রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ছিল এ বার জনসাধারণের পছন্দ। যাদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ রবিবার হাজির হয়েছিলেন চিন্নাস্বামীতে। তার উপর কত কোটি টিভিতে ফাইনালটা দেখলেন, তার কোনও হিসেব নেই। আরসিবির হেরে যাওয়াটা অনেকেই ব্যক্তিগত শোক হিসেবে নিয়েছেন। তাঁদের মস্তিষ্কে এবং হৃদয়ে আরসিবি ছিল সেই সোনালি রাজহাঁস, যারা আইপিএল-পুকুরের কাদামাখা জলের উপর ভাসত। হায়দরাবাদের নৃশংস আক্রমণের পর যারা নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে।
সাধারণ জীবনের মতো খেলাধুলোর মঞ্চেও নায়কদের প্রতি এই সহানুভূতি খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এই গ্রীষ্মে বিরাট কোহালি প্রশ্নাতীত ভাবে নায়ক ছিল। যে প্রচুর মহাতারকার মধ্যে আরও ব়ড় তারকা হিসেবে জ্বলে উঠেছিল। যে এমন সুর গুনগুন করছিল যা আমরা জীবনে কোনও দিন শুনিনি। মাঝেমধ্যে ওর টিমের বোলিংয়ে সুরটা কেটে যাচ্ছিল। তবু শ্রোতারা সিট ছেড়ে উঠে যাননি। তবে শেষ পর্যন্ত বিরাট কোহালিও বোলিং-ক্যাকোফোনির উপরে উঠতে পারল না।
প্রথমেই বলি, আরসিবির ব্যাটিং যত নায়কোচিত, ওদের বোলিং ততই জঘন্য। টুর্নামেন্টের পরের দিকে তাও কোনও মতে বোলিংটা ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল। যার সুবাদে আটটা ম্যাচের মধ্যে ওরা সাতটায় জিতল। ফাইনালে অবশ্য আরসিবি বোলিং আবার সেই পুরনো রূপে ফিরে গেল। সেই দুঃস্বপ্ন আবার ফিরিয়ে আনল। ওয়াটসনের দু’একটা ওভার হয়তো আবদুল্লাহকে দিলে ভাল হত। বা বেবির জায়গায় ‘ছেলে’ সরফরাজকে খেলানো যেত।
হায়দরাবাদের গল্পটা ছিল অসীম আত্মবিশ্বাসের। টিমের ভিত ওদের বোলাররা। যারা স্টিলের এমন পোক্ত রড যে, ওদের উপর আকাশচুম্বী ইমারত বানিয়ে ফেলা যায়। ব্যাটিংয়ে একমাত্র ভরসা যে ওয়ার্নার, তাতে ওদের কিছুই আসে-যায়নি। ওদের যে কোনও তিন নম্বর ব্যাটসম্যান ছিল না, তাতেও নয়। ওদের ব্যাটিং ল্যাজ যে কার্যকর হয়নি, তাতেও নয়। ভুবি আর মুস্তাফিজুর যদি ব্যাটসম্যান হত, তা হলে হায়দরাবাদকে নিয়েও বিরাট কোহালির মতো রূপকথা লেখা যেত।
টুর্নামেন্টের অন্য দুই ফেভারিট দল নিশ্চয়ই ফাইনালটা দেখেছে। ঘরের মাঠ চলে যাওয়াটা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে খুব বড় ধাক্কা দিয়েছিল। অন্য দিকে, ইউসুফ পাঠানের উপর কেকেআর বড্ড বেশি বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল। ওরা যে খুব ভাল করতে পারল না, সেটা বিরল। এ বারের আইপিএল যে কতটা হাড্ডাহাড্ডি ছিল, এটা তারও প্রমাণ। গুজরাতকে যেমন শুরু থেকে বিপজ্জনক দেখাচ্ছিল। দিল্লিও প্রথম বার এত ভাল পারফর্ম করল।
আইপিএলের খুব বেশি গল্প যারা বলতে চাইবে না, সেই দুটো টিম হল পুণে আর পঞ্জাব। ধোনি তবু মাথা উঁচু করে আইপিএল শেষ করতে পারল। মুরলী বিজয় ভাল অধিনায়কত্ব করার তৃপ্তি নিয়ে। এই আইপিএলে দুশোর বেশি রান খুব একটা ওঠেনি। ছক্কাও তুলনামূলক ভাবে কম এসেছে। বহু ম্যাচে ১৬০-১৭০ রানের মাঝামাঝি স্কোর উঠেছে। এই আইপিএলটাকে ‘বোলারদের প্রতিশোধ’ আখ্যা দেওয়া যেত। কিন্তু যাচ্ছে না শুধু দু’জনের কারণে— বিরাট কোহালি আর ডেভিড ওয়ার্নার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy