জুটি: কোচ বিজয় শর্মার সঙ্গে চানু। রবিবার গেমস ভিলেজে। টুইটার
গোটা বিশ্ব দেখেছে শনিবার কী ভাবে একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ সামলে টোকিয়ো অলিম্পিক্সে রুপো জয় করেছেন মীরাবাই চানু। কিন্তু যেটা অজানা থেকে গিয়েছে, তা হল, ভারোত্তোলন ইভেন্ট শুরু হওয়ার দু’দিন আগে থেকে চানুকে আরও একটা চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়েছিল। যেটা ১১৫ কেজি ওজনের বারবেল তোলার চেয়ে কোনও অংশে কম কঠিন ছিল না। বরং বলা যায়,
বেশিই ছিল।
চানুর লড়াই ছিল ৪৯ কেজি বিভাগে। কিন্তু অলিম্পিক্স অভিযানে নামার দু’দিন আগেও ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই ভারোত্তোলকের শরীরের ওজন ছিল আরও বেশি। অর্থাৎ, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি ওজন কমাতে না পারতেন চানু, তা হলে তাঁর অলিম্পিক্সে নামাই হত না!
রবিবার টোকিয়ো থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে এই তথ্য ফাঁস করলেন স্বয়ং চানুর কোচ বিজয় শর্মা। আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘ইভেন্ট শুরুর দু’দিন আগেও চানুর ওজন ছিল ৫১ কেজি। আমাদের হাতে মোটামুটি ৪৮ ঘণ্টা সময় ছিল দু’ কেজি ওজন কমানোর জন্য।’’ কী ভাবে কাজটা করলেন? বিজয়ের ব্যাখ্যা, ‘‘কার্বোহাইড্রেট একেবারে কমিয়ে দিয়ে। খাওয়ার উপরে প্রচণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। গত দু’দিনে তো প্রায় কিছুই খায়নি চানু।’’
ভারোত্তোলন অভিযানে নামার দু’দিন আগে ঠিক কী রকম কঠিন রুটিনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে চানুকে? ভারতীয় ভারোত্তোলক মহল এবং চানুর ‘কোর টিম’-এর ঘনিষ্ঠদের কাছে খোঁজখবর নিয়ে জানা যাচ্ছে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটি।
শনিবার ছিল চানুর ইভেন্ট। বৃহস্পতিবার থেকে মণিপুর-তনয়াকে প্রায় উপোস করে থাকতে হয়েছে। ওজন কমানোর জন্য প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল শরীর থেকে জল বার করে দেওয়া। যে কারণে এই অবস্থায় ভারোত্তোলকদের জল একেবারে খেতে দেওয়া হয় না। কিন্তু তাতে আবার শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেটা সামলাতে থাকে এক গ্লাস মুসম্বি লেবুর রস। এক গ্লাস রস মোটামুটি ১৮ ঘণ্টা ধরে খাওয়াতে হয়। শরীরের শক্তি যাতে কমে না যায়, তার জন্য চিকেন সুপ অল্প করে দেওয়া হয়।
শরীর থেকে জল বার করার আরও দুটো প্রক্রিয়া আছে। অনেকটা সময় মুখে একটা পাতিলেবু রেখে দিতে হয় চানুদের। এবং, ক্রমাগত থুতু ফেলে যেতে হয়। যাতে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। পাশাপাশি খুব গরম আবহাওয়ার মধ্যে কম্বল চাপা দিয়েও রাখা হয়। ঘামের সঙ্গে জল বেরিয়ে যায়। কিন্তু এতে স্বাস্থ্যের কোনও ক্ষতি হয় না? ভারতীয় ভারোত্তোলনের নাড়িনক্ষত্র জানা, রাজ্য সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট রঞ্জিত ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘চানুর সঙ্গে চিকিৎসক, ফিজিয়োর একটা দল আছে। সব সময় ওর উপরে নজর রাখছে। একেবারে অঙ্ক কষে চানুর শরীরের ওজন কমানো হয়েছে। তার উপরে ওর চেহারাটা ছোটখাটো হওয়ায় সুবিধে হয়ে গিয়েছে।’’
ইতিহাস সৃষ্টি করার পরে শনিবার রাতে কি খুব হইহুল্লোড় হল? বিজয় শর্মা বলছিলেন, ‘‘না, না, সে রকম কিছুই হয়নি। আসলে ইভেন্ট শেষ হওয়ার পরে নানা ব্যাপারে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। সাংবাদিক বৈঠক ছিল। স্পনসরদের অনুষ্ঠান ছিল। তার উপরে ডাক্তারদের ওখানেও কিছু সময় গেল।’’
আপনার ছাত্রী তো দেশবাসীকে পদক উৎসর্গ করেছেন। আপনি কাকে করলেন? বিজয়ের উত্তর, ‘‘অবশ্যই দেশবাসীকে। সবাই আমাদের পাশে ছিলেন। আমাদের জন্য প্রার্থনা করেছেন।’’ এ বার তা হলে উৎসব কবে হবে? ‘‘এই তো দেশে ফিরে আসছি। তার পর দারুণ ভাবে সব হবে,’’ বললেন গর্বিত কোচ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy