রোহিত রাজ। হ্যামিল্টনে সুপার ওভারে পর পর ছয় মেরে জেতালেন দলকে। ছবি: এএফপি।
টানটান উত্তেজনার মধ্যে হ্যামিল্টনে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি নির্ধারিত কুড়ি ওভারে টাই হল। ভারতের পাঁচ উইকেটে ১৭৯ রানের জবাবে ছয় উইকেট ১৭৯ তুলল নিউজিল্যান্ড। যার ফলে ম্যাচ গড়াল সুপার ওভারে। শেষ দুই বলে ছয় মেরে নাটকীয় ভাবে ভারতকে জেতালেন রোহিত শর্মা। একই সঙ্গে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৩-০ করে ফেলল ভারত।
শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ৯ রান। মহম্মদ শামির শেষ চার বলে দরকার ছিল মাত্র দুই রান। ক্রিজে ৯৫ রানে খেলছিলেন কিউয়ি অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু, ওভারের তৃতীয় বলেই ফিরলেন উইলিয়ামসন (৪৮ বলে ৯৫, আটটা চার, ছয়টি ছয়)। পরের বল হল না রান। পঞ্চম বলে হল বাই। স্কোর তখন সমান-সমান। শেষ বলে মারতে গিয়ে বোল্ড হলেন রস টেলর (১০ বলে ১৭)। নাটকীয় ভাবে টাই হয়েছিল ম্যাচ।
শুরু হল সুপার ওভার। জশপ্রীত বুমরার ছয় বলে কেন উইলিয়ামসন ও মার্টিন গাপ্টিলের ব্য়াটে ভর দিয়ে নিউজিল্যান্ড তুলল ১৭। ফলে, সিরিজ জেতার জন্য ছয় বলে টিম ইন্ডিয়ার দরকার ছিল ১৮। রোহিত শর্মা প্রথম দু’বলে নিলেন তিন। তৃতীয় বলে লোকেশ রাহুল মারলেন চার। পরের বলে এল এক। টিম সাউদির সুপার ওভারের শেষ দুই বলে রোহিতকে করতে হত ১০ রান। পঞ্চম বলে হিটম্যান মারলেন বিশাল ছক্কা। শেষ বলেও মারলেন ছয়। ছিনিয়ে আনলেন অবিশ্বাস্য জয়। সুপার ওভারে ২০ রান তুলে সিরিজ দখল করল টিম ইন্ডিয়া।
New Zealand score 17/0 👏
— ICC (@ICC) January 29, 2020
Can India chase it?#NZvIND pic.twitter.com/RqCGlR3YlU
জেতার জন্য নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৮০ রান। সেই লক্ষ্যে মার্টিন গাপ্টিল ও কলিন মুনরো ভাল শুরু করেছিলেন। প্রথম পাঁচ ওভারে উঠেছিল ৪৩ রান। এর মধ্যে পঞ্চম ওভারে লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহালের বলে কঠিন ক্যাচ দিয়েছিলেন গাপ্টিল। স্লিপে যা ধরে রাখতে পারেননি বিরাট কোহালি। তবে ষষ্ঠ ওভারে শার্দুল ঠাকুরের বলে সুইপারে গাপ্টিলের (২১ বলে ৩১) ক্যাচ ধরলেন পরিবর্ত ফিল্ডার সঞ্জু স্যামসন। পরের ওভারেই ফের ধাক্কা। রবীন্দ্র জাডেজাকে ছয় মারতে গিয়ে স্টাম্পড হলেন মুনরো (১৬ বলে ১৪)।
আরও পড়ুন: সুপারহিট হিট ম্যান
ভারতীয় দলের ফিল্ডিংয়ের প্রশংসা এখন শোনা যায় সবসময়। এদিন কিন্তু দলের সেরা ফিল্ডার রবীন্দ্র জাডেজা ফেললেন মিচেল স্যান্টনারের সহজ ক্যাচ। যা নেওয়া উচিত ছিল। আউটফিল্ডে পর পর বল গলাতে দেখা গেল মহম্মদ শামি, শিবম দুবেদের। যা চাপ কমিয়ে দিল বিপক্ষ ইনিংসে। ব্যাটে রানের গতি মন্থর করে দেওয়ার পর বল হাতেও দিনটা ভাল গেল না শিবমের। একমাত্র ওভারে দিলেন ১৪ রান!
স্যান্টনারকে (১১ বলে ৯) শেষ পর্যন্ত ফেরালেন চহাল। বোল্ড করলেন তিনি। কেন উইলিয়ামসনই টানছেন নিউজিল্যান্ডকে। অধিনায়কোচিত ইনিংসে ২৮ বলে পৌঁছে গেলেন হাফ-সেঞ্চুরিতে। যাতে ছিল চারটি চার ও তিনটি ছয়। চতুর্থ উইকেটে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমির সঙ্গে উইলিয়ামসন ৪৯ রান যোগ করে চাপে ফেলেছিলেন ভারতকে। শার্দুল ঠাকুরের বলে গ্র্যান্ডহোমি (১২ বলে ৫) ফিরলেও উইলিয়ামসন থামেননি। পরের ওভারেই জশপ্রীত বুমরাকে টানা তিন বার পাঠান সীমানার বাইরে।
At the half-way mark, New Zealand are 79/2, chasing 180.
— BCCI (@BCCI) January 29, 2020
Live - https://t.co/7O8uUN3YGO #NZvIND pic.twitter.com/kpVh5xHlHr
সিরিজ জয়ের হাতছানির ম্যাচে ঝোড়ো শুরু করেছিল ভারত। কিন্তু, মিডল ওভারে ১৩ বলের মধ্যে হারাতে হয়েছিল তিন উইকেট। সেই ধাক্কা সামলে ওঠা গেল না। পর পর উইকেট হারিয়ে গতি কমল ইনিংসের। ফলে শেষের দিকে প্রত্যাশিত ঝড় উঠল না। পরিণতি, সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ভারত পাঁচ উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ১৭৯।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল আক্রমণাত্মক থেকেছিলেন প্রথম ওভার থেকেই। ভারতের পঞ্চাশ এসেছিল ৩৩ বলে। পাওয়ারপ্লে-র প্রথম ছয় ওভারে উঠেছিল ৬৯ রান। হিটম্যান পঞ্চাশে পৌঁছতে নিয়েছিলেন মাত্র ২৩ বল। এর মধ্যে ষষ্ঠ ওভারে কিউয়ি পেসার হামিশ বেনেট দিয়েছিলেন ২৭ রান। সেই ওভারে রোহিতের ব্যাট থেকেই এসেছিল ২৬ রান। ছয় মেরে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওপেনার হিসেবে ১০,০০০ রানও করে ফেলেছিলেন রোহিত। ভারতীয়দের মধ্যে এই কৃতিত্ব রয়েছে সুনীল গাওস্কর, সচিন তেন্ডুলকর ও বীরেন্দ্র সহবাগের। রোহিত হলেন চতুর্থ ভারতীয়।
India finish on 179/5.
— ICC (@ICC) January 29, 2020
They scored 52 runs in their last five overs.
Can New Zealand save the #NZvIND series by chasing this down? pic.twitter.com/LROpQA9xPe
কিন্তু তার পরই ম্যাচে ফিরেছিল নিউজিল্যান্ড। পর পর ড্রেসিংরুমে ফিরেছিলেন লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা ও শিবম দুবে।কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমির বলে কাট মারতে গিয়ে পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন রাহুল। ১৯ বলে ২৭ রান করে ফিরেছিলেন তিনি। ৮.৬ ওভারে ৮৯ রানে প্রথম উইকেট পড়েছিল ভারতের। দ্বিতীয় উইকেট পড়েছিল ১০.৪ ওভারে, দলীয় ৯৪ রানে। হামিশ বেনেটকে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছিলেন রোহিত। ৪০ বলে ছয়টি চার ও তিনটি ছয়ের সাহায্যে ৬৫ করেছিলেন তিনি।
Another day at office. Another record for #KingKohli 👑 pic.twitter.com/k9BmqtugWf
— BCCI (@BCCI) January 29, 2020
বেনেটের ওই ওভারেই, দু’বল পরে মারতে গিয়ে থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়েছিলেন শিবম দুবে। তিন নম্বরে নিজে না এসে তাঁকে পাঠিয়েছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহালি। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না শিবম (পাঁচ বলে ২)। শ্রেয়াস আইয়ার (১৬ বলে ১৭) ভাল খেলছিলেন, কিন্তু দ্রুত ফিরলেন তিনিও। বিরাট কোহালি খেলছিলেন ভালই। বড় শট না নিলেও টানছিলেন দলকে। ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডও গড়লেন। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত দলকে স্বস্তির জায়গায় পৌঁছে দিতে পারলেন না। চার নম্বরে নেমে ২৭ বলে ৩৮ করে বেনেটের বলে সাউদিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন কোহালি। তাঁর ইনিংসে ছিল দুটো চার ও একটা ছয়। কোহালি ফেরার পর মণীশ পাণ্ডে ও রবীন্দ্র জাডেজা দলকে ১৭৯ রানে পৌঁছে দিলেন। ছয় বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকলেন মণীশ।পাঁচ বলে জাডেজা করলেন ১০। দু’জনে অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে সাত বলে যোগ করলেন ১৯ রান। তিন উইকেট নিয়ে কিউদের সফলতম বোলার বেনেট। তবে তিনি দিলেন ৫৪ রান।
Back to back SIXES for the HITMAN
— BCCI (@BCCI) January 29, 2020
Live - https://t.co/7O8uUN3YGO #NZvIND pic.twitter.com/uzepaAzhMc
তার আগে সিরিজে টানা তিন বার টস জিতেছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। অকল্যান্ডে প্রথম দুই ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন তিনি। বুধবার টস জিতে উল্টো পথে হেঁটে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিউয়িদের এগারোয় একটি পরিবর্তন ঘটেছিল। ভারতীয় দলে কোনও বদল ঘটেনি, জানিয়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহালি। তবে, টস জিতলে তিনি যে ফিল্ডিং নিতেন, তা জানালেন নির্দ্বিধায়।
আরও পড়ুন: আইপিএলে ভাল কিছু করলে বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নিতে পারেন এঁরা
আরও পড়ুন: এক ম্যাচে ৪৮ ছক্কা, ৭০ বাউন্ডারি! বাংলাদেশের ঘরোয়া ম্যাচ নিয়ে দানা বাঁধছে সন্দেহ
প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে দাপটে জিতেছিল ভারত। গত শুক্রবার অকল্যান্ডে টস হেরে দু’শোর বেশি রান তাড়া করতে নেমে জয় এসেছিল ছয় উইকেটে। রবিবারও রান তাড়া করতে হয়েছিল ভারতকে। কিন্তু সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাল্টে গিয়েছি পিচের চরিত্র। মন্থর পিচে পরিস্থিতি অনুসারে ধীরে সুস্থে করতে হয়েছিল রান তাড়া। আর তাতেও সাত উইকেটে জয় আটকায়নি।
Milestone Alert - Rohit Sharma now has 10K international runs as an opener 👏👏
— BCCI (@BCCI) January 29, 2020
HITMAN on the go 💪 pic.twitter.com/cVUXdOeWut
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দলের মধ্যে আসলে তফাত গড়ে দিয়েছেন ভারতের বোলাররা। আরও নির্দিষ্ট করে, ভারতের ডেথ ওভার বোলিংই জিতিয়েছে দলকে। যাতে মধ্যমণি হয়ে ফুটে উঠছেন জশপ্রীত বুমরা। সিরিজে আট ওভারে তাঁকে মাত্র দুটো তিনটি বাউন্ডারি মেরেছে বিপক্ষ। ডেথে তাঁর জন্য দুই ওভার রাখছেন বিরাট কোহালি। আর সেই দুই ওভারে মারতে পারছেন না কিউয়ি ব্যাটসম্যানরা। হোম টিমের শিবিরে রীতিমতো ত্রাসের সঞ্চার করে ফেলেছেন বুমরা। আর তা এতটাই যে মার্টিন গাপ্টিল প্রকাশ্যে বলেছেন, সিরিজের শেষ তিন ম্যাচে বুমরার অফ-ফর্মই তাঁদের লড়াইয়ে ফেরাতে পারে!
শুধু বুমরা নয়, এই টি-টোয়েন্টি সিরিজে নজর কেড়েছেন লোকেশ রাহুল ও শ্রেয়াস আইয়ার। দু’জনেই ব্যাট হাতে থেকেছেন ধারাবাহিক। যা ভরসা দিয়েছে ভারতীয় দলকে। রোহিত শর্মা প্রথম দুই ম্যাচে রান না পেলেও তা সমস্যা হয়ে ওঠেনি। কোহালিও রান পাননি দ্বিতীয় ম্যাচে। কিন্তু তা বাধা হয়ে ওঠেনি। চার নম্বরে শ্রেয়াসের অবদান সেই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
New Zealand have won the toss and they will bowl first in the 3rd T20I.#NZvIND pic.twitter.com/l9nS0lK4PU
— BCCI (@BCCI) January 29, 2020
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy