১০০ মিটারের প্রথম রাউন্ডে শাকারি রিচার্ডসন। ছবি: রয়টার্স।
বিশ্বের দ্রুততমা মহিলা কে, তা ঠিক হয়ে যাবে শনিবারই। প্যারিস অলিম্পিক্সে এ দিনই রয়েছে মহিলাদের ১০০ মিটারের ফাইনাল। অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরবেন আমেরিকার শাকারি রিচার্ডসন, না কি বিদায় নেওয়ার আগে এক বার শেষ কামড় দিয়ে জামাইকার জাত্যাভিমান ধরে রাখতে পারবেন শেলি অ্যান ফ্রেজ়ার প্রাইস? দু’জনকে টপকে কালো ঘোড়া হিসাবে কি উঠে আসতে পারেন অন্য কেউ? সব উত্তরই পাওয়া যাবে শনিবার রাতে।
টোকিয়ো অলিম্পিক্সের আগে আমেরিকার ট্রায়ালে রেকর্ড সময় করে যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন শাকারি। কিন্তু গাঁজা সেবন করার অপরাধে তাঁকে নির্বাসিত হতে হয়। টোকিয়োয় সোনা গলায় ঝোলানোর স্বপ্নপূরণ হয়নি। সেই ঘটনার পর কার্যত খেলাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন শাকারি। পরের বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নামেননি।
আবার ফিরেই আসেননি, একের পর এক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সোনা জিতে নিজেকে পৃথিবীর দ্রুততমা মহিলার যোগ্য করে তুলেছেন। ট্র্যাক ও ফিল্ডের অন্যতম সেরা উঠতি তারকা বলা হচ্ছে তাঁকে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমি মানুষটা ঠিক কেমন, এখন সেটাই আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আমি ছোটখাটো কিছুর জন্য খেলি না। জীবনে স্বপ্নটা সব সময় বড় রাখি।”
গত বছর ১০০ মিটারে ১০.৬৫ সেকেন্ড সময় করেছিলেন শাকারি। সেটাই তাঁর ব্যক্তিগত সেরা। শুক্রবার প্রথম রাউন্ডে ১০.৯৪ সেকেন্ড সময় করেছেন। তাঁর আগে আরও তিন জন রয়েছেন। সেমিফাইনালে হয়তো শাকারির সময় আরও কিছুটা ভাল হতে পারে। অনেকেরই ধারণা, তিনি ফাইনালের জন্য সেরাটা তুলে রেখেছেন। নিজের ব্যক্তিগত সেরা সময়ও ভেঙে দিতে পারেন। সাধেই কি আর শাকারি বলেছেন, “আমি শুধু ফিরেই আসিনি, আরও শক্তিশালী হয়েছি।”
অলিম্পিক্সে আসার আগেই শাকারির বেশভূষা বদলে গিয়েছে। ঘন নীল চুলের বদলে ফিরে এসেছে কালো চুল। হাতে রেখেছেন বড় বড় নখ। শাকারির বড় নখে রয়েছে আমেরিকার পতাকা। স্যেন নদীর ধারে দাঁড়িয়ে সেই নখ-সমেত ছবিও তুলতে দেখা গিয়েছে। জানিয়েছেন, তাঁর ঠাকুমা, কাকিমারাই নখ এবং চুল যত্নে রাখতে সাহায্য করেন।
পাল্টানো রূপ নিয়ে তিনি বলেছেন, “নিজের সেরা ছন্দে দৌড়তে চাই। আমার রূপ সেটাই বলছে। স্বচ্ছ, তরতাজা এবং দ্রুত গতির। জীবনের যে অধ্যায়গুলো কাটিয়েছি তা আমাকে এই মুহূর্তের জন্যই তৈরি করেছে। এ বার আমি আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। একই সঙ্গে উত্তেজিত। গত তিন বছরে নিজেকে অনেক উন্নত করেছি। নিজেকে আরও ভাল ভাবে বুঝতে শিখেছি। খেলাধুলো, এই সম্মান, সবই আমার কাছে এক-একটা উপহার। যাঁরা আমাকে সমর্থন করেন, তাঁদের কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই।”
১০০ মিটারের ফাইনালে স্বদেশি দুই সতীর্থ মেলিসা জেফারসন এবং টোয়ানিশা টেরিকে পাচ্ছেন শাকারি। প্রত্যেকে একসঙ্গেই অনুশীলন করেন। তাঁদের নিয়ে শাকারি বলেছেন, “ওরা আমার বোনের মতো। আমৃত্যু ওদের ভালবাসব। ওরা আমাকে এতটাই সামনে ঠেলে এগিয়ে দিয়েছে যেটা কখনও ভাবতেই পারিনি। মানসিক ভাবে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।”
শাকারির স্বপ্ন ভাঙার অপেক্ষায় যিনি রয়েছেন, স্প্রিন্টে নামার তুলনায় তাঁর বয়সটা একটু বেশিই। ৩৭ বছরের ফ্রেজ়ার-প্রাইস নিজের শেষ অলিম্পিক্সে সোনা জয়ের লক্ষ্যেই শুধু নামবেন না, তাঁর কাঁধে রয়েছে মহিলাদের স্প্রিন্টে জামাইকার মশাল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভারও। গত দু’বারের সোনাজয়ী এলাইনি থমসন-হেরা চোটের কারণে অনেক আগেই অলিম্পিক্স থেকে নাম তুলে নিয়েছিলেন। আর এক জামাইকান শেরিকা জ্যাকসন কিছু দিন আগেই জানান, নিজের পছন্দের ২০০ মিটারে মনোযোগ দেওয়ার জন্য তিনি ১০০ মিটারে নামবেন না।
ফ্রেজ়ার-প্রাইসকে এক সময় বিশ্বের অন্যতম সেরা মহিলা স্প্রিন্টার বলা হত। ২০০৮ এবং ২০১২ অলিম্পিক্সে সোনা দিতেছেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পাঁচ বারের সোনাজয়ী। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সে, পেশাদার জীবনের সায়াহ্নে এসে কি এক টগবগে তরুণীর বিরুদ্ধে পাল্লা দেওয়া সম্ভব? সে যতই প্রথম রাউন্ডে শাকারির থেকে .০২ সেকেন্ডে এগিয়ে থাকুন না কেন।
তবে ফ্রেজ়ার-প্রাইস আত্মবিশ্বাসী। বলেছেন, “মনে রাখবেন, এটাই আমার শেষ অলিম্পিক্স। টানা পাঁচটা অলিম্পিক্সে খেলছি, এটা ভাবতেই কেমন অবাক লাগছে। নিজের অভিজ্ঞতার উপর ভরসা রাখছি। ট্র্যাকে নামলেই অন্য ধরনের অনুভূতি হয়। প্রতি বার নিজের সেরাটা দিয়েছি। এ বারও তার অন্যথা হবে না।”
এ বছর মাত্র দু’টি প্রতিযোগিতা এবং চারটি রেসে দৌড়েছেন ফ্রেজ়ার-প্রাইস। এ বছরের সেরা সময় ১০.৯১ সেকেন্ড। সেখানে রিচার্ডসনের সেরা সময় ১০.৭১ সেকেন্ড। তবে আগেও কোনও দিন কোনও টক্কর থেকে পিছিয়ে থাকেননি ফ্রেজ়ার-প্রাইস। এ বারও তিনি পিছিয়ে নেই।
মহিলাদের ১০০ মিটারের লড়াই কি শুধু এই দু’জনকে ঘিরে? একেবারেই নয়। শনিবার স্তাদ দ্য ফ্রাঁসে নতুন কারওর গলায় সোনার পদক উঠলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রথম রাউন্ডে সবচেয়ে কম, ১০.৮৭ সেকেন্ড সময় করেছেন আইভরি কোস্টের মারি জোস তা লো-স্মিথ। রয়েছেন জুলিয়েন আলফ্রেড। ২৩ বছরের আমেরিকার স্প্রিন্টারের সেরা সময় ১০.৭৮। গত বছরের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পঞ্চম স্থানে শেষ করেছিলেন। উঠে এসেছেন সেন্ট লুসিয়ার মতো দ্বীপ থেকে। মোনাকো ডায়মন্ড লিগে জিতেছেন। ইউরোপ থেকে টক্কর দিতে পারেন ব্রিটেনের ডিনা অ্যাশার-স্মিথ এবং সুইৎজারল্যান্ডের মুজিঙ্গা কামবুনজি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy