স্যান্টনার আউট। উচ্ছ্বসিত শার্দুল। রবিবার। ছবি: এএফপি।
সিরিজের পঞ্চম টি-টোয়েন্টিতে প্রথমে ব্যাট করে ভারত তিন উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ১৬৩ রান। ফলে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৫-০ হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৬৪ রান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নয় উইকেটে ১৫৬ তুলল তারা। ভারত জিতল সাত রানে। একই সঙ্গে বিশ্বের প্রথম দল হিসেবে এই ফরম্যাটে কোনও সিরিজ জিতল বিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশের রেকর্ড গড়ল নীল জার্সিধারীরা।
জয়ের অন্যতম নায়ক অবশ্যই জশপ্রীত বুমরা। চার ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে তিনি নিলেন তিন উইকেট। তিনিই ম্যাচের সেরা। নবদীপ সাইনি নিলেন দুই উইকেট। দিলেন ২৩ রান। শার্দুল ঠাকুরও নিলেন দুই উইকেট। তবে দিলেন ৩৮ রান। বোলারদের দাপটেই ম্যাচে ফিরেছিল ভারত। এদিনের জয়ের অন্য তাৎপর্যও রয়েছে। বিরাট কোহালি বিশ্রাম নেওয়ায় অধিনায়ক ছিলেন রোহিত শর্মা। কিন্তু পায়ে টান ধরায় তিনি ফিল্ডিংয়ের সময় মাঠে নামতে পারেননি। ফলে ভারতকে নেতৃত্ব দিলেন লোকেশ রাহুল। তাঁর নেতৃত্বে এল এই দুর্দান্ত জয়। এই সিরিজের সেরাও হয়েছেন রাহুল।
রান তাড়ায় একসময় সুবিধাজনক জায়গাতেই ছিল হোম টিম। ১২ ওভারে তিন উইকেটে ১১৩ ছিল স্কোর। হাতে সাত উইকেট নিয়ে ৪৮ বলে করতে হত ৫১ রান। ক্রিজে ছিলেন দুই সেট ব্যাটসম্যান টিম সেইফার্ট ও রস টেলর। কিন্তু সেখান থেকেই ক্রমশ পিছিয়ে পড়ল তারা। আর ভারতীয় দল দেখাল কী ভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মরিয়া লড়াই চালানো যায়। শেষ তিন টি-টোয়েন্টিতেই যা করে এসেছে টিম ইন্ডিয়া। জয় ছিনিয়ে নিয়েছে কিউয়িদের হাতের মুঠো থেকে।
It's a clean sweep!
— ICC (@ICC) February 2, 2020
India win the T20I series 5-0 🎉 #NZvIND pic.twitter.com/Hc8HX9w4GS
রান তাড়ার গোড়াতেই চাপে পড়ে গিয়েছিল কিউয়িরা। ১৭ রানের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল তিন উইকেট। প্রথমে মার্টিন গাপ্টিলকে (ছয় বলে ২) এলবিডব্লিউ করেছিলেন জশপ্রীত বুমরা। পরে রিপ্লেতে দেখা গেল বল স্টাম্পে লাগছে না, উপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। এর পর ওয়াশিংটন সুন্দর বোল্ড করেছিলেন কলিন মুনরোকে (ছয় বলে ১৫)। ১৭ রানে পড়েছিল দ্বিতীয় উইকেট। ওই রানেই পড়েছিল তৃতীয় উইকেটও। রান আউট হয়েছিলেন টম ব্রুস (তিন বলে ০)।
রস টেলর-টিম সেইফার্ট জুটি চতুর্থ উইকেটে এর পর যোগ করলেন ৯৯ রান। তার মধ্য়ে দশম ওভারে শিবম দুবের থেকেই ৩৪ রান নিলেন দু’জনে। যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডারবানে ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছয় ছক্কা মেরেছিলেন ভারতের যুবরাজ সিংহ। এক ওভারে বেশি রানের তালিকায় দুবে থাকলেন ব্রডের ঠিক পরেই।এই ওভারই ম্যাচে ফিরিয়ে আনল কিউয়িদের। কিন্তু সেইফার্ট ফিরতেই নামল ধ্বস।
Bumrah picks up his second wicket. Mitchell goes for 2.
— BCCI (@BCCI) February 2, 2020
New Zealand 119/5 after 14 overs https://t.co/3a7zBdRNm2 #NZvIND pic.twitter.com/mAySfX4fP3
এটা ছিল রস টেলরের কেরিয়ারের শততম টি-টোয়েন্টি। বোঝাই যাচ্ছিল, এই ম্যাচকে স্মরণীয় করে তুলতে চান তিনি। তবে তাঁর আগে পঞ্চাশে পৌঁছে গিয়েছিলেন সেইফার্ট। যা এসেছিল ২৯ বলে। শেষ পর্যন্ত নবদীপ সাইনির বলে ৫০ রানে আউট হলেন তিনি। তাঁর ইনিংসে ছিল পাঁচটি চার ও তিনটি ছয়। পরের ওভারেই ফের আঘাত হেনেছিল ভারত। জশপ্রীত বুমরার দুরন্ত ইয়র্কারে বোল্ড হয়েছিলেন ড্যারিল মিচেল (চার বলে ২)। ১১৯ রানে পড়েছিল পঞ্চম উইকেট।
Two wickets in an over for Shardul Thakur.
— BCCI (@BCCI) February 2, 2020
New Zealand 133/7 after 17 overs.#NZvIND pic.twitter.com/zvmvvvRA2f
রস টেলর অবশ্য একদিক ধরে রেখেছিলেন। ৪২ বলে পৌঁছেছিলেন পঞ্চাশে। দায়িত্ব নিয়ে দলকে টানছিলেন তিনি। শেষ পাঁচ ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ৪২ রান। সেটাই দাঁড়াল ২৪ বলে ৩৫ রানে। ১৭তম ওভারের শুরুতে শার্দুল ঠাকুরকে মারতে গিয়ে মণীশ পাণ্ডেকে ক্যাচ দিলেন মিচেল স্যান্টনার (৬)। স্কট কুগলেজেন (০) এর পর ফিরলেন দ্রুত। শার্দুলের ওভারেই ক্যাচ দিলেন ওয়াশিংটন সুন্দরকে।পরের ওভারেই মোক্ষম আঘাত। নবদীপ সাইনির বাইরের বলে চালাতে গিয়ে খোঁচা দিলেন রস টেলর। সহজ ক্যাচ ধরলেন লোকেশ রাহুল। ৪৭ বলে ৫৩ করে তিনি ফিরতেই ভারতের ৫-০ নিশ্চিত হল। কারণ, একমাত্র তিনিই পারতেন কিউয়িদের জেতাতে। কিন্তু সহজ জায়গা থেকে নিউজিল্যান্ড এদিনও যে ভাবে পরিস্থিতি জটিল করে তুলল, তাতে ক্রিকেটবিশ্বে এখন তাদের ‘চোকার্স’ বলা চলবেই। শেষ ওভারে ঈশ সোধি দুটো ছয় মারলেও ম্যাচ তার আগেই বেরিয়ে গিয়েছিল নিউজিল্য়ান্ডের থেকে।
163 on the board. Can #TeamIndia defend the target? 🧐🧐 #NZvIND pic.twitter.com/GlS4lqIoJL
— BCCI (@BCCI) February 2, 2020
লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মার জুটিতে বড় রানের ভিত গড়েছিল ভারত। রাহুল ফেরার পর রোহিত সেই মঞ্চেই ঝড় তুললেন। চার মেরে পৌঁছলেন হাফ-সেঞ্চুরিতে। যা এল ৩৫ বলে। পঞ্চাশের পর অবশ্য রান নিতে গিয়ে কাফ মাসলের সমস্যায় পড়লেন তিনি। ফিজিয়োর তত্ত্বাবধানে কিছু ক্ষণ চলল পরিচর্যা। তার পর ব্য়াট করতে নেমে প্রথম বলেই মারলেন ছয়। কিন্তু খুচরো রান নিতে না পারায় ফিরে গেলেন ড্রেসিংরুমে। তখন ৪১ বলে তাঁর রান ৬০। যাতে ছিল তিনটি চার ও তিনটি ছয়।
আট রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মা টানছিলেন দলকে। দ্বিতীয় উইকেটে দু’জনে যোগ করেছিলেন ৮৮ রান। এই সিরিজে দুশোর বেশি রান করে ফেললেন রাহুল। এদিন তিনি ফিরলেন পঞ্চাশের দোরগোড়া থেকে। ৩৩ বলে ৪৫ করে আউট হলেন তিনি। তাঁর ইনিংসে ছিল চারটি চার ও দু’টি ছয়।
KL Rahul in this #NZvIND T20I series 👇
— ICC (@ICC) February 2, 2020
56
57*
27
39
45 (today) pic.twitter.com/KZbwh0pCNN
তবে রাহুলের সঙ্গী ওপেনার সঞ্জু স্যামসন টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছিলেন। রবিবার সিরিজের পঞ্চম টি-টোয়েন্টিতে চার বলে দুই করে ফিরেছিলেন তিনি। এর আগে শুক্রবার ওয়েলিংটনে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে করেছিলেন ৮। টানা দুটো ব্যর্থতা তাঁর কেরিয়ারের পক্ষে খারাপই হল। রান পেলেন না শিবম দুবেও। পাঁচে নেমে এদিনও ঝড় তুলতে ব্যর্থ হলেন। ছয় বলে করলেন ৫। বড় শট নিতে গিয়ে তুললেন লোপ্পা ক্যাচ। রোহিত ফেরার পর শ্রেয়াস আইয়ার অবশ্য রান পেলেন। ৩১ বলে অপরাজিত থাকলেন ৩৩ রানে। ছয়ে নেমে মণীশ পাণ্ডে চার বলে অপরাজিত থাকলেন ১১ রানে।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল ভারত। এই ম্যাচে খেলেননি বিরাট কোহালি। বিশ্রাম নিয়েছিলেন তিনি। ফলে, রোহিত শর্মা নেতৃত্ব দিলেন দলকে। আর সিরিজে প্রথম বার টস জিতল ভারত, মুম্বইকরের নেতৃত্বেই। ভারতীয় দলে এই একটিই পরিবর্তন হয়েছে। রোহিত এসেছিলেন কোহালির জায়গায়। নিউজিল্যান্ড দলে কোনও পরিবর্তন হয়নি।
আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে শুভমনের ডাবল সেঞ্চুরি, শতরান পেলেন হনুমা, পাঞ্চালও
আরও পড়ুন: চহালের পোস্ট করা টিকটক ভিডিয়োয় টুপি পরা ব্যক্তি কে?
এই মাঠে হওয়া প্রতিটি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকেই প্রথমে ব্যাট করা দল জিতেছে। রান তাড়া করে হারের সংখ্যা পাঁচ। ভারত আবার এই মাঠে এই প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলছে। নিউজিল্যান্ড এই মাঠে আবার চার বার জিতেছে, হেরেছে এক বার। একটি ম্য়াচের নিষ্পত্তি হয়নি। ভারত এই মাঠের অতীতের কথা মাথায় রেখেই প্রথমে ব্য়াট করার সিদ্ধান্ত নিল। পছন্দের রান তাড়ার দিকে ঝুঁকল না।
FIFTY!@ImRo45 brings up his 21st T20I half-century off 36 deliveries.
— BCCI (@BCCI) February 2, 2020
Live - https://t.co/3a7zBdRNm2 #NZvIND pic.twitter.com/N1nRDSvNjo
নিউজিল্যান্ডে এই প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে ভারত। টিম ইন্ডিয়া এগিয়ে ৪-০ ফলে। রবিবার তাই টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৫-০ করার সুযোগ ছিল ভারতের সামনে। এর আগে কোনও টেস্ট খেলিয়ে দেশের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে ৫-০ জেতার নজির নেই বিশ্বক্রিকেটে। বিরাট কোহালির দল জিতলে তাই ক্রিকেটবিশ্বের প্রথম দল হিসেবে ইতিহাস গড়বে। গড়বে গর্বের রেকর্ড। অন্যদিকে, লজ্জার রেকর্ডের সামনে নিউজিল্যান্ড। হেরে গেলে তাই যন্ত্রণা বাড়বে।
ভারত যখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল, তখন নিউজিল্যান্ড আবার ভুগছিল উদ্বেগে। চাপের মুখে বার বার ভেঙে পড়ছিল দল। শেষ দুই ম্যাচে সুপার ওভারে হারতে হয়েছিল কিউয়িদের। আর দুটো ম্যাচই নির্ধারিত কুড়ি ওভারে জেতার মতো অবস্থায় ছিল ব্ল্যাক ক্যাপসরা। কিন্তু হাল না ছাড়া ভারতের লড়াকু মানসিকতার সামনে অসহায় দেখিয়েছিল কিউয়িদের। তাদের নতুন নামকরণও হয়েছে ‘চোকার্স’ বলে।
#TeamIndia ready for the 5th T20I 💪🔥 #NZvIND pic.twitter.com/Qj9vxntaw9
— BCCI (@BCCI) February 2, 2020
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy