অলিম্পিকে রুপো জেতা ইস্তক পি ভি সিন্ধুকে নিয়ে স্পনসরদের মাতামাতি শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অলিম্পিকে যাওয়ার সময় এই সিন্ধুকেই সাহায্যের হাত বাড়াতে ইতস্তত করছিলেন তাঁরা।
সিন্ধু যে সফল হবেন, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন কোচ গোপীচন্দ। সিন্ধুর ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা কোম্পানিকে সেকথা জানিয়েও দিয়েছিলেন তিনি। আত্মবিশ্বাসী ছিল সিন্ধুর ম্যানেজার ‘বেসলাইন’ সংস্থাও। কিন্তু ভরসা দেখাতে পারেনি অনেক বড় ব্র্যান্ডই।
বেসলাইন সংস্থার ডিরেক্টর রামচন্দ্রন আর-ই বলছিলেন, ‘‘আজ সিন্ধুর পিছনে ব্র্যান্ডরা দৌড়চ্ছে, কিন্তু অলিম্পিকের আগে ছবিটা এমন ছিল না!’’ বছর দু’য়েক ধরে তাঁরাই ব্যাডমিন্টন তারকা সিন্ধু আর কাদম্বী শ্রীকান্তের ম্যানেজমেন্ট সামলাচ্ছেন। তাঁরা অলিম্পিকে যাওয়ার আগে থেকেই রামচন্দ্রনরা স্পনসরের খোঁজ করছিলেন। রামচন্দ্রনের কথায়, ‘‘তখন ওরা একের পর এক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভাল ফল করছে। আমরা বহু ব্র্যান্ডের কাছে গিয়ে বলি, অলিম্পিকেও ওদের ভাল ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
উত্তর কী এসেছিল? কেউ বলেছিলেন, ‘‘অলিম্পিকের সাত দিন পরে ওদের খেলা আর কেউ দেখবে?’’ কেউ বলেছিলেন, ‘‘ওদের দেখা যাবেই বা কতক্ষণ?’’ কেউ কেউ নিমরাজি হয়ে এতই সামান্য টাকা অফার করেছিলেন, রামচন্দ্রনের কথায় সেই অঙ্কটা ‘হাস্যকর’ ছিল। ভোগ্যপণ্য, ক্রীড়া সরঞ্জাম এবং ব্যথা কমানোর ওষুধ— সব ধরনের নির্মাতা সংস্থাই তার মধ্যে ছিল।
ছবিটা বদলে যায় মাত্র কয়েক ঘণ্টায়। জাপানের নোজুমি ওকুহারাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠতেই সবার নজর গিয়ে পড়ে সিন্ধুর উপরে। রুপো জয়ের পরে তো দেশ উত্তাল। সিন্ধুর সাফল্যকে সম্মান জানাতে ‘পিজ্জা হাট’ ঘোষণা করে, সিন্ধু নামের কেউ অর্ডার দিলে তিনি বিনামূল্যে পিজ্জা পাবেন। সাক্ষী মালিকের পদক জয়ের পরেও তারা এই কৌশল নিয়েছিল। ‘উবের’-এর পাতা খুললে দেখা যাচ্ছিল গাড়ির বদলে গুগল ম্যাপে ঘুরে বেড়াচ্ছে শাটলকক। এমনকী সোমবার হায়দরাবাদে যে ছাদখোলা বাসে সিন্ধু ঘুরে বেড়িয়েছেন, সেই বাস পাঠিয়েছে মুম্বইয়ের সরকারি পরিবহণ সংস্থা ‘বেস্ট’। এর আগে ক্রিকেটের টিম ইন্ডিয়াকে নিয়ে ঘোরা ‘নীলাম্বরী’ নামের এই বিখ্যাত বাস প্রায় ৭০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাজির ছিল হায়দরাবাদ এয়ারপোর্টে। ‘‘যে সব সংস্থার তরফে অলিম্পিকের আগে আমাদের আবেদন ফেরানো হয়েছিল, তারাই এখন একের পর এক শুভেচ্ছা জানিয়ে মেল পাঠাচ্ছে’’, জানাচ্ছেন রামচন্দ্রন।
এমন ঘটনার উদাহরণ রয়েছে ক্রিকেটেও। ২০০০ সালে কেনিয়ায় আইসিসি নক-আউট টুর্নামেন্টে একসঙ্গে অভিষেক হয়েছিল যুবরাজ সিংহ ও জাহির খানের। তখনই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, আনকোরা এই দুই তরুণকে স্পনসর করতে রাজি হয়নি অনেক বড় বড় ব্র্যান্ড। পরে তারাও একই ভাবে এই দুই তারকার পিছনে লাইন দিয়েছিল।
কেন? বিপণন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্র্যান্ডগুলো সব সময়েই চেনা মুখ বা চেনা তারকার উপরে বাজি ধরতে চায়। বিজ্ঞাপন-গুরু রাম রায়ের মতে, ‘‘এটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। সকলেই এই পরিস্থিতিটাকে নিজেদের জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।’’ স্পনসরদের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষ কাকে চাইছে তা চোখেই দেখা যায়। গত কয়েক দিনে লাগাতার ট্রেন্ডিং ছিল সিন্ধু, সাক্ষী, দীপাদের কথা। ফলে এখন তাঁদের দিকে স্পনসরদের ভিড় বাড়বেই। এ রকমই হয়ে এসেছে বরাবর।
যেমন, মেরি কম, সাইনা নেহওয়ালের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা ‘আইওএস স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট’-এর মিডিয়া টিমের কর্তা রাহুল ত্রেহান জানাচ্ছেন, মেরি কম অলিম্পিক পদকের আগেও ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছিলেন। কিন্তু অলিম্পিক পদকের পরে তিনি যতটা প্রচার পেয়েছেন, তা আগে পাননি। অলিম্পিকের পরেই তিনি স্পনসর পান। অন্য দিকে, সাইনা অলিম্পিক ছাড়াও বিশ্বমানের সব প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক সাফল্য পেয়ে আসছেন। গত সাত বছর ধরে প্রথম দশে রয়েছেন। এক নম্বরও হয়েছেন। তাই চোটের জন্য এ বার অলিম্পিকে পদক না পেলেও সেটা তাঁর ব্র্যান্ডকে বিরাট আঘাত করবে না। কারণ সাইনা ইতিমধ্যেই নিজের ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রাহুলই জানালেন, আইওএসের সঙ্গে দীপা কর্মকারের চুক্তি হওয়ার মুখে। দীপা পদক না পেলেও তাঁর সাফল্যের জেরে ইতিমধ্যেই একাধিক স্পনসর তাঁর সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়ে যোগাযোগ করেছে। অথচ অলিম্পিকের আগে দীপার নামই জানতেন হাতে গোনা কয়েক জন।
টিম সিন্ধুর লক্ষ্য অবশ্য স্থির। রামচন্দ্রন জানাচ্ছেন, সিন্ধু আর কাদম্বী অলিম্পিকে রওনা হওয়ার অল্প আগে ভারতের দু’টি নামী ব্র্যান্ড স্পনসরশিপে রাজি হয়েছিল। ‘‘তখন ওদের ফোকাস নষ্ট হয়ে যাবে বলে আমরা বলিনি। এখন চুক্তি হলে ওদের কথাই ভাবা হবে। কারণ, সাফল্য পাওয়ার আগে থেকেই ওরা সিন্ধুর ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy