Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Mayank Agarwal

রান আসছে না কেন? হতাশ ময়াঙ্ককে সফল হওয়ার মন্ত্র বাতলে দিলেন কোচ

১৭ জানুয়ারি লিঙ্কনে প্রথম লিস্ট এ ম্যাচ থেকে ধরলে শুক্রবার পর্যন্ত এদেশে এখনও পঞ্চাশ পেরোতে পারেননি কর্নাটকি। প্রশ্ন উঠছে যে, ঠিক কী হয়েছে তাঁর? কেন রান হারিয়ে গিয়েছে তাঁর ব্যাট থেকে?

কোচের মতে, শট বাছাইয়ে সমস্যা হচ্ছে ময়াঙ্কের। —ফাইল ছবি।

কোচের মতে, শট বাছাইয়ে সমস্যা হচ্ছে ময়াঙ্কের। —ফাইল ছবি।

সৌরাংশু দেবনাথ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:০৭
Share: Save:

শুভমন গিল না পৃথ্বী শ, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ভারতের দ্বিতীয় ওপেনার কে হতে চলেছেন, তা নিয়ে ক্রিকেটমহলে চলছে জোরদার তর্ক। আর সেই তর্কের আড়ালে লুকিয়ে থাকছে এক গভীর উদ্বেগ। রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে যিনি দলের এক নম্বর টেস্ট ওপেনার, সেই ময়াঙ্ক আগরওয়ালকেই তো নড়বড়ে দেখাচ্ছে কিউয়িদের দেশে!

নিউজিল্যান্ডে এসে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে পাঁচ ম্যাচের একদিনের সিরিজে প্রথম খেলেছিলেন ময়াঙ্ক। সেই পাঁচ ইনিংসে তাঁর ব্যাটে এসেছিল যথাক্রমে ৮,৩২,২৯, ৩৭ ও ২৪ রান। একটাও পঞ্চাশ ছিল না। আর ১৭ জানুয়ারি লিঙ্কনে প্রথম লিস্ট এ ম্যাচ থেকে ধরলে শুক্রবার পর্যন্ত এদেশে এখনও পঞ্চাশ পেরোতে পারেননি কর্নাটকি!

একদিনের সিরিজের পর ভারত ‘এ’ দলের হয়ে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে প্রথম বেসরকারি টেস্টের দুই ইনিংসেই শূন্য করেছিলেন ময়াঙ্ক। তার পর তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজের দলে সুযোগ আসে। হ্যামিল্টনে অভিষেক ম্যাচে করেছিলেন ৩২। পরের দুই ম্যাচে করেন যথাক্রমে ৩ ও ১। তিন ইনিংসে মোট ৩৬, গড় ১২!

আরও পড়ুন: শুভমন, পৃথ্বী ও ময়াঙ্ক, প্রস্তুতি ম্যাচে রান পেলেন না তিন সম্ভাব্য ওপেনারই

এখানেই শেষ নয়। এদিন নিউজিল্যান্ড একাদশের বিরুদ্ধে সিডন পার্কে ফের ব্যর্থ হলেন ময়াঙ্ক। করলেন মোটে ১। আউট হয়েছেন উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে, ঠিক কী হয়েছে তাঁর? কেন রান হারিয়ে গিয়েছে তাঁর ব্যাট থেকে?

ছোটবেলার কোচ আরএক্স মুরলীধর অবশ্য কোনও ভাইরাস খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁর ব্যাটিংয়ে। আনন্দবাজার ডিজিটালকে শুক্রবার সকালে তিনি বললেন, “নির্দিষ্ট কোনও সমস্যা নেই ওর ব্যাটিংয়ে। কন্ডিশনের সঙ্গে ধাতস্থ হয়ে উঠতে হবে ওকে। ইনিংসের গোড়ার দিকে ভাল বলগুলোকে দেখেশুনে খেলতে হবে। ভারতে তেমন কোনও মুভমেন্ট বা বাউন্সের মোকাবিলা করতে হয় না ব্যাটসম্যানকে। নিউজিল্যান্ডে কিন্তু তা করতে হচ্ছে। ফলে গোড়ার দিকে খোঁচা দিয়ে ফেলছে, ভুল করে বসছে। ওখানে শুরুতে আউট হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে দ্রুত। শট বাছাইয়ে ভুল হয়ে যাচ্ছে ওর। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় একদিনের ম্যাচে এ ভাবেই ছিটকে গিয়েছিল ময়াঙ্কের স্টাম্প। ছবি: এপি।

কোচ জোর দিতে চাইছেন নিখুঁত সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্কিলে। একইসঙ্গে আশ্বস্ত করছেন যে ময়াঙ্ক নিজে খাটছেনও এই ব্যাপারে। কিন্তু, শুক্রবারও তো ভুল শুধরে নেওয়ার ছবি সামনে আসেনি। বরং, টেস্টের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও ময়াঙ্কের রান না-পাওয়া চিন্তা বাড়াচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টের।

ব্ল্যাক ক্যাপসদের দেশে ব্যাটসম্যানকে কেমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়, সেই ব্যাখ্যা করেছেন মুরলীধর। তাঁর কথায়, “ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডে বলের মুভমেন্ট সমস্যা তৈরি করে ব্যাটসম্যানের সামনে। আবার অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় বাউন্স চাপে ফেলে ব্যাটসম্যানকে। সেখানে বল তত নড়ে না। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের তাই অস্বস্তিতে পড়তে হয় নিউজিল্যান্ডে গেলে। কারণ, এই ধরনের কন্ডিশনকে মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা থাকে না। নিউজিল্যান্ডে জোরে হাওয়াও দেয়। সেটাও খেয়াল রাখতে হয় সবাইকে।”

১৭ জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি। প্রায় এক মাসের মতো নিউজিল্যান্ডে খেলে ফেললেন ময়াঙ্ক। তার পরও তো ধাতস্থ হতে পারছেন না। এটা তো চিন্তায় ফেলার কথা স্বয়ং ময়াঙ্ককেও!

জানা গেল, উদ্বিগ্ন যদি নাও হন, ময়াঙ্ক অবশ্যই হতাশ। কারণ, একদিনের সিরিজে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। যা কাজে লাগাতে পারেননি একেবারে।

আরও পড়ুন: টেস্টে ওপেনিং নিয়ে পৃথ্বীর সঙ্গে কোনও লড়াই নেই, জানিয়ে দিলেন শুভমন

বৃহস্পতিবারই কথা হয়েছে গুরু-শিষ্যের। আর সেই কথাবার্তায় আফশোসের সুর নজর এড়ায়নি কোচের। তিনি বললেন, “দুশ্চিন্তায় পড়েনি হয়তো, তবে হতাশা আসেই। ও জানে যে সুযোগ ছিল ম্যাচ জিতিয়ে নায়ক হয়ে ওঠার। সেই সুযোগ ও নিতে পারেনি। প্রথম ম্যাচে শট ভাল নিয়েছিল। মারারই বল ছিল। কিন্তু হাতে চলে যায়। দ্বিতীয় ম্যাচে ভুল শট নিয়েছিল। আর তৃতীয় ম্যাচে ভাল বলে আউট হয়েছে। শটবাছাইয়ে সমস্যা হয়েছে। তাই ও হতাশ তো বটেই। তবে তার জন্য মন খারাপ করে চুপচাপ বসে থাকলে তো কিছু হবে না। হাতে যে কাজ রয়েছে, সেটাতে মন দিতে হবে। এটাই তো ক্রীড়াবিদের জীবন। যা হয়ে গিয়েছে, তা ভেবে সময় কাটানো যায় না। সামনে তাকাতে হয়। কী করতে হবে, সেটায় নজর দিতে হয়।”

আর এখানেই তো থাকছে প্রশ্ন। রানে ফিরতে কী করা দরকার ময়াঙ্কের? মুরলীধর বললেন, “দেখুন, আমাদের প্রতিনিয়ত কথা হয়। কালও কথা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে ও রওনা হওয়ার আগে এখানে নেটে খাটাখাটনি করেছিল। আমরা জানতাম যে ওখানে কেমন কন্ডিশনের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু, কখনও কখনও সময় লাগে অ্যাডজাস্ট করতে। রানের জন্য ভাগ্যের সহায়তাও প্রয়োজন হয়। ইনিংসের শুরুতেই খোঁচা দিয়ে ফেললে, বোল্ড হয়ে গেলে, কিছু করার থাকে না। পরের ইনিংসে তখন আবার এগুলো মনের মধ্যে সংশয় তৈরি করে। সাধারণত কী হয়, একটা-দুটো বলে পরাস্ত হলেও তা মাথায় ঘুরতে থাকে। তাই মানসিক ভাবে শক্ত থাকতে হয়। আমি অবশ্য আশাবাদী যে টেস্ট সিরিজে একটা না একটা রাস্তা ও ঠিক বের করে ফেলবে। বড় রানও পাবে।”

মনঃসংযোগের অভাব নয়, শট বাছাইয়ে ভুলকেই এখনও পর্য়ন্ত ময়াঙ্কের ঘাতক বলে মনে করছেন কোচ। বলের লেংথ দ্রুত বুঝে ফেলা, ঠিক শট খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া, শুরুর দিকে বাইরের বল ছেড়ে দেওয়া এবং এনার্জি লেভেল বাড়িয়ে রাখা— ছাত্রকে দিয়েওছেন টিপস। সেই মন্ত্র বাইশ গজে ময়াঙ্কের সুরক্ষাকবচ হয়ে উঠুক, এটাই চাইছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

আরও পড়ুন: ঘরের কাজ, জুতো পালিশ, সব করে দেব, শুধু ক্রিকেট খেলতে দিন, কোচকে বলেছিল ছোট্ট যশস্বী​

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy