চলমান ফিউচার ট্যুর প্রজেক্টে (এফটিপি) ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবচেয়ে কম ম্যাচ বরাদ্দ হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। ইংল্যান্ডের মাটিতে আতিথ্য পাচ্ছে না বাংলাদেশ দল। দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিতে মাত্র একটি হোম সিরিজে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। সে কারনেই আগামী অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে নিয়ে একটু বেশিই সিরিয়াস বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগের (বিসিএল) সূচী এগিয়ে আনা হয়েছে মূলত: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজকে সামনে রেখে ক্রিকেটারদের প্রস্তুতিকে গুরুত্ব দিতেই। বুধবার থেকে কন্ডিশনিং ক্যাম্প শুরু করেছে ক্রিকেটাররা! আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পা রাখার কথা ঢাকায়। ৩টি ওয়ানডে এবং ২টি টেস্ট ম্যাচের সূচীও ঘোষিত হয়েছে ইতিমধ্যে। তবে যে দলটির বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত ক্রিকেটাররা, সেই ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। গুলশানের হলি আর্টিজানে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলায় ইতালি, জাপানি নাগরিকদের হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে সিরিজের ভাগ্য তাদের সরকারের উপর ছেড়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলশ ক্রিকেট বোর্ড ( ইসিবি)। ইংল্যান্ডের ওয়ান ডে অধিনায়ক মরগ্যান বাংলাদেশ সফর নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে বিকল্প ভেন্যুতে সিরিজ আয়োজনের প্রস্তাব দিয়ে সফরের সম্ভাবনাকে ফেলে দিয়েছেন শঙ্কার মুখে।
তবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে উদ্বিগ্ন নন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট সংস্কৃতি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে সুসম্পর্কের অতীত থেকেই যথাসময়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে আশাবাদি মাশরাফি। ‘‘ব্যক্তিগতভাবে আশা করি সিরিজটা হবে। বাংলাদেশের সমর্থকরা অনেক দিন ধরেই খেলা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশের সবাই খেলাটা খুব পছন্দ করে। ইংল্যান্ড সব সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল, তখনও কিন্তু তারা দল পাঠিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি তারা আসবে।’’
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন না মাশরাফি। ‘‘বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা সবাই ক্রিকেট নিয়ে খুব চিন্তা করেন। এদেশে সব জায়গায় ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হয়। আমি মনে করি, বাংলাদেশের মানুষ জানে কিভাবে ক্রিকেটারদের সম্মান করতে হয়। অন্য দেশ থেকে যারা আসেন, তাদেরকে সম্মান দিতে জানেন এ দেশের সবাই। ইংল্যান্ডকে আগেও যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। এবারও দেওয়া হবে। ক্রিকেট সংস্কৃতিটা ধরে রাখতে ইংল্যান্ড দল আসবে বলে আশা করছি। আমার মনে হয় না কোনও সমস্যা হবে।’’
টেস্ট মর্যাদা পাবার পর ১৬ বছরে বাংলাদেশ দল খেলেছে ৯৩ টি টেস্ট, বছরপ্রতি ছ’টিরর নীচে! বিরতি দিয়ে দিয়ে টেস্ট খেলার আক্ষেপ বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের নতুন নয়। ২০০৬ সালের এপ্রিলের পর ২০০৭ ওয়ান ডে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বড্ড বড় ভুল করে ফেলেছিল বিসিবি। টানা ১৩ মাস টেস্টের বাইরে ক্রিকেটারদের রেখে। ২০১১-এর ডিসেম্বরের পর পরবর্তী টেস্টের জন্য অপেক্ষায় থেকেছেন তামীম, মুশফিকুর, সাকিবরা ১১ মাস। তবে টেস্টে লম্বা বিরতির রেকর্ড এবার সেই অতীতকে যাচ্ছে ছাড়িয়ে। ২০১৫-এর ৩ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরবর্তী টেস্টের মাঝে বিরতি ১৪ মাস ১৭ দিন! লম্বা বিরতিতে বাংলাদেশ দলের ম্যাচ খেলাকে না হয় নিয়তি বলে মেনে নেওয়া যায়। তবে ৫০ ওভারের ম্যাচে যে দলটির বিস্ময়কর উত্থানে বিস্মিত ক্রিকেট বিশ্ব, সেই বাংলাদেশ দলকে কেন এই ভার্সনের ক্রিকেটে পেতে হবে লম্বা বিরতি? অথচ, কি জানেন, গত ১১ নভেম্বরে জিম্বাবয়ের বিপক্ষে ওয়ান ডে ম্যাচের পর এফটিপি অনুযায়ী বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ আগামী ৭ অক্টোবর। বিরতি প্রায় ১১ মাস। এখানেও কিন্তু সুযোগটি ঝুলছে ইসিবির সিদ্ধান্তের উপর! নিরাপত্তা শঙ্কায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর হয়েছে বাতিল। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) তাদের ক্রিকেটারদের ,ফ্লাইটের টিকিট কেটে রেখেও পাঠায়নি বাংলাদেশ সফরে। তাদের দেখাদেখি গত বছর দক্ষিন আফ্রিকা মহিলা ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরও হয়েছে দু’দুবার বাতিল! নিরাপত্তা শঙ্কার অজুহাত তুলে এ বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে দল প্রত্যাহার করেছে অস্ট্রেলিয়া। এবার নিরাপত্তা ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিল হলে বড় ধরনের উৎকণ্ঠায় পড়তে হবে বিসিবিকে।
আরও খবর
টেস্ট ক্রিকেটকে মিস করি: ধোনি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy