মোহনবাগানের প্রাণভোমরা বেইতিয়া। —ফাইল চিত্র।
এতদিন স্পেনে তাঁরা ছিলেন প্রতিপক্ষ। মোহনবাগান জার্সিতে তাঁরা একই সুরে বাঁধা পড়ে গিয়েছেন। এক মন, এক লক্ষ্য নিয়ে নামছেন মাঠে। রবিবাসরীয় ডার্বির সেরা মোহনবাগানের স্পেনীয় তারকা জোসেবা বেইতিয়া সোমবার আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘মারবেয়াতে আমি যখন খেলতাম, তখন মোরান্তে আর সালভা ছিল মুরসিয়াতে। ওদের বিরুদ্ধে আমি খেলেছি। আবার আমি যখন রিয়াল সোসিয়েদাদে তখন (ফ্রান) গনজালেজ ছিল জারাগোজায়। ওর বিরুদ্ধেও নেমেছি। এখন আমরা সবাই একই ড্রেসিং রুম শেয়ার করছি।’’
বেইতিয়ার পায়ের দিকে রবিবার তাকিয়েছিলেন মোহনবাগান সমর্থকরা। স্পেনে বসেই ডার্বির গল্প শুনেছেন তিনি। রবিবার নিজে নামলেন, দেখলেন ফুটন্ত গ্যালারির দৃশ্য। বাগানের দশ নম্বর জার্সিধারী বলছিলেন, ‘‘দারুণ পরিবেশ ছিল। এরকম পরিবেশ এক জন ফুটবলারকে ভাল খেলার জন্য উজ্জীবিত করে। ম্যাচটায় আমাদেরই দাপট ছিল। জিততেও পারতাম আমরা। সমর্থকরা আমাদের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছিলেন গ্যালারি থেকে। ম্যাচটা জিততে না পারায় সমর্থকদের জন্য এখন খারাপই লাগছে।’’
ডার্বি ম্যাচে গোল করার মতো সুযোগ বেশি তৈরি হয়নি। বাগানের ভিপি সুহের একবারই গোল করার মতো জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু, ইস্টবঙ্গলের গোলকিপার রালতে সেই যাত্রায় সুহেরকে গোল করতে দেননি। নিন্দুকরা বলছেন, বাগান কোচ কিবু ভিকুনা যদি চামোরো সালভাকে নামাতেন, তা হলে ম্যাচের ফলাফল অন্য রকম কিছু হলেও হতে পারত? বেইতিয়া বলছেন, ‘‘সালভা চামোরো দারুণ স্ট্রাইকার। তবে সুহের খারাপ খেলেনি। গোলটা পেয়ে যেত। ওর দুর্ভাগ্য বলতে হবে। প্রথম একাদশ নির্বাচন নিয়ে অনেকেই মতামত দিচ্ছেন, তা আমিও শুনেছি। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে। দলগঠনের ব্যাপারে কোচই শেষ কথা। ওঁর সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানানো উচিত।’’ কোচ কিবুর হয়ে বলছেন তাঁর হাতের সেরা তাস।
আরও পড়ুন: নেই ব্যক্তিগত স্কিলের ঝলকানি, হল না গোল, হতাশই করল মরশুমের প্রথম ডার্বি
আরও পড়ুন: শুধু নিজের সময়েরই নয়, রেকর্ড বলছে বুমরা এগিয়ে অনেক কিংবদন্তির থেকেও
বড় ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা পরেও ঘোর এখনও কাটেনি বেইতিয়ার। এর আগে স্পেনে রিয়াল সোসিয়েদাদ বনাম অ্যাথলেটিক বিলবাও ডার্বিতে নেমেছেন সবুজ-মেরুন-এর মাঝমাঠের এই ফুটবলার। দু’ দেশের দুই ডার্বি প্রসঙ্গে বেইতিয়া বলছেন, ‘‘সেই ডার্বির পরিবেশ কলকাতা ডার্বির মতো ছিল না। এত দর্শকও স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন না। রবিবারের স্টেডিয়াম দেখে আমি বিস্মিত।’’
স্পেনেও ডার্বিতে নেমেছেন বেইতিয়া।
চলতি মরসুমের কলকাতা লিগে শুরুটা ভাল হয়নি মোহনবাগানের। প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় ম্যাচ ড্র করেছিল গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। ডার্বির আগে ম্যাচ জিতলেও রবিবার ড্র করায় সবুজ-মেরুন ধীর ধীরে পিছিয়ে পড়ছে লিগের দৌড় থেকে। কিবুর বাগানের বাকি রয়েছে সাতটি ম্যাচ। এ বার কি চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব? প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়ে বেইতিয়া বলছেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হতে কেন পারব না? বাকি ম্যাচগুলো জিততে পারলেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। প্রতিটি ম্যাচে আমরা মরিয়া লড়াই করব। সবটাই এখন আমাদের হাতে।’’ শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবকে কেবল জিতলেই হবে না, চ্যাম্পিয়নের দৌড়ে থাকা অন্য দলগুলোকেও পয়েন্ট নষ্ট করতে হবে। যদিও দিল্লি এখনও বহু দূর।
বাগান সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধছেন। সুদূর বাকু থেকে প্রাক্তন মোহনবাগান ফুটবলার সনি নর্দে বলেছেন, ‘‘এই দলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখুক সমর্থকরা।’’ সবুজ-মেরুন সমর্থকদের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দিয়েছেন বেইতিয়া। ইতিমধ্যেই ভক্তদের হৃদয় জিতে নিয়েছেন মোহনবাগানের ১০ নম্বর জার্সিধারী। গত কাল তাঁর নেতৃত্বেই আক্রমণে উঠছিল শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাব। নিষ্ফলা ডার্বির শেষে বাগান-ভক্তরা বেইতিয়াকে নিয়ে গানও ধরেছিলেন স্টেডিয়ামের বাইরে। লিওনেল মেসি-আন্দ্রেজ ইনিয়েস্তার ভক্ত হেসে বলছিলেন, ‘‘এই ক’দিনেই যে আমি মোহনবাগান সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছি, তার জন্য গর্ব বোধ করছি। সমর্থকরা আমাকে দ্রুত আপন করে নিয়েছেন। প্রতিটি ম্যাচের শেষে ওরা যাতে খুশি মনে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেই চেষ্টাই করতে হবে আমাদের।’’
মাঝমাঠের ভরসা বেইতিয়া।
স্পেনের সান সেবাস্টিয়ানের কাছে ছোট্ট শহর মুটরিকুর বাসিন্দা বেইতিয়া। কিবুর ডাকে চলে এসেছেন কলকাতায়। শহরে পা রাখার পর থেকেই প্র্যাকটিশ আর ম্যাচের জন্য কলকাতা ঘুরে দেখা হয়নি বেইতিয়ার। এই শহর এখনও তাঁর কাছে অপরিচিতই। তিনি বলছিলেন, ‘‘কলকাতায় আসার পর থেকেই কঠিন অনুশীলন করছি আমরা। ডুরান্ড কাপ শেষ হল। এখন চলছে কলকাতা লিগ। শহর ঘুরে দেখার সময় হয়নি।’’
ডার্বির আগে ষষ্ঠ বিদেশির নাম ঘোষণা করেছে মোহনবাগান। রিয়াল সোসিয়েদাদে জুলেন কলিনাসের সঙ্গে একসঙ্গে খেলেছেন দশ নম্বর জার্সিধারীর। রবিবার রাতেও ডার্বি নিয়ে জুলেনের সঙ্গে কথা হয়েছে বেইতিয়ার। ডার্বির গল্প শুনিয়েছেন বন্ধুকে। বেইতিয়া বলছিলেন, ‘‘জুলেন তো খেলা দেখেনি। আমার কাছে ম্যাচটা নিয়ে জানতে চাইছিল।’’
কয়েক দিন পরেই দুই বন্ধুর দেখা হবে মোহনবাগানে। অপেক্ষায় দিন গুনছেন বেইতিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy