আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাস বোধহয় এমন একটা দাপুটে জয়ের অপেক্ষায় ছিলেন। রয় কৃষ্ণ নামক আদ্যন্ত টিম ম্যানের গোটা ম্যাচ জুড়ে উপস্থিতি, ডেভিড উইলিয়ামস ও মনবীর সিংয়ের অনবদ্য গোল, এবং সেই দুটো গোলে ফিজি তারকার অবদান। সেমি ফাইনালের মত মরণ বাঁচন ম্যাচে দলের এমন খেলাই তো আশা করেছিলেন। কিন্তু গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্যের অবদান কীভাবে ভোলা যায়। সবমিলিয়ে অনবদ্য ও দাপুটে পারফরম্যান্স। এমন অসাধারণ ফুটবলের সৌজন্যে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডকে ২-১ গোলে হারিয়ে আবির্ভাবেই ফাইনালে চলে গেল এটিকে মোহনবাগান। এ বার সামনে শুধু সার্জিও লোবেরার মুম্বই সিটি এফসি।
শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলেছিল হাবাসের ছেলেরা। প্রথমার্ধেই বিপক্ষের বক্সে ১৬বার আক্রমণ হানিয়েছিলেন কৃষ্ণ, ডেভিড, মনবীররা। অবশ্য ভাগ্যও মঙ্গলবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে সবুজ-মেরুনের সঙ্গে ছিল। না হলে খালিদ জামিলের দল একাধিক গোলের সুযোগ নষ্টের সঙ্গে পেনাল্টি হাতছাড়া করে! লুইস মাচাদো যে ভাবে সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারালেন তাতে হয়তো তিনি নিজেকে কোনওদিন ক্ষমা করতে পারবেন না। তবে ওঁর সেই শট জালে ঢুকে গেলে শুভাশিস বসুকেও অগুনিত সবুজ-মেরুন সমর্থক আজীবন ক্ষমা করতে পারতেন না। কারণ ১ গোলে এগিয়ে থাকার সময় বক্সের মধ্যে কেউ বিপক্ষের স্ট্রাইকার ইদ্রিসা সাইলাকে ফাউল করেন!
ম্যাচের প্রথমার্ধে দাপট নিয়ে খেলল এটিকে মোহনবাগান। প্রথম লেগের সেমি ফাইনালে ৩৪ মিনিটে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন অজি স্ট্রাইকার। এ দিনও তিনিই প্রথম গোলটা করলেন। তবে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই একেবারে উল্টো ছবি। এক গোলে পিছিয়ে থাকা নর্থ-ইস্ট প্রথম থেকেই আক্রমণে ঝড় তোলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নাজেহাল হতে হয় সন্দেশ, তিরি, প্রীতমদের। দ্বিতীয়ার্ধের ২০ মিনিটের মধ্যে একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করে ফেলে খালিদের দল। বেশ কয়েকবার দুর্দান্ত দক্ষতায় দুই বার সবুজ-মেরুন শিবিরকে নিশ্চিত পতনের থেকে রক্ষা করলেন গোলরক্ষক অরিন্দম।
— Indian Super League (@IndSuperLeague) March 9, 2021
Brilliant strikes
A missed penalty
A competitive encounter
Check out how @atkmohunbaganfc secured their spot in the #HeroISLFinal
Full Highlightshttps://t.co/V73QLOuHdt#ATKMBNEU #LetsFootball pic.twitter.com/Dck5sgdo5L

মনবীরের এই গোলেও নিখুঁত পাস বাড়ালেন ফিজি তারকা। ছবি - আইএসএল
৬০ মিনিটের পর ফের ম্যাচে ফেরে এটিকে মোহনবাগান। একবার গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন রয় কৃষ্ণ। আশুতোষ মেহতা অনায়াসে গোল লাইন সেভ করেন। কিছুক্ষণ পরেই ফিজি তারকার পাস থেকে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন হাভি হার্নান্দেজ। যদিও এ বার সুযোগ নষ্ট করেননি পঞ্জাব তনয় মনবীর। প্রায় মাঝমাঠ থেকে তাঁর দিকে ঠিকানা লেখা পাস বাড়ান রয় কৃষ্ণ। ৬৮ মিনিটে তুলনামূলক কঠিন জায়গা থেকে একক দক্ষতায় জোরালো শটে গোল করে সবুজ-মেরুনের ব্যবধান বাড়ান মনবীর।
যদিও দুই গোলে পিছিয়ে থাকার পরেও খালিদের ছেলেরা লড়াই ছাড়েনি। রক্ষণের ভুল ও অরিন্দমের ক্ষণিকের অন্যমস্কতায় ভিপি সুহের গোল করে চলে গেলেন। খেলার বয়স তখন ৭৪ মিনিট। ৭৯ মিনিটে সবুজ-মেরুন বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পেয়েও গোল করতে পারেনি নর্থ-ইস্ট। ৮০ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে নর্থ-ইস্ট স্ট্রাইকার ইদ্রিসা সাইলাকে ফেলে দিলে হাবাসের দলের বিরুদ্ধে পেনাল্টি দিয়ে দেন রেফারি। কিন্তু সেই শট বাইরে মেরে সবুজ-মেরুনের জয় নিশ্চিত করে দেন লুইস মাচাদো। ৮৪ মিনিটে আশুতোষ মেহতার পাস থেকে আরও একবার গোলের কাছে পৌঁছেও শূন্য হাতে ফিরতে হয় এই বিদেশি স্ট্রাইকারকে। এ বার ৮৫ মিনিটে সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করলেন আশুতোষ নিজেই।

গোল করলেও ম্যাচ হেরে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলেন ভিপি সুহের। ছবি - আইএসএল
ফলে ম্যাচ হেরে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলেন খালিদ। তাঁর ভাগ্য সঙ্গ দিল না। অন্যদিকে খোলস বদলে আক্রমণের ঝড় তুলে ম্যাচ বের করে নিলেন বুদ্ধিমান হাবাস। তবে এ বার আগামী ১৩ মার্চ সার্জিও লোবেরার মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ফাইনালে নামবেন হাবাস। চলতি মরসুমে দুবার লোবেরার কাছে দুবার হেরেছেন হাবাস। বড় মঞ্চে জোড়া হারের বদলা নিতে নিঃসন্দেহে তৈরি রয়েছেন দুবারের আইএসএল জয়ী কোচ। কারণ এ বার যে তাঁর কাছে হ্যাট্রিক করার সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে আবির্ভাবেই ট্রফি জয়ের স্বপ্নে বিভোর সবুজ-মেরুন।