সফল: রবিনসনের ছন্দ ভরসা দিচ্ছে ইংল্যান্ডকে। ফাইল চিত্র।
চোটের কারণে প্রথম একাদশের পেস বোলিং আক্রমণের বেশির ভাগ অস্ত্রকেই চলতি সিরিজ়ে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। যে কারণে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, জিমি অ্যান্ডারসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় শিবিরে লড়াইটা নিয়ে যাবেন কে?
এই প্রশ্নের জবাব হেডিংলে টেস্টের পরে পেয়ে গিয়েছে ইংল্যান্ড। পেস আক্রমণের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এসেছেন এক ‘অফস্পিনার’। শুধু এগিয়ে আসাই নয়, সিরিজ়ে উইকেট প্রাপ্তির বিচারে অ্যান্ডারসনকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন এই বোলার। যাঁর নাম— অলি রবিনসন! অ্যান্ডারসনের যেখানে তিন টেস্টে ১৩ উইকেট, রবিনসনের শিকারের সংখ্যা ১৬।
গতি, সুইং, উচ্চতার মিশেলে নতুন এবং পুরনো বলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে দিয়েছেন ২৭ বছর বয়সি এই পেসার। অথচ ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত অফস্পিনার হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। তার চেয়েও বড় কথা, এখনও রবিনসনের অফস্পিন কাজে লাগায় ইংল্যান্ডের দল পরিচালন সমিতি। যেমন লাগিয়েছিল গত ভারত সফরে!
কী ভাবে? ওই সময় ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে যুক্ত থাকা এক সদস্যের মুখ থেকে শোনা গেল সেই ‘অফস্পিনার’ রবিনসনের কাহিনি। বিরাট কোহালিদের বিরুদ্ধে ভারতে খেলতে এসে তখন অফস্পিনার আর অশ্বিনের ঘূর্ণির সামনে অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করছেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। একে তো বল ঘুরছে, তার উপরে ছ’ফুটের বেশি উচ্চতা হওয়ার কারণে অশ্বিনের বলের বাউন্সের সঙ্গে মানাতে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি যে উচ্চতা থেকে বল ছাড়ছেন (রিলিজ় পয়েন্ট) অশ্বিন, তাও সমস্যায় ফেলে দেয় রুটদের। ওই সময় ‘অফস্পিনার’ রবিনসনের সাহায্য নিয়েছিল ইংল্যান্ড।
ওই সফরে ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে থাকা এক প্রশাসনিক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলছিলেন, ‘‘রবিনসন টেস্ট দলে ছিল না। রিজ়ার্ভ বোলার হিসেবে ভারত সফরে এসেছিল। কোভিডের কারণে আমরা বড় দল নিয়েই এসেছিলাম। প্রথম সারির কয়েক জন পেসার ছিটকে গেলে যাতে সমস্যা না হয়, সেই ভাবনা থেকেই ওদের আনা হয়েছিল।’’
টেস্ট সে বার খেলা হয়নি রবিনসনের, কিন্তু নেট-স্পিনার হিসেবে রুটদের যতটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন। অশ্বিনের উচ্চতা ৬ ফুট এক ইঞ্চি, রবিনসনের ছ’ফুট পাঁচ। অন্য দিকে, ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে থাকা অফস্পিনার, ডম বেসের উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট ছ’ইঞ্চি। যে কারণে রবিনসনের উপরেই ভরসা করতে হয়েছিল জো রুটদের। ইংল্যান্ড ক্রিকেটমহলে খোঁজ নিয়ে এও জানা গিয়েছে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও বেশ কিছু উইকেট অফস্পিন করেই পেয়েছেন রবিনসন।
নেট-স্পিনার হিসেবে ভারত সফরে রুটদের বিশেষ উপকার করতে পারেননি রবিনসন, কিন্তু নতুন বল হাতে এই সিরিজে রুটের অন্যতম সেরা অস্ত্র হয়ে উঠেছেন তিনি। কেন এত ভয়ঙ্কর লাগছে রবিনসনকে? মঙ্গলবার লন্ডন থেকে ভিডিয়ো কলে আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে ইংল্যান্ড দলের অন্যতম কোচ পল কলিংউড বলছিলেন, ‘‘দলের বোলিং আক্রমণে একটা বৈচিত্র এনে দিয়েছে রবিনসন। ওর তিনটে ইতিবাচক দিকের কথা বলতেই হবে। এক, বলটা অনেক উঁচু থেকে ছাড়ে। দুই, ক্রিজ়ের কোণগুলোকে খুব ভাল ব্যবহার করে। তিন, বলটাকে সুইং করাতে পারে। আর সেটাই হল আসল কথা।’’
রবিনসনকে খুব কাছ থেকে দেখা কলিংউড আরও বলছিলেন, ‘‘ও বলটা ছাড়ে দু’মিটারের (প্রায় সাড়ে ছ’ফুট) বেশি উচ্চতা থেকে। ওই উচ্চতা থেকে বল পড়লে একটা বাড়তি বাউন্স পাওয়া যায়। যা ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলে।’’ এই তরুণ পেসারের আরও একটা দিকের কথা তুলে ধরেছেন কলিংউড। বলেছেন, ‘‘এটা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। রবিনসনের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাটা খুব ভাল। ও সব সময় ভেবে চলেছে, এক জন ব্যাটসম্যানকে কী ভাবে আউট করবে।’’
রবিনসনের প্রতিভা যতটা, বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার ‘ক্ষমতা’ও প্রায় ততটাই। বর্ণবিদ্বেষী টুইট করে নির্বাসনে যেতে হয়েছিল কিছু দিন আগে। তারও আগে, ২০১৪ সালে, ইয়র্কশায়ারে খেলার সুযোগ পেয়েও শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বাদ পড়েছিলেন। এর পরে কিছু দিনের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন রবিনসন। সেখানে সিডনিতে ক্লাব ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। খেলেছিলেন জস হেজ়লউডের সঙ্গেও। শোনা যায়, হেজ়লউডের সংস্পর্শে আসার পরে অস্ট্রেলীয় পেসারের অ্যাকশনের প্রভাব অনেকটাই পড়ে রবিনসনের উপরে। কলিংউড অবশ্য এখনই দুই পেসারের তুলনায় যেতে চাইছেন না। ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করা অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘আমি তুলনায় যেতে চাই না। রবিনসনের ছন্দময় অ্যাকশনটাও দারুণ। আর অস্ট্রেলিয়ায় খেলার ফলে ডিউকস বলের পাশাপাশি কোকাবুরা বলটাও সুইং করাতে পারে রবিনসন। যেটা হল আসল প্রাপ্তি।’’
ইংল্যান্ডকে ভারত সফরে হারিয়েছিলেন এক অফস্পিনার। এ বার ভারতকেও না হারিয়ে দেন ইংল্যান্ডের আর এক ‘অফস্পিনার’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy