টালিগঞ্জ অগ্রগামীর বিরুদ্ধে দর্শনীয় গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দিয়ে উচ্ছ্বসিত ক্রোমা। রবিবার মোহনবাগান মাঠে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মায়াবী ময়দানে ভারতীয় ফুটবলে নতুন যুগের সূচনা!
মোহনবাগান মাঠে টালিগঞ্জ অগ্রগামীর বিরুদ্ধে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই গ্যালারিতে কয়েক হাজার মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশ বাল্ব জ্বলে উঠেছিল।
মাঠের বাইরে ফ্যান জোনের জায়ান্ট স্ক্রিনে ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার। বিরতিতে প্রিয় ক্লাবের থিম সং-এর সঙ্গে সমর্থকদের উদ্দাম নাচ। এ যেন একেবারে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, সান্তিয়াগো বের্নাবাউ-এর আবহ!
রবিবাসরীয় বিকেলে মোহনবাগান মাঠে কামো বায়ি, আনসুমানে ক্রোমা-র যুগলবন্দিতে উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল ১৭ মিনিটেই। অসাধারণ গোলে দলকে এগিয়ে দিয়েই চেস্টারপল লিংডোর সঙ্গে ‘ড্যাব ডান্স’-এ ক্রোমা মাতিয়ে দিলেন সমর্থকদের। তবে ম্যাচের পর আশ্চর্যরকম ভাবে উচ্ছ্বাসহীন ক্রোমা। বললেন, ‘‘গোল করার চেয়েও আমি বেশি খুশি দল জেতায়। হাজার হাজার সমর্থক কিন্তু মোহনবাগানের জয় দেখতেই মাঠে এসেছেন। তাই কে গোল করল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’’ কামো অভিভূত হোসে রামিরেজ ব্যারেটো তাঁকে অভিনন্দন জানানোয়। বলছিলেন, ‘‘ব্যারেটো মোহনবাগানের কিংবদন্তি। ওর সঙ্গে কথা বলে দারুণ লাগল।’’ কী পরামর্শ দিলেন সবুজ তোতা? ‘‘এখনও কিন্তু লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়নি তোমরা। তাই মনঃসংযোগ যেন কোনও মতেই নষ্ট না হয়’’, বললেন টালিগঞ্জ অগ্রগামী বধের নায়ক। কামো-ক্রোমা যুগলবন্দি নিয়ে উচ্ছ্বসিত ব্যারেটো বললেন, ‘‘মোহনবাগান ফরোয়ার্ড লাইনে কামো ও ক্রোমার বোঝাপড়াটা দারুণ গড়ে উঠেছে। এই ছন্দটা ধরে রাখতে পারলে মোহনবাগানের পক্ষে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কিন্তু অসম্ভব নয়।’’
তবে ক্রোমাকে ছাপিয়ে এ দিন সবুজ-মেরুনের জয়ের নায়ক হতে পারতেন আজহারউদ্দিন মল্লিক। একাধিক সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট না করলে প্রথমার্ধেই ৪-০ এগিয়ে যেত মোহনবাগান। ম্যাচের পরে অবশ্য তরুণ সতীর্থের পাশেই দাঁড়ালেন ক্রোমা। বললেন, ‘‘এক একটা দিন এরকম হয়। আজহার গোল না পেলেও কিন্তু দারুণ খেলেছে। পরের ম্যাচেই নিশ্চয়ই ও গোল পাবে ’’ আজহারের ব্যর্থতার দিনে শেষ মুহূর্তে গোল করে নজর কাড়লেন পরিবর্ত হিসেবে নেমে নিখিল কদম।
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে রবিবার মোহনবাগান বনাম টালিগঞ্জ অগ্রগামী ম্যাচের সেরা আকর্ষণ ছিল সিংহ বনাম নেকড়ে। গুরু বনাম শিষ্য দ্বৈরথ। সবুজ-মেরুনের সিংহ কামো বা টালিগঞ্জ অগ্রগামীর নেকড়ে অ্যান্থনি উলফ— দু’জনের কেউ-ই গোল করতে পারেননি। তবে গুরু সুভাষ ভৌমিককে ছাপিয়ে গেলেন শিষ্য শঙ্করলাল চক্রবর্তী।
হবে নাই বা কেন? মোহনবাগান কোচের ক্রোমা আছেন। যিনি কামো আটকে গেলেও গোল করে দলকে জেতান। কিন্তু আসিয়ানজয়ী কোচের একমাত্র অস্ত্র যে ছিলেন উলফ। যাঁর জন্য ম্যাচের সেরা কিংশুক দেবনাথের নেতৃত্বে শুরু থেকেই চক্রব্যূহ তৈরি করেছিলেন মোহনবাগান ডিফেন্ডাররা। ম্যাচের পর ক্ষুব্ধ উলফ বললেন, ‘‘মোহনবাগান ডিফেন্ডাররা মেরেধরে আমাকে আটকেছে। অথচ রেফারি সব দেখেও নীরব দর্শক হয়ে ছিলেন। ন্যায্য ফাউল দেননি। আসলে আগে থেকেই ঠিক করা আছে, ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের বাইরে অন্য কোনও দলকে কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে দেওয়া হবে না।’’
টালিগঞ্জ অগ্রগামী কোচ অবশ্য স্বীকার করে নিলেন মোহনবাগানকে হারানো রীতিমতো কঠিন। বললেন, ‘‘মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ফুটবলাররা যা লড়াই করেছে, তাতে আমি খুশি।’’ তার পরেই যোগ করলেন, ‘‘গোল না পেলেও দ্বিতীয়ার্ধে কিন্তু আমরাই ভাল খেলেছি।’’ ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রিয় শিষ্যকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালেন সুভাষ। আপ্লুত মোহনবাগান কোচ বললেন, ‘‘টালিগঞ্জ অগ্রগামী এমনিতেই ভাল দল। সুভাষদা দায়িত্ব নেওয়ার পর আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাই লড়াইটা অত্যন্ত কঠিন ছিল।’’
আর গুরুকে হারানোর অনুভূতি? শঙ্করলাল বললেন, ‘‘সুভাষদা যে দলের কোচ, তাদের হারানোর আনন্দই আলাদা।’’ টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে এই মুহূর্তে ১৫ পয়েন্ট মোহনবাগানের। প্রধান প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গলেরও ১৫ পয়েন্ট। কিন্তু গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে মহম্মদ আল আমনা-রা। সবুজ-মেরুন শিবির অবশ্য তা নিয়ে ভাবছে না। সাত বছর পর কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ জিততে মরিয়া কামো-রা। যদিও শঙ্করলাল সতর্ক। বললেন, ‘‘ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই।’’ তবে দুরন্ত জয়ের রাতে মোহনবাগান কোচের উদ্বেগ বাড়ালেন এজে কিংগসলে। সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডার এ দিন হলুদ কার্ড দেখায় পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না।
মোহনবাগান: শিবিনরাজ কুনিয়িল, অরিজিৎ বাগুই, কিংশুক দেবনাথ, এজে কিংগসলে, রিকি লালওমাওমা (গুরজিন্দর সিংহ), চেস্টারপল লিংডো (নিখিল কদম), রেনিয়ার ফার্নান্দেজ, শিল্টন ডি’সিলভা, আজহারউদ্দিন মল্লিক (পিন্টু মাহাত), কামো বায়ি ও আনসুমানা ক্রোমা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy