Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সপ্তশৃঙ্গের পরে সপ্ত আগ্নেয়গিরি জয় করে নজির সৃষ্টি বাঙালি পর্বতারোহীর সত্যরূপের

বুধবার সকাল ৬টা ২৫। সত্যরূপের স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং যন্ত্রের রিডিং দেখে মনে হচ্ছিল, সম্ভবত লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। এর কিছু পরেই টুইটে ও বন্ধু দীপাঞ্জন দাসকে ফোনে সামিটের খবর জানান তিনি।

সিডলি আরোহণের আগে অ্যান্টার্কটিকার ইউনিয়ন হিমবাহে সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। ফাইল চিত্র

সিডলি আরোহণের আগে অ্যান্টার্কটিকার ইউনিয়ন হিমবাহে সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৯
Share: Save:

আলোচনাচক্র থেকে ঘরোয়া আড্ডা, বহু বার বলেছেন ‘বড় স্বপ্ন’ দেখার কথা। এ বার নিজের সেই স্বপ্নকে সত্যি করে বুধবার ভারতীয় পর্বতারোহণে ইতিহাস তৈরি করলেন বাঙালি পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি মাউন্ট সিডলি (৪২৮৫ মিটার) আরোহণ করে সর্বকনিষ্ঠ পর্বতারোহী হিসাবে সপ্তশৃঙ্গ ও সপ্ত আগ্নেয়গিরি জয়ের জোড়া-খেতাব বিশ্বরেকর্ড করলেন তিনি। ৩৫ বছর ন’মাস বয়সে। এর আগে এই রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার ড্যানিয়েল বুলের (৩৬ বছর ৬ মাস বয়সে) দখলে। প্রথম ভারতীয় হিসাবেও মাউন্ট সিডলি এবং সপ্ত আগ্নেয়গিরি (সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ আগ্নেগিরি) জয় করলেন ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা এই যুবক। সত্যরূপের আগে সপ্ত আগ্নেয়গিরি জয়ের কৃতিত্ব রয়েছে বিশ্বে মাত্র পাঁচ জনের।

বুধবার সকাল ৬টা ২৫। সত্যরূপের স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং যন্ত্রের রিডিং দেখে মনে হচ্ছিল, সম্ভবত লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। এর কিছু পরেই টুইটে ও বন্ধু দীপাঞ্জন দাসকে ফোনে সামিটের খবর জানান তিনি। দুর্গমতম পাহাড়ের চুড়োয় ওঠার অভিজ্ঞতা কেমন? হাইক্যাম্প থেকে স্যাটেলাইট ফোনে সত্যরূপ বলছেন, ‘‘ভাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকলেও যাওয়ার সময়ে দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্য ছিল। রুট বলে সে ভাবে কিছু নেই, তাই আগের অভিযানের জিপিএস পয়েন্ট দেখে দেখে এগোচ্ছিলাম। ঘণ্টা দুই যাওয়ার পরে সূর্যের মুখ দেখা গেল। তখন ঠান্ডাটাও গেল বেড়ে। এতটাই যে, আঙুল জমে যাওয়ার জোগাড়।’’

তার পরে? ‘‘সামিটের জায়গাটা খুঁজে বার করতে হয়েছে। ছোট ছোট বরফের পাহাড় টপকে শেষে একটা জায়গায় পৌঁছে যখন মনে হল এটাই সামিট, জিপিএসে দেখি সেখানকার উচ্চতা সামিটের থেকে পাঁচ মিটার কম! আবার কিছুটা নীচে নেমে, ফের উঠে আসল সামিটে পৌঁছলাম’’— অকপট সত্যরূপ। আর রেকর্ড ছোঁয়ার অনুভূতি? বিশ্বজয়ীর মেসেজ-জবাব— ‘সামিটে এত ঠান্ডা আর হাওয়া চলছিল যে বেশি কিছু ভাববার সময়ই পাইনি’! পরে জানা যায়, গ্লাভসে ফুটো হয়ে যাওয়ায় সত্যরূপের ডান হাতের তর্জনীতে সামান্য ফ্রস্ট বাইট হয়েছে।

আরও পড়ুন: পাঠ ও পরীক্ষার কাজ থেকেও এখন বাদ কনক

গত ৩ জানুয়ারি কলকাতা থেকে মাউন্ট সিডলির উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে কর্মরত এই সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। দুবাই-সান্তিয়েগো হয়ে চিলের পুন্টাস এরিনাস থেকে অ্যান্টার্কটিকা পৌঁছনোর বিশেষ বিমানে ওঠেন সত্যরূপ। এর দু’দিন পরে ছোট টুইন অটার বিমানে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে

সিডলির বেসক্যাম্প (২১০০ মিটার)। সঙ্গে হাঙ্গেরি, রাশিয়ার দুই পর্বতারোহী ও দু’জন গাইড। সেখানেই খারাপ আবহাওয়া ও ঝড়ে দু’দিন আটকে থাকেন তাঁরা। সত্যরূপ বলছেন, ‘‘সে সময়ে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা। তাই হাইক্যাম্পটাও (২৮৫০ মিটার) বেশি উঁচুতে করতে যেতে পারিনি। ফলে সামিটের জন্য এক বারে ১২০০ মিটার চড়তে হয়েছে।’’

সত্যরূপের সাফল্যে এ দিন স্বস্তির ছায়া তাঁর বাড়িতে। সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করেননি মা গায়ত্রী। রাত কেটেছে বাইরের ঘরের সোফাতেই। সামিটের খবর পেয়ে বলছেন, ‘‘আনন্দের চেয়ে স্বস্তি বেশি হচ্ছে। বড্ড দুর্গম জায়গা ছিল এ বার।’’ বাবা শুভময়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘উৎকণ্ঠা ছিল। খুবই ভাল লাগছে।’’ ভাস্বতী চট্টোপাধ্যায় নামে বেঙ্গালুরুর যে

বন্ধু সত্যরূপকে প্রথম জানিয়েছিলেন তাঁর বিশ্বরেকর্ড-সম্ভাবনার কথা, তাঁর বাড়িতেই রাতে জড়ো হন পর্বতারোহীর বন্ধুরা। সিডলি-জয়ের খবরে সেখানেও তখন উৎসবের মেজাজ।

বিশিষ্ট পর্বতারোহী বসন্ত সিংহ রায় বলছেন, ‘‘ওর অসম্ভব জেদের জন্যেই এটা সম্ভব হয়েছে। এই সাফল্যে নবীন প্রজন্মের পর্বতারোহণে আগ্রহ বাড়বে।’’ আর প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে অ্যান্টার্কটিকায় যাওয়া ভূতত্ত্ববিদ ও পর্বতারোহী সুদীপ্তা সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘নিজের চেষ্টাতেই এটা সম্ভব করে দেখাল সত্যরূপ। এর পরে এই ধরনের স্পোর্টে সরকারের আরও উৎসাহ দেওয়া উচিত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Satyarup Siddhanta Mountaineer Volcanic Summit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE