নায়ক: ডার্বি মাতালেন ড্যারেল ডাফি। রবিবার কটকে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোল করার পরে। নিজস্ব চিত্র
মোহনবাগান ২ : ইস্টবেঙ্গল ০
অনবদ্য বলবন্ত সিংহ। অপ্রতিরোধ্য দেবজিৎ মজুমদার। মহানদীর তীরে স্বপ্নপূরণ মোহনবাগানের।
ফুটবলার হবেন বলে পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়েছিলেন বলবন্ত। যোগ দিয়েছিলেন জেসিটি-তে। তারপর সালগাওকর ও চার্চিল হয়ে মোহনবাগানে। কিন্তু বারবারই তাঁর জীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। চোটের জন্য গত বছর পুরোটাই কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন মাঠের বাইরে। হতাশায় নিজের দলে খেলা দেখাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সবুজ-মেরুনের ফিজিক্যাল ট্রেনার গার্সিয়া মিরান্দা এক প্রকার জোর করেই মাঠে নিয়ে আসতেন মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত বলবন্তকে। গত বছর আই লিগের সময় মোহনবাগান যখন অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে বাইরে যেত, গার্সিয়া কলকাতায় থেকে যেতেন শুধুমাত্র বলবন্তকে প্র্যাকটিস করাবেন বলে। পঞ্চনদের তীরের সেই ‘সিংহ’-ই রবিবার ম্যাচের ৮০ মিনিটে শরীর শূন্যে ভাসিয়ে হাফ ভলিতে বিশ্বমানের গোল করে সাত বছর আগে হারের বদলা নিলেন। ২০১০ সালে কটকের এই বরাবাটি স্টেডিয়ামেই যে ফেডারেশন কাপ ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে শেষ হয়ে গিয়েছিল মোহনবাগানের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন।
বলবন্তের মতোই ইস্টবেঙ্গল বধের আর এক নায়ক দেবজিতের জীবনেও অন্ধকার নেমে এসেছিল শৈশবে। বাবার হঠাৎ মৃত্যুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তাঁর ফুটবল ভবিষ্যৎ। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াইয়ে পাশে ছিলেন শুধু মা। মাতৃদিবসে তাঁর দস্তানার দাপটেই মশাল নিভল বারবাটিতে! ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার মাকে উৎসর্গ করে দেবজিৎ বললেন, ‘‘আমার কাছে দলের জয়টাই গুরুত্বপূর্ণ। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে এই জয়টা মূল্যহীন হয়ে পড়বে।’’ তবে এখন ভুলতে পারেননি আই লিগ জিততে না পারার যন্ত্রণা।
ফেডারেশন কাপ যে কটকে চলছে রবিবারই প্রথম বোঝা গেল। ডার্বি দেখতে কলকাতা থেকে আসা ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সমর্থকদের সংঘর্ষে উত্তাপ ছড়াল মহানদীর তীরে। যে বরাবাটি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে গত ৭ মে থেকে শুরু হওয়া টুর্নামেন্ট দেখতে গড়ে একশোর বেশি দর্শক হয়নি, ডার্বির টানে রবিবার সেই সংখ্যাটা হাজার পাঁচেকে পৌঁছেছিল।
সমর্থকদের উন্মাদনা, আই লিগের ডার্বিতে হারের যন্ত্রণা। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে এ দিন শুরু থেকেই আক্রমণেই ঝড় তুলেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। বিকাশ জাইরু ও ওয়েডসন আনসেলমে-কে আটকাতে রীতিমতো নাজেহাল হন সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডাররা। কিন্তু ৮ মিনিটে উইলিস প্লাজা। ১১ মিনিটে মহম্মদ রফিক। অবিশ্বাস্য ভাবে গোল নষ্ট করলেন লাল-হলুদের দুই তারকা। ম্যাচের ভবিষ্যৎটা সম্ভবত তখনই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধেও যেন গোল নষ্টের প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন রফিক-প্লাজা। হতাশ লাল-হলুদের সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরী খেলা শেষ হওয়ার পরে বললেন, ‘‘স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতাই আমাদের জিততে না পারার অন্যতম কারণ। ওরা মাত্র দু’টো সুযোগ পেয়েছিল। আর সেটা কাজে লাগিয়েই ম্যাচটা জিতে নিল।’’
আরও পড়ুন:কাকতালীয় আইপিএল-এর চ্যাম্পিয়নশিপ
ইস্টবেঙ্গল যখন ক্রমশ চাপ বাড়াচ্ছে, তখনই ছবিটা বদলে গেল সনি নর্দে, ড্যারেল ডাফির যুগলবন্দিতে। ম্যাচের ২৫ মিনিটে হাইতি তারকার বিশ্বমানের ফ্রি-কিক দুর্দান্ত ভাবে বাঁচান ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক শুভাশিস রায়চৌধুরী। দশ মিনিট পরে সনি-র সেন্টারে মাথা ছুঁইয়ে গোল ডাফির।
আইজল এফসি-র বিরুদ্ধে আই লিগের ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ায় প্রবল সমালোচিত হয়েছিলেন ডাফি। ফেডারেশন কাপের শুরু থেকেই দুরন্ত ছন্দে স্কটিশ স্ট্রাইকার। আর বলবন্ত গোল করে নিশ্চিত করলেন মোহনবাগানের ফেডারেশন কাপ ফাইনালে খেলার স্বপ্ন। দু’টো গোলের ক্ষেত্রেই দায়ী লাল-হলুদ ডিফেন্ডাররা।
মোহনবাগান: দেবজিৎ মজুমদার, প্রীতম কোটাল, আনাস এডাথোডিকা, এদুয়ার্দো ফেরিরা, শুভাশিস বসু, কাতসুমি ইউসা, সৌভিক চক্রবর্তী (বিক্রমজিৎ সিংহ), শেহনাজ সিংহ, সনি নর্দে, বলবন্ত সিংহ (জেজে লালপেখলুয়া) ও ড্যারেল ডাফি (প্রবীর দাস)।
ইস্টবেঙ্গল: শুভাশিস রায়চৌধুরী, রাহুল ভেকে, গুরবিন্দর সিংহ, অর্ণব মণ্ডল নারায়ণ দাস, বিকাশ জাইরু, মেহতাব হোসেন, রওলিন বর্জেস, মহম্মদ রফিক (রবিন সিংহ), ওয়েডসন আনসেলমে ও উইলিস প্লাজা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy