গর্ব: এশীয় বক্সিংয়ে সোনা জয়ী পূজা। সঙ্গে কোচ আলি কামার।
সুরেলা বিনয়ী গলার স্বর! শুনলে কে বলবেন, এই মেয়েই যখন বক্সিং রিংয়ে নামেন তখন প্রতি-আক্রমণে হুক, আপারকাট, জ্যাব মেরে বিপক্ষকে ঘায়েল করে দেন!
রবিবার রাতে দুবাইয়ে এশিয়ান বক্সিং প্রতিযোগিতায় ৭৫ কেজি বিভাগের ফাইনালে উজ়বেকিস্তানের মাভলুদা মোভলোনোভাকে ৫-০ পর্যুদস্ত করে সোনা জিতেছেন ভারতের পূজা রানি। এশীয় বক্সিং প্রতিযোগিতায় এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিতায় টানা দু’বার!
২৪ ঘণ্টা আগে ভারতীয় ক্রীড়ামহল যখন মেরি কমের ফাইনালে হার দেখে মুষড়ে পড়েছিল, তখনই হরিয়ানার পূজা সোনা জিতে তেরঙ্গা উড়িয়েছেন মরুশহরে। ৩০ বছর বয়সি আয়কর দফতরের এই আধিকারিককে সোমবার সকালে যখন দুবাইয়ে ফোনে ধরা হল, পূজা প্রথমেই বলে দিলেন, ‘‘মেরি (কম) দিদি ফাইনালে হারায় রবিবার রাতে হোটেলে কোনও উৎসব করিনি। ও আমাদের নেত্রী। তার হারের দিনে জয়ের আনন্দ করা যায় না।’’ যোগ করলেন, ‘‘রাতে বাড়িতে কথা বলেই ফোন বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আজ সকালে ফোন খোলার পরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ উপভোগ করছি। একের পর এক অভিনন্দন বার্তা আসছে। তবে এতেই তুষ্ট থাকলে চলবে না। এ বার অলিম্পিক্সে পদক চাই।’’
২০১৯ সালে এই প্রতিযোগিতাতেই ব্যাঙ্ককে চিনের বক্সার ওয়াং লিনাকে হারিয়ে ৮১ কেজি বিভাগে পূজা সোনা জিতেছিলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এশীয় মঞ্চে সেরা হওয়ার কোন মুহূর্তটা তাঁর কাছে বেশি স্মরণীয়?
বেজিং অলিম্পিক্সে বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ জয়ী বিজেন্দ্র সিংহের গ্রাম ভিওয়ানির মেয়ের জবাব, ‘‘প্রথম বার সোনা জেতাই সেরা মুহূর্ত। কারণ, তার দু’বছর আগে প্রথমে আমার কাঁধে চোট লেগেছিল। তার পরে দীপাবলিতে আতসবাজি পোড়াতে গিয়ে হাত পুড়ে যায়। ছ’মাস অনুশীলন করতে পারিনি। তার পরে ফিরে এসে চিনের এশীয় সেরা বক্সারকে হারিয়ে ছন্দে ফিরেছিলাম।’’
আরও যোগ করলেন, ‘‘তবে এ বারের চ্যালেঞ্জটাও কম ছিল না। করোনা অতিমারি আমাদের সকলের থেকে ১২ মাস কেড়ে নিয়েছে। সতীর্থ, কোচেরা এই মারণ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। শিবির বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এক থেকে দেড় সপ্তাহ অনুশীলন করে সবাই দুবাইয়ে এসেছিলাম। তাই এটা সাফল্যের দ্বিতীয় সেরা মুহূর্ত।’’
চলতি মাসের শুরুতে করোনা সংক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ভারতীয় বক্সিং সংস্থার অন্যতম শীর্ষ কর্তা রাজকুমার সাচেতি। রবিবার রাতে জেতা সোনার পদক তাঁকে উৎসর্গ করেছেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সগামী ভারতীয় দলের এই মহিলা বক্সার। বলছেন, ‘‘দু’বছর আগে আমাকে যেমন প্রথম এশীয় বক্সিং প্রতিযোগিতায় সোনার পদক প্রেরণা দিয়েছিল এগিয়ে যাওয়ার, তেমনই অলিম্পিক্সের আগে এই সাফল্যও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী দু’মাসে নিজেকে আরও কঠোর পরিশ্রমে ডুবিয়ে দেব অলিম্পিক্স থেকে পদক আনার জন্য। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চ থেকে নেমেই তা বলে দিয়েছি কোচ আলি কামার স্যরকে।’’
মেয়েদের কোচ কলকাতার ছেলে আলির কথায়, ‘‘মেয়েটার জেদ ওকে এই উচ্চতায় তুলে এনেছে। রিংয়ে ওর আগ্রাসী মেজাজ, প্রতি-আক্রমণ ভাল। কিন্তু কখনও কখনও আক্রমণ করতে গিয়ে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে মাথা নীচে নেমে যাচ্ছে। পাঞ্চ (ঘুসি) নিশানায় না লাগলে মুহূর্তের জন্য মনঃসংযোগ হারাচ্ছে। আক্রমণ ও রক্ষণে আরও বৈচিত্র বাড়িয়ে ভুলগুলো শুধরে নিতে পারলে অলিম্পিক্সে পূজা ভাল ফল করতেই পারে।’’
ভিওয়ানি গ্রামের এই মেয়ের উত্থানের পথ সহজ ছিল না। ২০০৮ সালে বিজেন্দ্র সিংহ যখন বক্সিংয়ে অলিম্পিক্স পদক নিয়ে ফেরেন, তখন পূজা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। পরের বছর স্কুলের শিক্ষিকা তাঁর পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি উচ্চতা দেখে বক্সিং শেখার জন্য উৎসাহ দিয়েছিলেন। তার পরে সেই শিক্ষিকা তাঁর স্বামী সঞ্জয় সিংহের প্রশিক্ষণে ‘হাওয়া সিংহ বক্সিং অ্যাকাডেমি’-তে ভর্তি করিয়ে দেন পূজাকে। পেশায় পুলিশ অফিসার বাবা যা একদম পছন্দ করেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy