জেজে-কাতসুমিরা আটকালেন এ ভাবেই।-ফেসবুক
মোহনবাগান-০ : শিলং লাজং-০
(দুই পর্ব মিলিয়ে ৫-০)
পেন ওরজির সাত গোলে জেতার স্বপ্ন অধরা থাকবে জানাই ছিল।
কিন্তু অনুকূল মঞ্চ পেয়ে মোহনবাগানের পাহাড় জয়ও তো অধরাই থেকে গেল!
তুঙ্গস্পর্শী আত্মবিশ্বাস, সম্পূর্ণ চাপহীন অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও সঞ্জয় সেনের এ মরসুমে আর পাহাড়ে গিয়ে পাহাড়ি টিমকে হারানো হল না। যদিও ফেড কাপ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে শিলং লাজংকে টপকাতে না পারলেও সনি-জেজেদের কোনও ক্ষতি হয়নি। বারাসতে প্রথম পর্বে পাঁচ গোলে জেতার সুবাদে ড্যাং ড্যাং করে ফাইনালে পৌঁছে গেল সবুজ-মেরুন। বাগান কোচ সাংবাদিক সম্মেলনে এসে দাবি করলেন, ‘‘আজ আমাদের ম্যাচ না হারাটাই লক্ষ্য ছিল। সেই লক্ষ্যে আমরা সফল।’’
বাগান-কোচ যেটা বললেন না তা হল, বাড়তি আত্মবিশ্বাস ডুবিয়ে দিতে পারত সনিদের। পরের শনিবার গুয়াহাটির ফাইনালে সঞ্জয়ের দলের সামনে কারা পড়বে তা চূড়ান্ত হবে রবিবার। স্পোর্টিং ক্লুব বা আইজল যারাই সামনে পড়ুক, বাগানের পারফরম্যান্স-লেখচিত্রের হুড়মুড়িয়ে ওঠা, আবার হঠাৎ অধঃপতন সঞ্জয়ের রাতের ঘুম কাড়তে পারে।
শিলংয়ে ফুটবলের উন্মাদনা কলকাতার ডার্বির মতো। মাঠ উপচে পড়ে প্রায় প্রতি ম্যাচে। কলকাতার রাস্তার মোড়ে মোড়ে সনি-র্যান্টিদের নিয়ে কোনও বিজ্ঞাপন চোখে পড়েছে বলে মনে পড়ছে না। কিন্তু শিলং স্টেডিয়ামে আসার রাস্তায়, আশপাশে একটা নরম পানীয়র বিজ্ঞাপনের পোস্টারে আইবর বা তাঁর সতীর্থদের ছবি দেখা দেখলাম সর্বত্র। ফুটবল এখানকার ধ্যানজ্ঞান। এ দিনের ম্যাচের অনেক পরেও স্থানীয় খুদে ফুটবলাররা রাতের অন্ধকারে অপেক্ষা করছিলেন উইলিয়ামস- গ্লেনদের দেখতে। নায়কদের সঙ্গে এক বার হাত মেলানোর জন্য। কিন্তু এমন উন্মাদনা সত্ত্বেও নেহরু স্টেডিয়ামের গ্যালারি আজ ফাঁকা থাকল কেন? এক লাজং কর্তা বললেন, ‘‘টিম পাঁচ গোল খেয়ে আছে বলে হয়তো এ দিন মাঠে আসেননি সমর্থকরা। তার উপর গোটা দিনই তো বৃষ্টি চলছে।’’
লাজং আজ জেতেনি, ফাইনালেও ওঠেনি। তবু যাঁরা এ দিন মাঠে আসেননি, তাঁরা কিন্তু পেন-ইসাক-ফ্যাবিওদের জেতার জন্য মরিয়া লড়াইটা দেখতে পেলেন না। সঞ্জয়ও স্বীকার করলেন, ‘‘লাজং অনেক ভাল খেলেছে। আমরা গোল খেয়ে যেতেও পারতাম।’’ পাঁচ গোলে এগিয়ে আজ মাঠে নেমেছিলেন কাতসুমিরা। হয়তো সে জন্যই আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিল পুরো বাগান। ম্যাচের শুরু থেকেই দেখে মনে হচ্ছিল, জিততে নয়, কোনও রকমে ড্র করতে নেমেছেন সঞ্জয়ের ছেলেরা। বিরক্তিকর ফুটবল। শিলংয়ের বৃষ্টির মতোই! গোটা ম্যাচে বাগানের একটাই পজিটিভ আক্রমণ থেকে গোল করতে পারেননি জেজে। এর বাইরে শুধুই ডিফেন্স সামলে গেলেন বিক্রমজিৎ-প্রীতমরা।
লাজং শুরু থেকেই আক্রমণের মেজাজে ছিল। বেশ কয়েকটা ভাল গোলের সুযোগও তৈরি করে। কাজে লাগাতে পারলে হয়তো পেনের স্বপ্ন পূরণ না হোক, ম্যাচটা জিততেই পারত তাঁর দল। সবচেয়ে বড় কথা, ফেড কাপ ফাইনালে নামার আগে হারের তেতো স্বাদটা পেতে হত বাগানকে। ফ্যাবিওর একটা শট বারে লাগে। তবে তার পরেও বলতেই হবে, অবাক করার মতো আজ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লাজং কোচ থাংবোই সিংটো। অঘটন ঘটানোর ম্যাচে দলের তারকা স্ট্রাইকার উইলিয়ামসকে প্রথম দলে না রেখে! কোচের অবশ্য দাবি, ‘‘ওটাই আমার স্ট্র্যাটেজি ছিল।’’ কিন্তু উইলিয়ামস যদি শুরু থেকে থাকতেন, তা হলে এ দিনের স্কোরলাইন লাজংয়ের পক্ষে যেতেই পারত।
যায়নি। তবে বাগান ডিফেন্ডারদের করুণ দশা নিয়ে লিখতেই হচ্ছে। মরসুম শেষ হতে চলল অথচ এখনও ডিফেন্ডারদের মধ্যে ঠিক বোঝাপড়া তৈরি হল না। প্রায় প্রতি ম্যাচেই কিছু না কিছু ভুল করে চলেছেন লুসিয়ানোরা। যা দেখে বিপক্ষ কোচও অবাক। ‘‘বারাসতে ওদের টিমটা যা খেলেছিল, এ দিন তা পারল না। মোহনবাগানের পারফরম্যান্স দেখে অবাকই হচ্ছি।’’ সিংটো কী বলছেন তা নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাতে রাজি নন সঞ্জয়। তিনি ড্রেসিংরুমের নতুন রিং-টোন ঠিক করে দিচ্ছেন— ‘‘ভাল খেলার চেয়ে জেতা জরুরি।’’
দেখার, তাতে পরের শনিবার জীবনের প্রথম ফেড কাপটা সঞ্জয় সেন পান কি না?
মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, লুসিয়ানো, রাজু, ধনচন্দ্র, কাতসুমি, লেনি, বিক্রমজিৎ (শৌভিক), সনি (তীর্থঙ্কর), জেজে, গ্লেন (আজহারউদ্দিন)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy