ক্ষুব্ধ: পিছনে বিয়ের সময়ের ছবি। তার সামনে বসে একের পর এক অভিযোগ করে চলেছেন মহম্মদ শামির স্ত্রী হাসিন জাহান। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মহম্মদ শামি-কে নিয়ে বুধবার উত্তাল হল ভারতীয় ক্রিকেট। তাঁর স্ত্রী গুরুতর অভিযোগ করছেন জানাজানি হওয়ার পরে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলেও শুরু হয়ে যায় আলোচনা। তারই জেরে ক্রিকেটারদের জন্য তৈরি নতুন চুক্তিতে আপাতত রাখা হয়নি ভারতীয় দলের পেসারকে।
শোনা যাচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বোর্ডের পর্যবেক্ষক দলের প্রধান বিনোদ রাই। প্রাক্তন ক্যাগ শীর্ষ কর্তা মনে করেছেন, স্ত্রীর গুরুতর অভিযোগের পরে শামি-কে বোর্ডের চুক্তিতে স্থান দিলে অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠতে পারত। বিশেষ করে শামির স্ত্রী যখন ভারতীয় পেসারের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগও করেছেন।
বিনোদ রাই-এর নেতৃত্বেই ঠিক হয়, শামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যদি তাঁর স্ত্রী ফিরিয়ে নেন বা তিনি যদি নিষ্কলঙ্ক প্রমাণিত হন, তা হলেই তাঁকে চুক্তিতে ঢুকিয়ে নেওয়া হবে। সেই কারণে, কেউ বলছেন না যে, শামি-কে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁর চুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছে।
সরকারি ভাবে কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স-এর পক্ষ থেকে কেউ মুখ খুলতে না চাইলেও, জানা গিয়েছে যে, চুক্তি নিয়ে সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছিল মঙ্গলবারই। কিন্তু গত কাল তালিকা ঘোষণা করেনি বোর্ড শামিকে নিয়ে তাঁর স্ত্রীর আনা অভিযোগের জেরেই। জরুরি বৈঠক করে সিওএ ঠিক করে, বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখা হোক, ঘটনা কোন দিকে মোড় নেয়। কিন্তু বুধবার ঘটনা থিতিয়ে পড়ার বদলে আরও বেড়ে গিয়েছে। শামির স্ত্রীর হাসিন জাহান লালবাজারে গিয়েছেন অভিযোগ জানাতে, এটা জানার পরেই বিনোদ রাই-এর নেতৃত্বে সিওএ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, আপাতত শামি-কে চুক্তির বাইরে রাখা হবে।
আরও একটা ব্যাপার রয়েছে। যে হেতু শামি সব ধরনের ক্রিকেটেই দলে থাকেন, সেই কারণে বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মা-দের মতো তাঁকে ‘এ প্লাস’ বিভাগে রাখার কথা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে তাঁর পদোন্নতিই ঘটতে যাচ্ছিল। কিন্তু স্ত্রীর আনা গুরুতর অভিযোগ নিয়ে যখন সারা দেশে ঝড় উঠেছে, সেই সময়ে তাঁর পদোন্নতি ঠিক দেখাবে কি না, সেই প্রশ্নও ছিল।
যদিও বোর্ডের এই নতুন চুক্তি এবং তাতে শামির না থাকা নিয়ে চূড়ান্ত নাটকই হয়ে গেল। বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত সচিব অমিতাভ চৌধুরী-কে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার জানতে চায়, শামি-কে কেন বাইরে রাখা হয়েছে? অমিতাভের জবাব, ‘‘আমি কিছুই জানি না চুক্তি নিয়ে কী হয়েছে। আমার সঙ্গে কেউ আলোচনা করেনি। আমার মনে হয়, বোর্ডের কারও সঙ্গেই আলোচনা না করে চুক্তিপত্র ঠিক করে ফেলা হল।’’ বোর্ডের অন্যান্য কর্তাদের মধ্যেও এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তাঁদের দাবি, সিওএ কারও সঙ্গে কথা না বলেই চুক্তিপত্র ঠিক করেছে।
জুটি: তখন সুখের সময়। হাসিন এবং শামি। ফাইল চিত্র
সিওএ-এর তরফে কেউ সরকারি ভাবে মুখ খোলেননি। তবে শোনা যাচ্ছে ঘনিষ্ঠ মহলে বিনোদ রাই এবং তাঁর সতীর্থরা নাকি জানিয়েছেন, লোঢা কমিটির সুপারিশ বলবৎ করার কোনও লক্ষণই কেউ দেখাচ্ছেন না। ভারপ্রাপ্ত সচিব বা কোষাধ্যক্ষের পদে থাকার সময়সীমাও পেরিয়ে গিয়েছে। এখন তা-ই তাঁদের ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। কয়েকটি উদাহরণও তাঁরা তুলে ধরেছেন ঘনিষ্ঠ মহলে। যেমন, অম্বাড্সমান নিয়োগ করতে বললেও বোর্ডের কর্তারা এখনও তা করেননি।
কাউকে কাউকে সিওএ প্রতিনিধিরা বলেছেন যে, শামির ঘটনা আদতে ‘এথিক্স অফিসার’ বা অম্বাড্সমানের হাতেই যাওয়া উচিত ছিল। যে-হেতু এই ঘটনার সঙ্গে নৈতিকতার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু লোঢা কমিটির সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও বোর্ডে এখনও সে ররম কোনও পদাধিকারী নেই। বাধ্য হয়ে তাই বিনোদ রাই-দের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ক্রিকেটারদের চুক্তিও ফুরিয়ে গিয়েছিল অনেক দিন আগে। নবীকরণ না হয়ে পড়ে ছিল। এর মধ্যে কোনও ক্রিকেটার আহত হলে বীমার আওতাতেও পড়তেন না। সেই কারণে চুক্তি নিয়ে আর বিলম্ব করতে চায়নি সিওএ।
শোনা যাচ্ছে, দু’এক দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে স্টেটাস রিপোর্টও জমা দেবেন বিনোদ রাই। তাতে এমন কথা তিনি লিখতে পারেন যে, বোর্ডে এবং বিভিন্ন রাজ্য সংস্থায় যাঁদের তিন বছর পদে থাকা হয়ে গিয়েছে, লোঢা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তাঁদের এ বার সরে যেতে বলা হোক। বোর্ডের মধ্যে কারও কারও প্রশ্ন— তিন বছর হয়ে গিয়েছে বলে সচিব অমিতাভের সঙ্গে আলোচনা করাও কি বন্ধ হয়ে গেল?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy