Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Krishanu Dey

কৃশানু দে-র মৃত্যুদিন, সেই কার্টিলেজ এখনও রেখে দিয়েছেন স্ত্রী পনি

নাকতলার একই পাড়ায় ছোটবেলার প্রেম৷ ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ শব্দটা তখনও বাঙালিদের অভিধানে ঢোকেনি৷

খেলোয়াড় জীবন। মাঠে নামার আগে কৃশানু।

খেলোয়াড় জীবন। মাঠে নামার আগে কৃশানু। ফাইল চিত্র

সব্যসাচী বাগচী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২১ ১৫:৩৯
Share: Save:

১৮ বছর হয়ে গেল কৃশানু দে নেই। শনিবার ২০ মার্চ তাঁর মৃত্যুদিন। নাকতলার বাড়ির ছোট শিশিতে সেই কার্টিলেজের টুকরো এখনও পড়ে আছে। রোজ এক বার করে সেটা দেখেন স্ত্রী পনি দে। শনিবার সম্ভবত আরও বেশি করে দেখছেন। এ দিন দুপুরে ভালবাসার মানুষের কথা বলতে গিয়ে তাঁর গলা বুজে আসছিল। চোখের জল থামানোর নিষ্ফল চেষ্টার মধ্যেই পনি দে বললেন, “রন্টুর ওই কার্টিলেজটা আমার কাছে রাখা আছে। ওটা দেখেই নিজেকে বলি, কে বলল ও চলে গিয়েছে? ও তো আমার কাছেই আছে!”

নাকতলার একই পাড়ায় ছোটবেলার প্রেম। ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ শব্দটা তখনও বাঙালিদের অভিধানে ঢোকেনি। প্রিয় সঙ্গীর সঙ্গে কাটানো স্মৃতি নিয়ে আলোচনা হতেই যেন পিছনে ফিরে যাচ্ছিলেন পনি। বললেন, “আমি নই, ফুটবলই ওর প্রথম প্রেম। খেলা থাকলে জন্মদিন হোক আর যাই হোক, কোনও কিছুতেই পাওয়া যেত না ওকে।” এখনও তাই হয়তো মাঠের ঘাসেই কৃশানুকে খুঁজে বেড়ান। বললেন, “ও যখন খেলত, চাইত না আমি মাঠে আসি। আর এখন আমি মাঠে আসি, কিন্তু রন্টু নেই। তবু মাঠে গেলে লাল-হলুদ জার্সির মধ্যে ওকে খুঁজে বেড়াই। মনে হয় এই বুঝি দেখা পাব!”

কিন্তু শুধুই কি কার্টিলেজ? ডান হাতটা সামনের দিকে তুলে বাঁ পায়ের ঠিকানা লেখা পাস ছিল তাঁর বিশেষত্ব। সেই সব জার্সি এখন স্মৃতি হয়ে আলমারিতে বন্দি। ইস্টবেঙ্গলে প্রথম জীবনের ৬ কিংবা পরবর্তী কালের ৩১ নম্বর জার্সিতেও হাত বুলিয়ে দেখেন পনি। বললেন, “আমার কথা না শুনলেও সোহমের জন্মের সময় কিন্তু আমাদের পাশে ছিল। সেটা ১৯৯০ সাল। সন্তানের জন্য ও ডুরান্ড খেলতে যায়নি।সেই দিনগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে।”

যন্ত্রণা পান, আবার গর্বিতও হন। আবার কখনও অভিমানী। কৃশানুর মৃত্যুর পর চাকরি নিয়েছেন। ছেলে সোহমকে নিয়ে সংসার চালাতে হবে তো। তাঁকে ‘ভারতীয় মারাদোনা’ বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি কী স্বীকৃতি পেলেন? প্রশ্ন তুলছেন পনি। অভিমানে ছেলে সোহমকে ফুটবলার হতে দেননি। অবশ্য মাঠের টানকে উপেক্ষা করতে পারেননি জুনিয়র কৃশানুও। বেছে নিয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিকতা। পনি এ বার বলেন, “কত আর আটকাব। দেখতেও অনেকটা বাবার মতো৷ লাজুক স্বভাবটাও তাই।"

সোহমের কাছে ওঁর বাবা ছিলেন ‘প্রিয় বন্ধু’। ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সিনেমা দেখা, কত স্মৃতি। পনি বলে উঠলেন, “আমরা ঘুরতে যেতাম দল বেঁধে। আমি, রন্টু, বিকাশ, বিকাশের বউ, টুলুদা (প্রয়াত সুদীপ চট্টোপাধ্যায়কে এই নামেই ডাকতেন ফুটবলাররা), ওর বউ সবাই এক সঙ্গে যেতাম। বিয়ের পর প্রথম বার কাঠমান্ডুতেও এক সঙ্গে গিয়েছিল কৃশানু আর সুদীপ।"

বাবার কোলে ছোট্ট সোহম। ফাইল চিত্র।

বাবার কোলে ছোট্ট সোহম। ফাইল চিত্র।

শিল্প আর শক্তি, দুই ঘরানার দুই মিডফিল্ডারের জীবনে অকালেই শেষ বাঁশি বেজে গিয়েছে। সুদীপের জন্মদিন আবার ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ। তবে আছেন বিকাশ পাঁজি। পনি যেমন জীবনের, বিকাশ তেমনই কৃশানুর মাঠের প্রেম। আজ কৃশানুর মৃত্যু দিনে একই রকম আবেগতাড়িত বিকাশ পাঁজি। বুকে একরাশ যন্ত্রণা ও অভিমান নিয়ে বিকাশ বললেন, “ও রকম ফুটবলার আর জন্মাবে না। খেলা শিখে কৃশানু দে হওয়া যায় না। তবু চলে যাওয়ার পরও স্বীকৃতি পেল কোথায়? কেউ তো কিছু করল না। পাটুলী মোড়ে ইএম বাইপাসের ধারে ওর একটা মূর্তি গড়া হয়েছে। এর বাইরে কেউ কোনও সম্মান দিয়েছে বলে শুনিনি। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে একটা ব্লক রন্টুর নামে করা যেত।ফেডারেশনও পারত ওর নামে কোনও বিশেষ পুরস্কার চালু করতে। কিন্তু কোথায় কী!”

তবে ২০ মার্চ শুধু নাকতলার দে পরিবারের কাছে অভিশপ্ত নয়, কয়েক কিলোমিটার দূরে সল্টলেকের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কাছেও একই রকম অভিশপ্ত। কারণ এই দিনেই যে গত বছর প্রিয় ছাত্রের কাছে চলে গিয়েছিলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষে পনি যোগ করলেন, “প্রদীপদা ওকে খুব স্নেহ করতেন। রন্টুর অকাল বিদায় উনি মানতে পারেননি। তবে এ বার হয়তো গুরু ও ছাত্র মিলে ফুটবল নিয়ে দিব্যি আড্ডা দিচ্ছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy