কারিগর: নতুন বলে তিন শিকার শার্দূলের। এপি
সিডনিতে সোমবার শেষ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজ়িল্যান্ডের তৃতীয় টেস্ট। যে ম্যাচে দুই ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার নেথান লায়ন পাঁচটি করে উইকেট পেলেও দ্বিশতরান করায় ম্যাচ সেরা মার্নাস লাবুশানে। আসলে বর্তমান ক্রিকেট বড়ই ব্যাটসম্যান নির্ভর। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তো আরও বেশি দাপট ব্যাটসম্যানদের।
তা সত্ত্বেও মঙ্গলবার ইনদওরের হোলকার স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারতের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ সাত উইকেটে জয়ের নায়ক বোলাররাই। শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে শ্রীলঙ্কা করেছিল ১৪২ রান। জবাবে ৩ উইকেটে ১৪৪ রান তুলে সাত উইকেটে ম্যাচ জিতে সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেল ভারত।
ওপেনার কে এল রাহুল ৩২ বলে দুর্দান্ত ৪৫ রান করেছে। অপর ওপেনার শিখর ধওয়নও ২৯ বলে ৩২ রান করল। কিন্তু রাহুলের খেলায় যে আত্মবিশ্বাস ছিল, তা দেখলাম না শিখরের ইনিংসে। ওর ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না। ছক্কা মেরে জয়সূচক রান করা বিরাট কোহালিও (৩০ বলে ১৭) অনবদ্য। কিন্তু আমার মতে ম্যাচের নায়ক নবদীপ সাইনিরাই।
শ্রীলঙ্কার ওপেনার দানুষ্কা গুণতিলক বোল্ড হল নবদীপের এমন একটা বলে, যার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪৭.৫ কিলোমিটার। ৭.৪ ওভারে এটাই ছিল ভারতীয়দের সবচেয়ে দ্রুততম বল। গতিময় এই ইয়র্কারের উত্তর জানা ছিল না গুণতিলকের। ১৪.৫ ওভারে ভানুকা রাজাপক্ষ আউট হল সেই নবদীপের অসাধারণ এক বাউন্সারে। যে বলের গতি ঘণ্টায় ১৪৪ কিলোমিটারের আশেপাশে।
চার ওভার বল করে ১৮ রানে দুই উইকেট নিল দিল্লির এই পেসার। হোলকার স্টেডিয়ামের এই ২২ গজ ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য। সেখানেই বল হাতে প্রায় আগুন ছোটাল ম্যাচ সেরা নবদীপ। ওর করা ২৪টা বলের মধ্যে ১৩টাই ‘ডট বল’। ‘নবদীপ এক্সপ্রেস’ ভারতীয় ক্রিকেটের নয়া অস্ত্র হতে চলেছে আগামী দিনে। যত সময় যাচ্ছে, তত ক্ষুরধার হচ্ছে দিল্লির এই ছেলেটি। এ দিন দেখলাম বোলিং অ্যাকশনে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে ও। ছেলেটার বড় গুণ দুরন্ত গতির সঙ্গে লাইন ও লেংথে নিখুঁত থাকে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস নবদীপ টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি আরও বেশি সফল হবে টেস্ট ম্যাচে। ছেলেটার ‘দম’ আছে। বিশ্বত্রাস পেসারদের কারও লাইন ও লেংথ দুর্দান্ত। কেউ ভাল বল নড়চড়া করাতে পারে। কিন্তু বিশ্বের সব বিখ্যাত ব্যাটসম্যানই নবদীপের মতো এক্সপ্রেস গতির ব্যাটসম্যানদের মোকাবিলা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে। আর এখানেই নবদীপ তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছনে ফেলবে। যে ইনদওরের ২২ গজে এ রকম গতি, লাইন ও লেংথে নির্ভুল থাকতে পারে, সে অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটে বিপক্ষের ত্রাস হবেই।
নবদীপের মতোই এ দিন দেখার অপেক্ষায় ছিলাম দীর্ঘদিন পরে ভারতীয় দলে ফিরে যশপ্রীত বুমরা (১-৩২) কেমন বল করে। আমার মনে হল, দীর্ঘদিন ম্যাচ না খেলায় ওর ফিটনেসে সমস্যা রয়েছে। ভারতীয় দলের উচিত ওকে আরও বেশি ম্যাচ খেলানো। বরং নবদীপের মতোই এ দিন নজর কাড়ল শার্দূল ঠাকুরও (৩-২৩)। পাওয়ার প্লে-র সময় দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে শার্দূল ভাল সুইং করাচ্ছিল। শেষ ওভারেই তিন উইকেট পেয়েছে ও। যার মধ্যে দুই উইকেট শেষ দুই বলে। পুণেতে যদি প্রথম বলেই উইকেট পায়, তা হলে হ্যাটট্রিক করে ফেলবে ও। শার্দূলের বলে বৈচিত্র প্রচুর। গতির হেরফের করে ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলছিল। তিনটি উইকেট পেল নাকল বল, লেংথ বল ও আগুনে গতি ব্যবহার করে।
অক্টোবর মাসে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামি ও যশপ্রীত বুমরা যাবেই। আমার মতে, এ দিন নবদীপ যা বল করল, তাতে ওর অস্ট্রেলিয়া যাওয়া পাকা হয়ে গেল। চাপ বাড়ল চোটের কারণে দলের বাইরে থাকা দীপক চাহার, খলিল আহমেদদের। একই সঙ্গে নির্বাচকদেরও।
ভাল বল করল ভারতীয় স্পিনারেরাও। বিশেষ করে ওয়াশিংটন সুন্দরের (১-২৯) কথা বলতে হবে। এ দিন ও বেশির ভাগ বল উইকেটের কাছেই রেখেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ফিল্ডিংয়ের সময়ে সহজ ক্যাচ ধরতে না পেরে সমালোচনার মুখে পড়েছিল। কিন্তু সেই জায়গাটা শুধরে নিয়েছে ও। সব শেষে কুলদীপ যাদব। ১২তম ওভারে ও প্রথম বল করতে আসতেই কুশল পেরেরা মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে ছক্কা মেরে দিয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় বলেই গুগলি। ওশাদা ফার্নান্দো আউট। এটাই কুলদীপের বিশেষত্ব।
এই শ্রীলঙ্কা দল নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। বেশির ভাগ অনভিজ্ঞ। তবে আবিষ্কা ফার্নান্দো নজর কাড়ল। ছেলেটা লম্বা দৌড়ের ঘোড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy