শিরোনামে: পাকিস্তানকে অ্যাথলেটিক্সে প্রথম সোনা এনে দেওয়া নাদিমকে ঘিরে এখন চর্চা তুঙ্গে। ছবি রয়টার্স।
পানিপথের খান্দ্রা গ্রাম নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল টোকিয়ো অলিম্পিক্সের সময়। প্যারিসে তেমনই সবাই ছুটছে জানার জন্য যে, মিয়া চানুর খানেওয়াল গ্রামটা কোথায়? অলিম্পিক্সে পাকিস্তানকে প্রথম ব্যক্তিগত সোনা দেওয়া আর্শাদ নাদিম যে এই গ্রাম থেকেই উঠে এসেছেন।
লাহোর থেকে প্রায় ২৫০-৩০০ কিলোমিটার দূরে মিয়া চানু। সেখান থেকেও আরও ভিতরে যেতে হবে নাদিমের বাড়ি পৌঁছতে গেলে। এই গ্রাম থেকে কখনও কোনও বড় ক্রীড়াবিদ বেরিয়েছে? পাকিস্তানে ফোন করে খোঁজ নিতে গিয়ে একটি নাম পাওয়া গেল। ওয়াকার ইউনিস। তবে তিনি এই গ্রামের নন। কাছাকাছি বলা যেতে পারে। নাদিম নিজেও তো ক্রিকেট নিয়েই স্বপ্ন দেখেছিলেন। ওয়াকার ইউনিসের মতোই ফাস্ট বোলার ছিলেন। শোয়েব আখতারের মতোই নাকি তাঁর বলের গতি ছিল, এমন কথাও বলেন কেউ কেউ।
কিন্তু বাবা চাননি, ছেলে ক্রিকেটে যাক। কারণটাও বেশ অদ্ভুত। ‘‘ক্রিকেটে তুই ভাল করলেও অন্যরা খারাপ খেললে হেরে যেতে পারিস। তার চেয়ে ব্যক্তিগত খেলায় যা, যেখানে তুই নিজের ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারবি,’’ পরামর্শ ছিল বাবার। অভাবের সংসারে অনেক দিন খাওয়া জোটে না যে ছেলের, সে কোন খেলাতেই বা যাবে? অ্যাথলেটিক্স খুবই খরুচে খেলা। সরঞ্জাম কেনার জন্য অনেক টাকা লাগে, খাওয়াদাওয়া করে শরীর বানাতে হয়। তার খরচা আছে। কোচের কাছে তালিম নিতে যেতে হবে। কে জোগাবে সেই অর্থ? নাদিমের সম্বল বলতে ছিল শুধু উচ্চতা। বাকি সবই তৈরি করতে হয়েছে। গ্রামের এক হোটেল ব্যবসায়ী অ্যাথলেটিক্স ভালবাসতেন। নিজে উদ্যোগ নিয়ে খুদে প্রতিভাদের খরচ বহন করতেন। তিনিই নাদিমকে স্পনসর করতে রাজি হন। ছিন্নভিন্ন, জং ধরা, রাস্তার এক কোণে পড়ে থাকা একটি জ্যাভলিন নিয়ে যাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল, কে জানত তিনি একদিন অলিম্পিক্সে রেকর্ড গড়ে সোনা জিতবেন। কল্পকাহিনিও তো হার মানবে। আর সোনা জিতেও কত বিনয়ী। বললেন, ‘‘দেশবাসীর জন্য এই সোনা জিতলাম। সকলের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।’’
কোথায় সমর্থন? শুনলে বিশ্বাস হবে যে, প্যারিস অলিম্পিক্সের আগেই জ্যাভলিন পাল্টাতে চেয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হয়েছিল নাদিমকে? সমাজমাধ্যমে পর্যন্ত লিখেছিলেন, জ্যাভলিন দরকার তাঁর। অলিম্পিক্সের ইতিহাসে অনেক রোমহর্ষক কাহিনি রয়েছে। অনেক রূপকথা তৈরি হয়েছে। কিন্তু রেকর্ড করা এক চ্যাম্পিয়ন জ্যাভলিন ভিক্ষা করছেন প্রতিযোগিতায় নামার জন্য? শোনা যায়নি। তখন এমনকি নীরজ চোপড়া পর্যন্ত তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, আর্শাদের এই অবহেলা প্রাপ্য নয়। শেষ পর্যন্ত সরকার রাজি হয় তাঁকে নতুন জ্যাভলিন কিনে দিতে। পাক সরকার টোকিয়োয় তাঁর যাত্রার পয়সাটুকুও দেয়নি। অনেক দরবারের পরে নতুন জ্যাভলিন পেলেও নাদিমের অন্য একটি অনুরোধ বাতিল করে দেওয়া হয়। অলিম্পিক্সের আগেই প্যারিসে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছিলেন আর্শাদ। তখন তিনি আর্জি জানান, এখানেই পনেরো দিনের জন্য থাকতে দেওয়া হোক তাঁকে। যাতে অলিম্পিক্সের জন্য ভাল ভাবে তৈরি করতে পারেন নিজেকে। তখন তাঁকে বলা হয়েছিল, প্যারিসে থাকার দরকার নেই। দেশে ফিরে এসেই অনুশীলন করো।
সব উপেক্ষার জবাব নাদিম দিয়ে গেলেন বৃহস্পতিবার রাতে স্তাদ দে ফ্রান্সে। দুটি সেরা থ্রো ছিল ৯২.৯৭ ও ৯১.৭৯ মিটার। তার পরেই রাতারাতি পাল্টে গেল নাদিমের পৃথিবী। পাকিস্তানে একের পর এক পুরস্কার ঘোষণা হচ্ছে তাঁর নামে। ক্রিকেটার আহমেদ শেহজাদ আর্থিক পুরস্কার দেবেন বলেছেন। বিখ্যাত গায়ক বলেছেন,সোনাজয়ীকে নগদ পুরস্কার দেবেন। সরকার থেকে তো একের পর এক ঘোষণা চলছেই। এমনকি, অলিম্পিক্সের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আগেই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার হিড়িক উঠেছে। দেশের মানুষ তাদের নায়ককে বরণ করতে চায়। বিমানবন্দর থেকেই হুডখোলা বাসে করে তাঁকে ঘোরানো হবে। নানা বাণিজ্যিক সংস্থা ছুটতে শুরু করেছে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য।
ব্রাত্য, উপেক্ষিত থেকে রাতারাতি কোটিপতি হতে চলেছেনআর্শাদ নাদিম!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy