রেনবো ১ : মোহনবাগান ১
গ্যালারিতে সাত-আট-নয়ের দশকের ভিড় ফিরেছে। লম্বা লাইন পড়ছে দুই প্রধানের মাঠে। সে তো মাঠের বাইরে।
কিন্তু মাঠের মধ্যে তিরিশ-চল্লিশ বছর আগের দৃশ্য ফিরছিল না এত দিন। নিউ ব্যারাকপুরের একটা গ্রামীণ ক্লাব সেই স্মৃতি ময়দানে ফিরিয়ে দিল বুধবার রাতে। আপোষহীন, অনমনীয় মনোভাব আর অঙ্ক কষা ফুটবল খেলে রামধনু-ই হয়ে গেল রেনবো।
কলকাতা ফুটবলে একটা সময় খিদিরপুর, উয়াড়ি, ইস্টার্ন রেল, এরিয়ানের মতো ছোট ক্লাবগুলো ছিল বড় দলগুলোর কাছে ত্রাস। গাঁট। পয়েন্ট কেড়ে নিয়ে যারা খেতাবের লড়াই থেকে ছিটকে দিত দুই প্রধানকে। পয়েন্ট কেড়ে নেওয়া রেনবো সেটাই মোহনবাগানকে করে দিল কী না, সেটা সময় বলবে। তবে এটা লিখে দেওয়াই যায়, এ দিনের পর পালতোলা নৌকো সত্যিই টালমাটাল। সবুজ-মেরুনের লিগে বাকি আর তিনটি ম্যাচ। তাঁর মধ্যে আবার রয়েছে মিনি ডার্বি আর আসল ডার্বি। বাকি ম্যাচটা পিয়ারলেসের সঙ্গে। ম্যাচের পর কোচ শঙ্করলাল সান্ত্বনা খুঁজছিলেন এটা বলে যে, ‘‘খেতাব থেকে এখনও ছিটকে গেছি এটা বলব না। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে এখন সব ম্যাচ জিততে হবে।’’ শঙ্কর নিজেও জানেন, মুখে সহজে বলা গেলেও কাজটা কত কঠিন। ম্যাচের পর এতদিনের রঙিন গ্যালারিতে তাই প্রাণ নেই। শুধুই হতাশা আর হতাশা। কিছু সদস্যকে কাঁদতেও দেখা গেল খেতাব হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায়।
ইস্টবেঙ্গলের টানা আট বার কলকাতা লিগ জয়ের চমকপ্রদ রেকর্ড আটকানোর জন্য এ বার মরিয়া সবুজ-মেরুন বাহিনী। পাঁচ ম্যাচে পনেরো গোল করে কা-ক্রো জুটির বিজয়রথ যখন সব কিছু দুমড়ে মুচড়ে দেবে মনে হচ্ছিল, তখনই তাদের মাটিতে আছড়ে ফেলল একটা ‘নেই রাজ্যের’ ক্লাব। যাঁদের নিজেদের মাঠ নেই, ময়দানে তাঁবু নেই, হাতে গোনা সমর্থক। নেই আর্থিক সম্বলও।
আরও পড়ুন: চোটে কাবু সুহেইর, তবু দমছে না ইস্টবেঙ্গল
কী আসাধারণ ফুটবলই না খেললেন সুমিত দাস, ছোট্টু মণ্ডল, সুরোজ মাহাতো, সৌরভ রায়ের মতো এক ঝাঁক তরুণ। বাংলার ছেলেরা হারিয়ে যাচ্ছে, বুক চিতিয়ে লড়াই করতে জানে না-- ফুটবল মাঠে হঠাৎ ওঠা এই কলরব থামিয়ে দিতেই যেন নেমেছিলেন ওঁরা। আর ওঁদের সঙ্গ দিলেন কেইটা বউবেকার, বাজি আর্মান্ড আর ইয়াও বার্নার্ডদের মতো পাড়ায় পাড়ায় খেপ খেলে বেড়ানো তিন বিদেশি। চার বছর ধরে টিমটাকে যিনি তুলে এনেছেন রাজ্যের এক নম্বর লিগে, সেই রেনবো কোচ তড়িৎ ঘোষ তাঁর ফুটবলারদের ব্যবহার করলেন নিখুঁত স্ট্যাটেজিতে। তড়িতের চমকেই কা-ক্রো জুটি বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে খেলাটাই ভুলে গেল।
মাঠ থেকে বেরোনোর সময় রেফারি প্রাঞ্জল বন্দ্যেপাধ্যায় ও তাঁর সঙ্গীদের দিকে উড়ে এল জলের বোতল, ঝালমুড়ির ঠোঙা। পুলিশের ভ্যানে তাদের ফিরতে হল বাড়িতে। এই বিক্ষোভ কেন তা বোঝা গেল না। তবে এটা ময়দানের পুরানো ছবি। টিম পয়েন্ট নষ্ট করলেই রোষ পড়ে রেফারিদের উপর। কিন্তু বাস্তব হল, এই ম্যাচটায় আসলে হার বাঁচাল মোহনবাগান। রেনবোর জেতা উচিত ছিল কমপক্ষে ৪-২ গোলে।
প্রথমার্ধের মাঝামাঝি রেনবো গোলটা করল সবুজ-মেরুনের তিন ডিফেন্ডারের মাথার উপর দিয়ে। সুরজ মাহাতোর হেডের গোলটা ষাট মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হল। ক্রোমা এরপর ১-১ করে ডুবন্ত নৌকো বাঁচালেন বটে, কিন্তু পুরো ম্যাচে একবারের জন্যও গঙ্গাপাড়ের ক্লাবকে মনে হয়নি তারা জিততে পারে। যে টিমের একটা সেট পিসও কাজে লাগে না, উইং প্লে ডানা মেলে না—তাদের জেতার অধিকারও থাকতে পারে না। কামো থেকে কিংশুক, রিকি থেকে সার্থক দলুই, মোহনবাগানের সবাই একসঙ্গে ব্যর্থ। আর কিপার শিবিনরাজের কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। গোলটার জন্য তিনিও আংশিক দায়ী। অন্ধকারের এই বাগানে আকাশে উঁকি দিতে থাকা পুর্নিমার চাঁদের আলোয় সে জন্যই আরও ঝকঝকে লাগল সুমিত, অভিজিৎ, অঙ্কুর, সুরজদের মতো বঙ্গসন্তানের মুখ। মনে হল, সুভাষ-সুব্রত-সুধীর-সমরেশদের উত্তরসূরীরা তা হলে এখনও আছে। গ্রামে-গঞ্জে।
মোহনবাগান: শিবিনরাজ, সার্থক গলুই, কিংশুক দেবনাথ, বিক্রমজিৎ সিংহ, রিকি লালমানামা, চেষ্টারপল লিংডো (নিখিল কদম), সুরচন্দ্র সিংহ, রেইনার ফর্নান্ডেজ (নরহরি শ্রেষ্ঠ), পিন্টু মাহাতো (উত্তম রাই), কামো স্টিফেন বাই, আনসুমানা ক্রোমা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy