আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে টানা নব্বই মিনিট ছন্দ বজায় রাখতে হয় তার অভাব প্রকট মোহনবাগানে।—ফাইল চিত্র।
ফের একটা ডার্বি ম্যাচ! গত দশ বছরে এই ম্যাচটা এলেই মস্তিষ্ক একটা প্রস্তুতি নিতে শুরু করত। মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল— দুই ক্লাবের হয়েই এই ম্যাচটা খেলার অফুরন্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। গত বছরেও মোহনবাগান জার্সি গায়ে কলকাতা লিগে এই ম্যাচটা খেলেছিলাম। কিন্তু এ বার আমি কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের দল সাদার্ন সমিতির কোচ। তাই এ বার মাঠের ভিতরে নয়। মাঠের বাইরে বসে কলকাতা লিগ ও সদ্য সমাপ্ত ডুরান্ড কাপে দুই প্রধানের খেলাই মন দিয়ে দেখেছি। তার ভিত্তিতেই আমি কিবু ভিকুনার মোহনবাগানের চেয়ে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দলকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখছি রবিবারের ডার্বিতে।
সঙ্গে এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই, ধারে ও ভারে এগিয়ে থাকলেই কিন্তু ডার্বি জেতা যায় না। খেলোয়াড় জীবনে বহু বার দেখেছি, পিছিয়ে থাকা মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গল এই বিশেষ ম্যাচের দিনে নিজেদের ছাপিয়ে গিয়ে জিতে ফিরেছে।
মোহনবাগান কোচ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলাতে পছন্দ করেন। কিন্তু আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে গেলে যে গতিতে টানা নব্বই মিনিট ছন্দ বজায় রাখতে হয়, তার অভাব প্রকট মোহনবাগানে। মোহনবাগান স্ট্রাইকার সালভা চামোরো টেকনিকের দিক দিয়ে ঠিক হলেও মন্থর। বিপক্ষ রক্ষণের সামনে একজন স্ট্রাইকারের যে ছটফটানি থাকার কথা তা ওর খেলায় দেখিনি। চামোরোর হেড ভাল। মোহনবাগান মাঝমাঠ থেকে বেইতিয়ারা ‘লং বল’ পাঠায় ওর জন্য। চামোরো সেখান থেকে হেডে গোল করে। কিন্তু এই একমাত্র রণনীতি আটকে যেতেই পারে।
সালভা যদি সেই বলে মাথা ছোঁয়াতে বা দখল করতে না পারে, তা হলে যে ‘সেকেন্ড বল’ তৈরি হবে, তা দিয়েই কিন্তু প্রতি-আক্রমণে গোলের দরজা খুলে ফেলবে ইস্টবেঙ্গল। আর তা খুব দ্রুত তিন-চারটি পাসের মাধ্যমে। কোলাদোর নেতৃত্বে এই প্রেসিং ও প্রতি-আক্রমণভিত্তিক ফুটবলের জন্যই আমি ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে রাখছি। সঙ্গে বিদ্যাসাগরও গোলের মধ্যে রয়েছে। তাই ইস্টবেঙ্গল আক্রমণের ‘জোশ’ মোহনবাগানের চেয়ে বেশি।
পাশাপাশি, যে গতিতে নিখুঁত পাস খেলে ইস্টবেঙ্গল, সেই গতি কিন্তু বেইতিয়া বা ফ্রান গন্সালেসদের থাকে না। জোসেবা বেইতিয়ার নেতৃত্বে মোহনবাগান মাঝমাঠ মন্থর গতিতে দু’-তিনটে পাস খেলে আক্রমণ তৈরি করতে চায়। জিততে হলে এই পাসগুলো দ্রুত গতিতে খেলতে হবে মোহনবাগানকে। এর বড় কারণ, ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস নব্বই মিনিট যে ছকেই খেলুন না কেন, দলের ‘শেপ’-টা ঠিক রেখে দেন। মাঝমাঠটা জমাট রাখেন। বিশেষ করে ওদের দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার কাশিম আইদারা ও লালরিনডিকার কথা বলতে হবে। কাশিম বল কাড়ে। আর সেই বল ধরে ডিকা দুই প্রান্তে ঠিকানা লেখা বল বাড়াতে পারে। তাই প্রথম মিনিট থেকেই ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ ও মাঝমাঠের ‘শেপ’ নষ্ট করতে মন্থরতা ঝেড়ে ফেলে গতিতে পাস খেলুক নওরেম, চামোরোরা। তা হলেই চাপ বাড়বে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে। সেই ফাঁকা জায়গা কাজে লাগিয়ে গোল তুলে নিতে হবে মোহনবাগানকে।
গোকুলমের বিরুদ্ধে ডুরান্ড কাপের ফাইনালে দেখা গিয়েছে, মোহনবাগান রক্ষণ অনেকটা উপরের দিকে উঠে এসেছিল। ফুটবলের পরিভাষায় যাঁকে বলে হাইলাইন ডিফেন্স। এতে হয়তো বিপক্ষকে অফসাইডের ফাঁদে ফেলা যায়, কিন্তু পাশাপাশি গোলকিপার ও রক্ষণের মাঝে অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। মোহনবাগান রক্ষণ যেন সেই একই ভুল রবিবার না করে। কারণ, কোলাদো কিন্তু এই সুযোগের জন্য ওঁত পেতে থাকে। বিপক্ষের মাঝমাঠে ‘ওয়ান-টু’ খেলে হঠাৎ গতি বাড়িয়ে ফাঁকা জায়গায় ডিকার বাড়ানো বলগুলো ধরে। তাই কোলাদোকে আজ ধরাটাও মোহনবাগানের অন্য চ্যালেঞ্জ।
তবে ইস্টবেঙ্গলেরও দুর্বলতা রয়েছে। আলেসান্দ্রোর রক্ষণের দুই সাইড ব্যাক হল সেই জায়গা। বিশেষ করে, লেফ্ট ব্যাক মনোজ মহম্মদ। ও যে গতিতে ওভারল্যাপে যায়, সেই গতিতে নেমে আসতে পারে না। ফলে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে এই জায়গা অনেক সময় ফাঁকা থেকে যায়। যে সুযোগ কাজে লাগাতেই পারে চামোরোরা।
আজ কলকাতা ডার্বি: ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান (যুবভারতী, বিকেল ৩.০০)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy