গোলিয়াথ বনাম ডেভিড!
স্পেন বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা শক্তি। এক বার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। তিন বার ইউরোপ সেরা।
বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে নিজারকে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। নিজার মানেই ভেসে ওঠে যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশের ছবি। অথচ অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে তারাই ঘুম কেড়ে নিয়েছে স্পেনের। অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরোপ সেরা স্পেন কোচিতে যুব বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে হেরে রীতিমতো বিধ্বস্ত। তার জেরেই নিজারের বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচণ ম্যাচের আগে চরম সতর্কতা শিবির জুড়ে। কোচ থেকে ফুটবলার— অজানা আতঙ্কে ভুগছে। অথচ হওয়ার কথা ছিল ঠিক উল্টোটাই। প্রতিপক্ষ নিজার এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনও ট্রফি জিততে পারেনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সব সময়ই মৃত্যুর আতঙ্ক। সেই সঙ্গে প্রবল দারিদ্র ও অশিক্ষা। সোমবার সকালেও পানামপিল্লাই নগরের মাঠে প্রস্তুতি নিতে এসেছিল আবেল রুইস-রা। কিন্তু ওয়ার্ম আপ শেষ হওয়ার পরেই স্পেনের এক সাপোর্ট স্টাফ জানিয়ে দিলেন—অনুশীলন দেখা যাবে না। এখানেই শেষ নয়। ফিফার এক আধিকারিককে দিয়েও এই বার্তা দেওয়া হল। পাশাপাশি জানিয়ে দেওয়া হল যে, কোচ সান্তিয়াগো দিনেয়া স্যাঞ্চেজ ও ফুটবলাররা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না। কেন? স্পেনের প্রতিনিধির জবাব, ‘‘নিজার ম্যাচের আগে কেউ মনঃসংযোগ নষ্ট করতে রাজি নন।’’ জানা গিয়েছে, এ দিনের অনুশীলনে স্ট্রাইকারদের ছন্দে ফেরাতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন সান্তিয়াগো। প্রথম ম্যাচে মিডফিল্ডাররা দুর্দান্ত খেললেও ব্যর্থ স্ট্রাইকাররা। ম্যাচের পরে তা বলেও ফেলেছিলেন স্প্যানিশ কোচ। নিজার ম্যাচে তার পুনরাবৃত্তি চান না তিনি। তবে কেউ যদি নিজার বধের পরিকল্পনা দেখেন ফেলে, তাই এত গোপনীয়তা।
পরিস্থিতি অবশ্য এতটা জটিল হতো না, যদি স্পেন প্রথম ম্যাচে হার বাঁচাতে সফল হতো। আর নাইজার উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে না জিতত। কিন্তু পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি উত্তর কোরিয়া-কে হারিয়ে দেওয়ায় ‘ডি’ গ্রুপের ছবিটাই বদলে গিয়েছে। এই মুহূর্তে ব্রাজিল ও নিজার দুই দলের পয়েন্ট তিন। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় অবশ্য এক নম্বরে ফুটবল সম্রাটের দেশ। স্পেন ও উত্তর কোরিয়ার পয়েন্ট শূন্য। গ্রুপের প্রথম দু’টি দল সরাসরি শেষ ষোলোয় পৌঁছবে। তৃতীয় স্থানে থাকলেও অবশ্য প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা সম্ভব। তবে সেটা জটিল অঙ্ক। সেক্ষেত্রে ছ’টি গ্রুপের সেরা চারটি দল শেষ ষোলোয় খেলবে। স্পেন তাই মরিয়া আজ, মঙ্গলবার কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে নিজার-কে হারিয়ে শেষ ষোলোয় খেলার সম্ভবনা উজ্জ্বল করতে।
আরও পড়ুন: আজ কোরিয়ার রক্ষণাত্মক ছকই চিন্তা ব্রাজিলের
ঠিক উল্টো ছবি নিজার শিবিরে। আরব সাগরের তীরে কোচির অন্যতম আকর্ষণ স্পাইস মার্কেট (মশলার বাজার)। যুব বিশ্বকাপের মধ্যেও নিজার দলের সদস্যরা বাজারে ঘুরে ঘুরে মশলা কিনছেন। ২০১০ সালে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিরুদ্ধে ম্যাচ চব্বিশ ঘণ্টা পরেই। অথচ পুরো দলটাই আশ্চর্যরকম ভাবে চাপমুক্ত। নিজার কোচ তিয়েমোগো সোউমাইলা কোচিতে পা দিয়েই জানিয়েছিলেন, এই বিশ্বকাপ থেকে তাঁরা শিখতে এসেছেন। ব্রাজিল-স্পেনের মতো বিশ্বের সেরা দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলে নিজেদের উন্নতি করাই ফুটবলারদের প্রধান লক্ষ্য। আর ফুটবলের মধ্যে দিয়েই তাঁরা মুক্তি পথ খোঁজেন।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন নাইজিরিয়াকে গত বছরই আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্সের যোগ্যতা অর্জন পর্ব থেকে ছিটকে দিয়েছে নিজার। কোচিতে গত শনিবার উত্তর কোরিয়া-কে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপে অভিযান শুরু করার পরে উচ্ছ্বসিত নিজার কোচ বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচেই জিতলাম। এর চেয়ে সেরা প্রাপ্তি আর কিছুই হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy