অভিনন্দন: ফাইনালের জন্য নাদালকে শুভেচ্ছা ফেডেরারের। রয়টার্স
ফরাসি ওপেনে সচরাচর এমন দেখা যায় না। প্রচণ্ড হাওয়ায় উড়ছে ধুলো। আর তার সামনে অসহায় ভাবে দাড়িয়ে রজার ফেডেরার। টিভিতে ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনাল শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরে দৃশ্যটা দেখে আমার মনে হল প্রতীকী। ধুলো নয়, এ যেন নাদাল ঝড়ে বেসামাল ফেডেরার।
বাস্তবে হলও তাই। রোলঁ গ্যারোজের অধিপত্য বজায় রেখে রাফায়েল নাদাল স্ট্রেট সেটে ফেডেরারকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেল। ফল ৬-৩, ৬-৪, ৬-২। ফেডেরার আগেই বলেছিল, সেমিফাইনালে উঠে প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া আজ রোলঁ গ্যারোজের পরিবেশও নাদালের পক্ষে গিয়েছে। মেঘলা আবহাওয়া, তার মধ্যে প্রচণ্ড হাওয়া হচ্ছে। এ রকম পরিবেশে কোর্ট অনেক ধীর গতির হয়ে যায়। তাতে নাদালের মতো কোর্টে দ্রুত নড়াচড়া করা খেলোয়াড়রা রিটার্ন শট মারতে অনেক সময় পায়। নাদালের ভারি টপস্পিন এমনিতেই সামলাতে হিমশিম খেতে হয় বিপক্ষকে। এ রকম পরিবেশে তো নাদালের বিরুদ্ধে খেলা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। শটে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সমস্যা হয়। ঠিক যা হল আজ। ফেডেরার কোর্টের এই পরিবেশের সঙ্গে মানাতে পারল না।
ফিলিপ শঁতিয়ে কোর্টটাকে ঘরবাড়ি করে ফেলছে নাদাল। এত নিখুঁত ভাবে এখানে খেলে, দেখে মনে হয় যেন এটা ওর বাড়িরই কোর্ট, এখানেই রোজ অনুশীলন করে। ১৫ বছরে এক জন ১২ নম্বর ফাইনাল খেলতে নামছে, ভাবা যায়! যে ভাবে নাদাল সার্ভিস করছে, কোর্টে নড়াচড়া করছে, আত্মবিশ্বাস যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে ওর খেলায়। কে বলবে এই লোকটা ফরাসি ওপেনে নামার আগে টানা তিনটে ক্লে প্রতিযোগিতায় হেরেছিল। মন্টে কার্লো, বার্সেলোনা এবং মাদ্রিদে।
এই তিনটে হারে এক দিক থেকে শাপে বর হয়েছে নাদালের। তিনটে প্রতিযোগিতাতেই সেমিফাইনালে বিদায় নেওয়ায় ওর কোচ বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর কার্লোস ময়ার সঙ্গে আলোচনা করে নিজের ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার সময় পেয়েছে। সার্ভিস, ব্যাকহ্যান্ড আর ফিটনেস নিয়ে প্রচুর খেটেছে। পাশাপাশি মানসিক ভাবে ফুরফুরে থাকার জন্য পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছে, গল্ফ খেলেছে। তার পর তরতাজা হয়ে একেবারে ঠিক সময় ফিরেছে ছন্দে। যদি ও তিনটে টুর্নামেন্টে জিতে প্যারিসে আসত, হয়তো আরও বেশি ক্লান্ত থাকত। কে বলতে পারে, যার প্রভাব হয়তো পড়তে পারত ওর ফরাসি ওপেনের পারফরম্যান্সে।
অনেকের হয়তো ফল দেখে মনে হবে ম্যাচটা একপেশে হয়েছে। তা কিন্তু নয়। ফেডেরার যথেষ্ট লড়াই করেছে। ভুললে চলবে না ফেডেরারের বয়স প্রায় ৩৮। এই বয়সেও এই পর্যায়ের ফিটনেস টেনিসে ভাবা যায় না। অন্য খেলায় হতে পারে। কিন্তু টেনিসে কোর্টে ক্রমাগত নড়াচড়া করে যেতে হয়। গ্র্যান্ড স্ল্যামে এক দিন অন্তর ম্যাচ খেলতে হয়। চার ঘণ্টা সাড়ে ঘণ্টাও সেই ম্যাচ গড়তে পারে। সে সব ফেডেরার এই বয়সেও কী ভাবে দেখাতে পারছে, সেটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের। তবে নাদালের বিরুদ্ধে ক্লে কোর্টে জিততে গেলে প্রতিপক্ষর ফিট হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, সুপারফিট হতে হবে। ফেডেরার তাই এত চেষ্টা করেও নাদালের দাপটের সামনে এঁটে উঠতে পারেনি। তবুও বলব চার বছর পরে ফরাসি ওপেনে ফিরে এসেই সেমিফাইনালে ওঠাও কিন্তু কম কৃতিত্ব নয়।
নাদালের বিরুদ্ধে ফেডেরারের জেতার এক মাত্র পথ ছিল আগ্রাসী খেলা। আগ্রাসনের জবাব আগ্রাসন দিয়ে দেওয়া। কিন্তু শুক্রবার আবহাওয়ার সুবিধা নাদাল পেয়ে যাওয়ায় ফেডেরারের পরিকল্পনা আজ কাজ করেনি। দু’ঘণ্টা ২৫ মিনিটেই ফাইনালে ওঠার কাজটা মসৃণ ভাবে তাই সেরে ফেলেন ক্লে কোর্টের রাজা। নাদালেরও বয়স কম হয়নি। ৩৩ বছর। কিন্তু এখনও বাঘের মতো কোর্টে নড়াচড়া করছে। সার্ভিস, ফিটনেস, ফোরহ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ড সব নিখুঁত ভাবে মারছে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। বিপক্ষে নোভাক জোকোভিচ বা দমিনিক থিম যেই পড়ুক, আমার বাজি ফাইনালে রাফা। বিশেষ করে যদি এ রকমই আবহাওয়া থাকে, এগিয়ে থাকবে নাদালই।
তাই বলছি, রবিবার ফরাসি ওপেনের ফাইনালে আরও একটা ঝড়ের অপেক্ষা করছি— নাদাল-ঝড়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy