ইস্টবেঙ্গল নিয়ে লিখলেন সমরেশ চৌধুরি
গত কয়েক মাস ধরে আমরা সবাই একটা উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি। এই উৎকণ্ঠা কিন্তু সবার মধ্যেই আছে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব, যে সংস্থা টাকা দিচ্ছে সেই শ্রী সিমেন্ট, সমর্থক সবাই ক্লাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। কিন্তু এটা তো কাম্য ছিল না। তবে এটাও ঠিক যে একই ভুল বারবার করলে উৎকণ্ঠা তো বাড়বেই।
আমি কারও নাম নিতে চাই না। তবে ক্লাব যাঁরা চালাচ্ছেন, তাঁদের বলেছিলাম আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার কাজ করতে হবে। আমার মনে আছে ক্লাবের বেশ কয়েক জন আমার মতে সায় দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার মতামত কাজে প্রতিফলিত হয়নি। আর তাই আমার প্রিয় ক্লাব এখন সমস্যায় জর্জরিত।
শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে গত মরশুমে আলোচনা হওয়ার সময় ক্লাব কেন নিজেদের দাবিগুলি স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরল না। মাথায় আসছে না। কোয়েসের সঙ্গে ঝামেলার মতো ঘটনা এ বারও ঘটছে। ক্লাব পুরনো ভুল থেকে কোনও শিক্ষাই নেয়নি।
তবে এটার অন্য দিকও আছে। গত মরশুমে মোহনবাগান আইএসএল-এ নাম লেখানোয় হয়তো ইস্টবেঙ্গল অনেকটা তাড়াহুড়ো করে ফেলেছিলেন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা খেলবে, অথচ ইস্টবেঙ্গল খেলবে না, সেটার তো একটা চাপ ক্লাব যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁদের উপর ছিলই। কারণ দিনের শেষে ইস্টবেঙ্গল তো সমর্থক বেষ্টিত ক্লাব।
তবুও আমার মনে হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র এই সমস্যা থেকে ক্লাবকে বাঁচাতে পারেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীরে বাঙ্গাল ভাষায় কইতাসি, “আপনি এই সমস্যাটার সমাধান কইরা দেন। আমাগো ইস্টবেঙ্গল যাতে আইএসএল খ্যালতে পারে।”
একটা সূত্র মারফত চূড়ান্ত চুক্তিপত্র কিন্তু আমি দেখেছি। সেখানে ক্লাবে ঢোকার ব্যাপারে সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে। ক্লাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য শ্রী সিমেন্ট কর্তাদের অনুমতি নিতে হবে। ক্লাবের কার্যকরী কমিটির কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। এগুলি ক্লাব মানতে চাইছেন না। কিন্তু এখন এ সব ভেবে লাভ আছে? গত বছর প্রাথমিক চুক্তিতে সই করার সময় এই দিকগুলি নিয়ে ভেবে দেখা উচিত ছিল।
শ্রী সিমেন্ট বলছে প্রাথমিক চুক্তির উপর ভিত্তি করে ওরা গত মরসুমে ৫০ কোটি টাকা খরচা করেছে। ক্লাব বলছে শ্রী সিমেন্ট ৫০ কোটি টাকা খরচ যেমন করেছে, তেমনই ১০০ বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গেও ওরা জুড়ে গিয়েছে। এই বাদানুবাদের কোন শেষ নেই। আরও একটা কথা মনে রাখা উচিত, গত বছর থেকে কোভিড পরিস্থিতির জন্য সবাই আর্থিক দিক থেকে নাজেহাল। তাই চাইলেই কিন্তু ফের নতুন কাউকে এনে আইএসএল খেলা সম্ভব নয়। তাছাড়া এফএসডিএল এ বার সেই সময় ক্লাবকে দেবে বলেও মনে হয় না।
এই সব কারণে কিন্তু দেশে-বিদেশে ক্লাবের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সেটাও কিন্তু দুই পক্ষকে মাথায় রাখতে হবে। অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ কি?’ সত্যি বলতে উত্তর আমার কাছে নেই। এর মধ্যে আবার একদল সমর্থক প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুলিশের কাছে লাঠি খেয়েছে। আমার মতে, যা একেবারেই কাম্য ছিল না। আমার খুব অসহায় লেগেছে। কষ্ট পেয়েছি। সমর্থকদেরও বলি, ঘেরাওয়ের বদলে আলোচনা করে ব্যাপারটা সমাধান করা যেত না? সমর্থকরা শুধু ক্লাবকে ফুটবল খেলতে দেখতে চায়। সেটা হচ্ছে না বলেই এত সমস্যা।
(প্রাক্তন ফুটবলার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy