মিখাইল রোমানচুক। ছবি: টুইটার
টোকিয়ো অলিম্পিক্সে জিতেছিলেন জোড়া পদক। ইউক্রেনের অন্যতম সেরা সাঁতারু মিখাইল রোমানচুক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও অংশ নিয়েছেন। জীবনের সেরা সময় করে ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে জিতেছেন ব্রোঞ্জ। ২৫ বছরের এ হেন রোমানচুক একটুও শান্তিতে নেই। এতটাই অশান্ত তিনি যে প্রিয় বন্ধুকে খুন করে ফেলতে পারেন।
নির্বাসনের জন্য রাশিয়া এবং বেলারুশের সাঁতারুরা অংশ নিতে পারেননি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। রোমানচুকের প্রিয় বন্ধু এবং অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার ইগনি রেলভ। বহু প্রতিযোগিতায় একে অপরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। সেই রেলভকে দেখা গিয়েছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে মস্কোয় যুদ্ধের সমর্থনে এক মিছিলে। রোমানচুক বলেছেন, ‘‘ওকে দেখলে মাথা গরম হয়ে যেতে পারে। কী করব জানি না। ওকে মেরে ফেলার জন্য আমি প্রস্তুত। আমরা একটা সময় পর্যন্ত খুব ভাল বন্ধু ছিলাম। এখন সব বদলে গিয়েছে।’’
মন অশান্ত হওয়ার আরও একটি কারণ আছে। সেটি তাঁর বাবার জন্য। প্রিয় বন্ধু যখন রাশিয়ার যুদ্ধ নীতিকে সমর্থন করছেন, তখন বাবা লড়ছেন রুশ সেনার বিরুদ্ধে।
কেমন আছেন বাবা? কী অবস্থায় রয়েছেন তিনি? সঠিক ভাবে কিছুই জানেন না রোমানচুক। রাশিয়ার সামরিক অভিযান রুখে দেশকে রক্ষা করতে জীবন বাজি রেখে লড়াই করছেন রোমানচুকের সেনা আধিকারিক বাবা। যুদ্ধক্ষেত্রেই তাঁর কেটে যাচ্ছে দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিন।
জীবনের এই কঠিন সময় আরও সংযমী করেছে রোমানচুককে। তাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জেতার পরেও তেমন উচ্ছ্বাসে মাতেননি। তাঁর বাবা এক দিকে দেশকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করছেন, অন্য দিকে তিনি লড়াই করছেন ইউক্রেনের পতাকা আরও উপরে তুলে ধরতে।
বাবা কোথায় আছেন এখন? জানেন না রোমানচুক। বেশ কয়েক দিন ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি। শেষ বার যখন কথা হয়েছিল, সে সময় তাঁর বাবা ছিলেন চার দিক থেকে রুশ সেনার ঘিরে ফেলা এক জায়গায়।
রোমানচুক বলেছেন, ‘‘বাবা খুবই বিপজ্জনক একটা জায়গায় আছেন। ফোনে কথা বলতে পারছেন না। গোপন আস্তানায় রয়েছেন। ফোন করলেই রুশ সেনারা ওঁদের অবস্থান বুঝে ফেলতে পারে। পূর্ব ইউক্রেনের ওই জায়গাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া ওই জায়গা দখল করে নিলে সর্বনাশ হবে আমাদের।’’
বাবার সঙ্গে কি একদমই যোগাযোগ হচ্ছে না? রোমানচুক বলেছেন, ‘‘বাবা রোজ সকালে আমাকে ফোনে সুপ্রভাত লিখে পাঠান। তা থেকেই বুঝে নিতে হয় উনি ভাল আছেন।’’ বাবার মেসেজ দেখেই অনুশীলন করতেন প্রতিদিন। দেশকে বাঁচাতে রোমানচুক চেয়েছিলেন যুদ্ধে যেতে। বাধা দেন তাঁর বাবা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে বলেন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বলেন, ‘বিশ্বের সর্বত্র এখন আমাদের জাতীয় পতাকা তুলে ধরা দরকার। যত বেশি মানুষ আমাদের পতাকা দেখবে, তত বেশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরব হবে। এটাও একটা লড়াই। তুমি যেটা পার, সেটাই কর।’
রোমানচুকের বাবা ঠিক আছেন তো? প্রতিটি স্ট্রোক, প্রতিটি রিটার্ন ভল্ট সুইমিং পুলের জলকে যে ভাবে চঞ্চল করে তোলে, ইউক্রেনের সাঁতারুর মনও ফাইনালে নামার আগে তেমনই চঞ্চল ছিল। অনুশীলনে ডাইভ, স্ট্রোক কিছুই ঠিকমতো হচ্ছিল না। তবু, মনের জোর সম্বল করে পদক জিতেছেন। যে মনের জোর তাঁকে দিয়েছেন সেনা আধিকারিক বাবা।
বাবার কথা শুনে রোমানচুক চলে যান জার্মানিতে। সেখানেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইউক্রেনে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব ছিল না। রোমানচুক বলেছেন, ‘‘শুরুটা খুব কঠিন ছিল। বিশ্বমঞ্চে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার কথা ভেবেই মনকে শক্ত করি। আমি ইউক্রেনের নাগরিক হিসাবে গর্বিত। ইউক্রেনের সব মানুষের জন্য গর্বিত। দেশের জন্য গর্বিত। আমাদের রাষ্ট্রপতির জন্য গর্বিত।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy