Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ওয়ার্নের ভবিষ্যদ্বাণী সোজা গঙ্গায় ফেলে জিতলাম রে...

তৃতীয় বার আইপিএল ট্রফি হাতে তুলতে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে আর দু’টো ম্যাচ জিততে হবে। যদি শেষ পর্যন্ত সেটা হয়, তা হলে ৯ মে-র রাতটা কিন্তু ভুলতে পারবেন না নাইটরা।

জয়ের আনন্দে নাইটরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

জয়ের আনন্দে নাইটরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

কৌশিক দাশ
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০৬:৩২
Share: Save:

বাদশা রাগলে কী হয় বোঝা যাচ্ছে তো?

তাঁর রাগ কমাতে তখন এগারো সৈন্য নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন! দলের তরুণ রক্তও এমন বীরত্বের নমুনা রেখে যায় যে চমকে উঠতে হয়।

তৃতীয় বার আইপিএল ট্রফি হাতে তুলতে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে আর দু’টো ম্যাচ জিততে হবে। যদি শেষ পর্যন্ত সেটা হয়, তা হলে ৯ মে-র রাতটা কিন্তু ভুলতে পারবেন না নাইটরা। যে রাতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে হারের পরে ক্রুদ্ধ শাহরুখ খান দলের ক্রিকেটারদের লড়াকু মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন। যে রাতের পরে রবিন উথাপ্পারা শপথ করেন, কিং খানের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনবেনই। যে রাতের পরে টানা চারটে ম্যাচ জিতে ট্রফির আরও কাছে কেকেআর। বুধবার ইডেনে তাদের শিকার রাজস্থান রয়্যালস। শুক্রবার সামনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।

এক দিকে আন্দ্রে রাসেল, দীনেশ কার্তিক, কুলদীপ যাদব। অন্য দিকে শুভমন গিল, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের এত ভাল মিশেল বোধ হয় আর কোথাও দেখা যাচ্ছে না এ বারের আইপিএলে। যে রসায়নটাই কেকেআরের ফিরে আসার পিছনে সব চেয়ে বড় কারণ হয়ে উঠেছে।

টুইট আরও এক জন করেছিলেন। তিনি— শেন ওয়ার্ন। কেকেআরের ইনিংস সাত উইকেটে ১৬৯ রানে থেমে যাওয়ার পরে রাজস্থান মেন্টরের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, ‘আমার ছেলেরা এই রানটা ১৮ ওভারে তুলে দেবে। সঞ্জু স্যামসন সত্তরের ওপর রান করবে।’ তা, ওয়ার্ন পোকার খেলায় দক্ষ হয়ে উঠেছেন ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যৎ যে এখনও দেখার ক্ষমতা পাননি তা বোঝা গেল। ওয়ার্নের ভবিষ্যদ্বাণী সোজা গঙ্গায় ফেলে ২৫ রানে ম্যাচ জিতে নিলেন রাসেলরা।

একটা সময় টেনিস সার্কিটে এক জনের ফোরহ্যান্ডকে বলা হত ‘জস’। স্টিভন স্পিলবার্গের হাঙর নিয়ে ভয়ঙ্কর ছবিটা মনে আছে? সেই ‘জস’— যেখানে হাঙরের একটা কামড়ে শেষ হয়ে যেত ক্ষুদ্র মনুষ্য জীবন। ঠিক সে ভাবেই টেনিস কোর্টে স্টেফি গ্রাফের সেই ভয়ঙ্কর ফোরহ্যান্ডের সামনে উড়ে যেতেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা। বুধবারের ইডেনে সে রকমই একটা ভয়ঙ্কর ফোরহ্যান্ড দেখা গেল!

জোফ্রা আর্চারের স্লোয়ার বলে রাসেল যে শটটা মারলেন, তাকে ক্রিকেটীয় ফোরহ্যান্ড বললে অন্যায় হবে না। অন্তত হিংস্রতার দিক দিয়ে তো বটেই। স্লোয়ারটা বুঝে নিয়ে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ বেশি সময় অপেক্ষা করলেন। তার পরে টেনিসে ফোরহ্যান্ড মারার মতোই ব্যাটটা চালালেন। টেনিস হলে এ রকম শট কোর্টে ড্রপ খেয়ে বিদ্যুৎগতিতে প্রতিদ্বন্দ্বীর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেত। এখানে বলটা ড্রপ খেল গিয়ে ইডেনের গ্যালারির মাঝ বরাবর! শুধু স্কোরবোর্ডে ছ’রান ওঠাই নয়, বোলারের মনোবলেও রাক্ষুসে কামড় বসিয়ে যায় এ সব শট।

এ বারের আইপিএলে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের শক্তি। কী ভাবে তাঁর মিসহিটও গ্যালারিতে গিয়ে পড়ছে, এই নিয়ে পরে ‘পিএইচডি পেপার’ লেখা হলে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। বুধবার যেমন সঞ্জয় মঞ্জরেকর এবং মাইকেল ক্লার্কের মধ্যে হালকা মতান্তরও দেখা দিল ধারাভাষ্য দেওয়ার সময়। মঞ্জরেকরের বক্তব্য, এক জন ভারতীয় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানের মধ্যে শক্তির পার্থক্যটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন রাসেল। রাসেলের মিসহিটে ছয় হয়, কার্তিকের মিসহিটে ক্যাচ। আবার ক্লার্কের বক্তব্য, এর মধ্যে দেশজ কোনও ব্যাপার নেই। ফারাকটা চেহারার। এক জনের কাঠামো ছ’ফুট চার ইঞ্চির, অন্য জনের পাঁচ ফুট আট ইঞ্চির।

রাজস্থান চেয়েছিল, ইডেনে স্পিনের ফাঁদে আটকে দেবে কেকেআরকে। ব্যাপারটা সে দিকেই যাচ্ছিল। প্রথম আট ওভারের মধ্যে ৫১ রানে চার উইকেট। যেখান থেকে প্রথম ম্যাচটা ধরেন কার্তিক (৩৮ বলে ৫২) এবং শুভমন (১৭ বলে ২৮)। কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৬ ওভারের শেষে স্কোর ছিল পাঁচ উইকেটে ১১৬। যেখান থেকে শেষ চার ওভারে কেকেআর তুলল ৫৩ রান। ম্যাচের সেরা রাসেল (২৫ বলে ৪৯ ন.আ.) একাই করলেন ৪১! ওখানেই প্রথম ধাক্কাটা খায় রাজস্থান। দ্বিতীয় ধাক্কাটা ব্যাটিংয়ের শেষ চার ওভারে। ১৬ ওভারের শেষে রাজস্থানের স্কোর ছিল ১১৯-২। কিন্তু রাজস্থানের যে কোনও রাসেল ছিল না। আর কেকেআরের ছিল দুই নাইট—অভিজ্ঞ কুলদীপ, তরুণ প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। কুলদীপকে মারতেই পারলেন না সঞ্জু স্যামসনরা। আর প্রসিদ্ধ ১৮তম ওভারে তিন রান দিয়ে নিলেন এক উইকেট। যার পরে সম্ভবত হ্যারি হুডিনির মতো জাদুকরও রাজস্থানকে জেতাতে পারতেন না।

এর পরে কি আর বাদশাকে কেউ রাগাতে যাবে? তাঁকে রাগতে দেখলে যে তাঁর এগারো নাইট ব়ড্ড খেপে যান!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE