্ছিলেন না মার্শরা। এগিয়ে এসে চালাচ্ছিলেন। অথবা রাফে পড়ে ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বল শেষ পর্যন্ত দেখে ব্যাটে খেলছিলেন।
তবে এ দিন দ্বিতীয় সেশনে বল তেমন ঘুরছিলও না বললে জানালেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বল পুরনো হয়ে নরম হয়ে গেলে কিন্তু ভাল স্পিন করে না। আজ লাঞ্চের পর থেকে সেটাই হয়েছে। গতকাল নতুন বল কিন্তু ভাল ঘুরেছে। আজ সকালেও। দুপুর গড়াতেই ঘূর্ণিটা বেশ কমে গেল।’’ মার্শকে ফিরিয়ে জাডেজা ১২৪ রানের পার্টনারশিপ ভাঙার আগে ৬২ ওভারে কোনও উইকেটই পড়েনি।
লাঞ্চের আগে আবার ওপেনার ম্যাট রেনশ-র সঙ্গে ইশান্তের লেগে গেল ঝগড়া। এই ঘটনার কথা বিকেলেও বলছিলেন স্মিথ, ‘‘ইশান্ত রান আপ নেওয়ার পর মুরলী মিড অন থেকে বাঁদিকে সরে আসছিল বলেই ম্যাট ক্রিজ থেকে সরে যায়। এটা ও করতেই পারে। ইশান্তের কেন পছন্দ হয়নি, জানি না’’।
এই ঘটনা থেকে অবশ্য একটা লাভ হয় ভারতের, রেনশ-র মনঃসংযোগে চিড় ধরিয়ে ইশান্ত শর্মা তাঁকে এলবিডব্লিউ-র ফাঁদে ফেলে দেন। আর রবীন্দ্র জাডেজার বল ভুল জাজমেন্ট দিয়ে স্টাম্পের রাস্তা প্রায় বানিয়ে দেন স্মিথ। যা নিয়ে পরে তিনি বলেন, ‘‘উইকেটের আরও একটু ভিতরে এসে প্যাডের বাইরে দিয়ে খেলতে পারলে ভাল হত। ভুলের মাশুল দিতে হল।’’
আরও পড়ুন: ঋদ্ধির প্রশংসা মাহি, বিরাটের
তার পর থেকে মার্শ-হ্যান্ডসকম্ব জুটিরই রাজত্ব চলল ভারতীয় বোলারদের উপর। প্রশ্নও উঠল, দিনের প্রথম দু’ঘণ্টায় কেন দেখা গেল না আর অশ্বিনকে? টিভিতে বলার সময় প্রশ্নটা তুললেন রবি শাস্ত্রীও। বিরাট কোহালির ব্যাখ্যা, ‘‘একটা দিক থেকে বল করেই স্পিনারররা টার্ন পাচ্ছিল। তাই জাডেজাকে পাঠাচ্ছিলাম। ও ছন্দে রয়েছে, প্রতি তিন-চার ওভার অন্তর উইকেট পাচ্ছে, সে জন্যই। অশ্বিন তো আজ লাঞ্চের পরে টানা বোলিং করেছে। দু’দিক থেকেই। আর এই উইকেট থেকে বেশি কিছু আদায় করার ছিলও না বোলারদের।’’
মোটের উপর এই উইকেটে স্পিনের জুজু ছিলই না। উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ম্যাচের আগে যা বলেছিলেন, এ দিন বললেন পুরো উল্টো। ‘‘নাইস উইকেট। আমি এতটা আশা করিনি’’, বলে দেন স্মিথ। পঞ্চম দিনের উইকেট। স্বাভাবিক যে সমস্যা ছিল, হঠাৎ হঠাৎ বল নেমে যাওয়ার বিপদ, তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েই নামেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা।
মার্শকে যখন ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ধরেন মুরলী বিজয়। অশ্বিনকে অবশেষে উইকেট দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। সিলি পয়েন্টে মুরলী বিজয়কে ক্যাচ দিয়ে। তখন বিকেল হতে চলেছে। সূর্যের সাথে সাথে ভারতের জয়ের সম্ভাবনাও পশ্চিমে ঢলে পড়েছে। ৩৭৭ মিনিটের লড়াইয়েই ভারতের জয়ের আশা শেষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy