মেলবোর্নের মসনদে!-গেটি ইমেজেস
অ্যান্ডি মারে আমার মতে বরাবর দু’নম্বর থাকার প্লেয়ার। কোনও দিন এক নম্বর হয়তো হতে পারবে না। চিরদিনের ডিফেন্সিভ ট্যাকটিশিয়ান। ভীষণ রকম কাউন্টার পাঞ্চিং নির্ভর টেনিস খেলে। বহু বহু বছর পর ব্রিটেনকে টেনিস বিশ্বে টপ লেভেলে এনে দিয়েছে। গত মাসেই মারের দাপটে অনেক যুগ পরে ব্রিটেন ডেভিস কাপ জিতেছে, সবই ঠিক। কিন্তু কোথাও যেন একটু সাহসের অভাব রয়েছে ছেলেটার মধ্যে! কথায় বলে না, ‘মামা’স্ বয়’? অ্যান্ডি যেন কতকটা তাই! ওর মা জুডি মারের শুধু বিশাল অবদানই নয়, অপরিসীম প্রভাবও রয়েছে ছেলের কেরিয়ারের উপর। কিন্তু আমার মতে তাতে অদ্ভুত একটা নেতিবাচক ব্যাপারও থেকে গিয়েছে মারের খেলায়। টেনিসে চূড়ান্ত প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার পরেও, মানে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেও পুরোপুরি সাহসী হয়ে চাপের মুখে ঝুঁকি নিতে শেখেনি।
রবিবার অস্ট্রেলীয় ওপেন ফাইনালে ওকে নোভাক জকোভিচের হারানোর স্কোরলাইনটা যতটা সহজ দেখাচ্ছে, ম্যাচটা কিন্তু ততটা একপেশে হয়নি। কিংবা স্কোরলাইন দেখে বিশ্বের এক নম্বরের শাসন যতটা ছিল বলে মনে হচ্ছে, ততটা আসলে ছিল না। ৬-১, ৭-৫, ৭-৬ (৭-৩)। মাত্র তিরিশ মিনিটে জকোভিচের প্রথম সেট জিতে নেওয়া বাদে বাকি দু’টো সেটে তুলমূল্য লড়াই হয়েছে। মারে বাড়তি একটু সাহস দেখিয়ে আক্রমণের ঝুঁকি নিলে, কে বলতে পারে ফাইনালের ছবিটা দিনের শেষে অন্য রকম হত না?
ফাইনালের শুরুতে মারে জড়সড় ছিল। হতে পারে সেটা আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই হাড্ডাহাড্ডি ম্যারাথন পাঁচ সেটের সেমিফাইনাল খেলার ধকলের জের। সেখানে জকোভিচ ফাইনালের আগে এক দিন বেশি বিশ্রাম পেয়েছে। সেমিও জিতেছিল মারের চেয়ে অনেক কম খেটে। সে জন্য এ দিন মেলবোর্নে প্রথম সেটে মারে যেন আরওই ডিফেন্সিভ ছিল। কিন্তু যখন দেখল, তাতে ও এক রকম উড়ে গিয়েছে, তখন দ্বিতীয় সেটে খেলার স্টাইল স্বাভাবিক ভাবেই পাল্টাল। অ্যাটাকিং খেলল, কোনও ঝুঁকি নেয়নি সেটা বললেও মিথ্যে বলা হবে।
কিন্তু দ্বিতীয় সেটে নিজের সার্ভে ৫-৫, ৪০-০ অবস্থায় সেই বাচ্চা ছেলের মতো ‘কেয়ারলেস’ সব ভুলভাল শট মেরে ব্রেক-ই হয়ে গেল! ওটাই আমার মতে মেলবোর্ন ফাইনালের টার্নিং পয়েন্ট। ওখানে মারে যদি দ্বিতীয় সেট টাইব্রেকেও নিয়ে যেতে পারত, ওর একটা ভাল সুযোগ থাকত। হয়তো এমনও হতে পারে, দিন কয়েকের ভেতর ও বাবা হবে, অন্য দিকে ওর শ্বশুর অস্ট্রেলীয় ওপেনেই কোর্টে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এখনও হাসপাতালে—এ সব ভাবনা ফাইনালেও ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল!
জকোভিচ আবার ঠিক এর উল্টো মানসিকতার প্লেয়ার। ও এখন যে নিখুঁত টেনিসটা খেলছে তা নিয়ে বোধহয় নতুন করে কিছু লেখার নেই। আমি বরং অবাক হয়ে দেখি, প্রতিটা উইনিং পয়েন্ট কোর্টে যে ভাবে জকোভিচ তৈরি করে, সেটা। বরিস বেকারের মতো খেলোয়াড়জীবনের ছটফটে এক সুপারস্টারের কোচিংয়ে থেকেও হাঁকপাক নেই শিষ্যের!
মারে যখন উইনার মেরে চিৎকার করছে, আনফোর্সড এরর করেও চেঁচাচ্ছে তখন জকোভিচ চুপচাপ নিজের কাজ করে গেল। মারে যখন গোড়ার দিকে বেশি র্যালি করছিল তখন আরও বেশি পেসে রিটার্ন করল। আবার যখন মারে অ্যাটাকিং খেলল, তখন ঠান্ডা মাথায় সেটাকে কাউন্টার করে শেষমেশ প্রতিপক্ষকেই অধৈর্য করে তুলে ভুল করতে বাধ্য করল। যতই ওকে টেনিসের জোকার বলা হোক, নিজের খেলার বেলায় ও আপাদমস্তক সিরিয়াস। কোর্টে রসিকতা করে যে অঙ্গভঙ্গি করে সেটা আমার মনে হয়, আসলে প্রতিদ্বন্দ্বীকে অন্যমনস্ক করে তোলার গেমপ্ল্যান।
ছ’টা অস্ট্রেলীয় ওপেন, ১১ গ্র্যান্ড স্ল্যাম হয়ে গেল জকোভিচের। টেনিসের ওপেন যুগে ও-ই সবচেয়ে বেশি বার চ্যাম্পিয়ন মেলবোর্নে। বয়স সবে আঠাশ। বড় চোটটোট না পেলে আরও অন্তত পাঁচ বছর টপ লেভেলে খেলবে। একটা সময় যেটা নাদালকে দেখাত যে, ফেডেরারের সবচেয়ে বেশি ১৭ গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ড ভেঙে দেবে, সেটা এখন স্বচ্ছন্দে জকোভিচ সম্পর্কে বলা যায়। একেই পেশাদার ট্যুরে বাকিদের চেয়ে জকোভিচ এখন এক ধাপ উপরের স্ট্যান্ডার্ডের টেনিসটা খেলছে। তার উপর সত্যিকারের রাইভালরি-ই বা কোথায় ওর? নাদাল এক রকম শেষ। ফেডেরার এখন ওর সামনে পড়লে দশ বারে সাড়ে ন’বার হারবে। মারে হারবে দশ বারে হয়তো আট বার।
গত বার ফরাসি ওপেন ফাইনালে ওয়ারিঙ্কা যেমন অবিশ্বাস্য খেলেছিল, তেমন অলৌকিক কিছু এ বারও কেউ না ঘটালে আমি নিশ্চিত, জকোভিচের কেরিয়ার-স্ল্যাম রোলাঁ গারোতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy