Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Derby

এটিকে মোহনবাগান না এসসি ইস্টবেঙ্গল, ডার্বি-যুদ্ধে কে এগিয়ে? বিশ্লেষণ করল আনন্দবাজার ডিজিটাল

সেই ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়েছিল চরমে। তবে অনেকের মতে, এ বারের ডার্বি কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে।

জোড়া ডার্বি জয়ের নজির গড়তে মরিয়া হাবাস। জিতে ফাওলারকে ম্যাচ উপহার দিতে চান গ্রান্ট।

জোড়া ডার্বি জয়ের নজির গড়তে মরিয়া হাবাস। জিতে ফাওলারকে ম্যাচ উপহার দিতে চান গ্রান্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:২২
Share: Save:

বাঙালির চিরন্তন ডার্বি-যুদ্ধ নিয়ে দুই দলের সমর্থকদের একটা আলাদা আবেগ, পাগলামি, উন্মাদনা কাজ করে। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। ভারতীয় ফুটবলের দুই মহাশক্তি একে অপরের মুখোমুখি হলে তো আবেগের মহা বিস্ফোরণ ঘটবেই, যেমনটা গত বছর ২৭ নভেম্বর চলতি আইএসএলের প্রথম ডার্বিতে হয়েছিল। সেই ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়েছিল চরমে। তবে অনেকের মতে, এ বারের ডার্বি কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে। নির্বাসনের জন্য রবি ফাওলার এই ম্যাচে বেঞ্চে বসবেন না। তাঁর বদলে কোচিং করাবেন সহকারি টনি গ্রান্ট। তা ছাড়া মাঠে দাপট দেখানোর নিরিখেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসসি ইস্টবেঙ্গলের থেকে অনেকটাই এগিয়ে এটিকে মোহনবাগান। ১৭ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকার মগডালে আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাসের দল। সেখানে সমসংখ্যক ম্যাচে রবি ফাওলারের দলের ঝুলিতে মাত্র ১৭ পয়েন্ট।

মরসুমের প্রথম ডার্বিতে ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল সবুজ-মেরুন। এরপর গত দুই মাসে দুই দলের পারফরম্যান্সের মধ্যেও আকাশ-পাতাল ফারাক। যদিও ম্যাচটা যেহেতু ডার্বি তাই আগেভাগে ফেভারিট ধরে নেওয়াও উচিত নয়। তাই আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯০ মিনিটের যুদ্ধে নামার আগে দুই দলের শক্তি ও দুর্বলতার দিকে চোখ রাখা যাক। একইসঙ্গে, এবারের দ্বিতীয় পর্যায়ের ডার্বিতে রেফারিংও বড় চিন্তা। কারণ, গত বেশ কয়েকটি ম্যাচে দুই প্রধানই খারাপ রেফারিংয়ের শিকার হয়েছে। প্রতিবাদ করেও কোনও লাভ হয়নি।

দুই কোচের শক্তি

আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাস: রক্ষণ জমাটি করে বিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতি-আক্রমণ। হাবাসের এটাই বৈশিষ্ট্য। ব্রাজিলিয়ান মার্সেলিনহো দলে আসার পর থেকে আক্রমণে ঝাঁজ অনেকটাই বেড়েছে। তাছাড়া দু’বারের আইএসএল জয়ী কোচের ম্যাচ বোঝার ক্ষমতা অনবদ্য। গত ডার্বি জয়ও তাঁকে ও তাঁর দলকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে।

টনি গ্রান্ট: তিনিও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে পছন্দ করেন। দল ধারাবাহিক ভাবে মেলে ধরতে না পারলেও বেশ কয়েকটি ম্যাচে লড়াই করার তাগিদ দেখিয়েছে। তাছাড়া কোচ ফাওলার নেই। তাই কোচকে বিশেষ জয় উপহার তেতে থাকবে লাল-হলুদ ড্রেসিংরুম।

রয় কৃষ্ণ না ব্রাইট। আসন্ন ডার্বি যুদ্ধে কে দ্যুতি ছড়াবেন? আলোচনা তুঙ্গে।

রয় কৃষ্ণ না ব্রাইট। আসন্ন ডার্বি যুদ্ধে কে দ্যুতি ছড়াবেন? আলোচনা তুঙ্গে।

দুই কোচের দুর্বলতা

আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাস: অতি রক্ষণাত্মক মানসিকতা দেখানোর জন্য বেশ কয়েকটি ম্যাচে তাঁর দল হেরেছে। এছাড়া চলতি প্রতিযোগিতায় চোট-আঘাত তাঁর দলের কাছে নিত্যসঙ্গী। আরও একটা দুর্বল জায়গা হল মাঝমাঠ। এদু গার্সিয়া চোটের জন্য এখনও মাঠের বাইরে। ফলে বলের জোগান ঠিক মত আসছে না।

টনি গ্রান্ট: কোচ হিসেবে অভিজ্ঞতার অভাব। প্রথম ডার্বি হার তিনিও বেঞ্চে বসে দেখেছিলেন। এরপর অনেকগুলো ম্যাচ খেলে ফেললেও লাল-হলদ ‘দল’ হিসেবে খেলতে পারেনি। রবি ফাওলার কিংবা তাঁর ‘প্রিয় বন্ধু’ গ্রান্ট কেউই সেরা প্রথম একাদশ মাঠে নামাতে পারেননি।

সম্ভাব্য ছক

আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাস: গত ডার্বি-যুদ্ধে ৩-৫-২ ছকে দল মাঠে নামিয়ে সাফল্য পেয়েছিলেন। এবারও কি সেই একই ছকে প্রতিপক্ষকে বধ করে জোড়া ডার্বি জয়ের নজির গড়বেন? সেটাই দেখার।

টনি গ্রান্ট: প্রথম ডার্বি হারলেও ৩-৪-১-২ ছকে দল সাজিয়েছিলেন ফাওলার। তবে এবার লাল-হলুদের হয়ে প্রথম ‘বড় ম্যাচ’ খেলতে নামবেন ব্রাইট এনোবাখারে। তিনি থাকায় গ্রান্ট তাঁর বন্ধু ফাওলারের কাছ থেকে কী পরামর্শ নিয়ে দল সাজান সেই অপেক্ষায় সবাই।

বাঙালি ফুটবলার ও ডার্বি আবেগ

এখানেও অনেকটা এগিয়ে এটিকে মোহনবাগান। সবুজ-মেরুনে বাঙালি ফুটবলারদের ছড়াছড়ি। প্রবীর দাস, প্রীতম কোটাল, প্রণয় হালদার, শুভাশিস বসু, অরিন্দম ভট্টাচার্য, শেখ সাহিলের মতো একাধিক বাঙালি ফুটবলার আছেন যাঁরা অতীতে ডার্বি খেলেছেন। জয়ের রেকর্ড বেশ চোখে পড়ার মতো। সে দিক থেকে দেখতে গেলে সুব্রত পাল, দেবজিৎ মজুমদার, মহম্মদ রফিক, সৌরভ দাস, সার্থক গোলুই, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়দের ডার্বি রেকর্ড আহামরি নয়। যদিও জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচে পাঁচ জন বাঙালি ফুটবলার লাল-হলুদ জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নেমেছিলেন।

নির্বাসিত হেড কোচকে ডার্বি জয় উপহার দিতে চায় লাল-হলুদ। ফাইল চিত্র।

নির্বাসিত হেড কোচকে ডার্বি জয় উপহার দিতে চায় লাল-হলুদ। ফাইল চিত্র।

দুই দলের আক্রমণ

এটিকে মোহনবাগান: রয় কৃষ্ণ, মনবীর সিংহ, ডেভিড উইলিয়ামস তো আছেনই। তাঁদের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছেন মার্সেলিনহো। চলতি আইএসএলে সর্বোচ্চ ১৩ গোল করে ‘গোল্ডেন বুট’-এর দাবিদার ফিজি তারকা। এটা দলের কাছে ইতিবাচক দিক হলে চিন্তার ব্যাপার হল, অন্য স্ট্রাইকাররা কৃষ্ণর মতো নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। মনবীর গত ডার্বি যুদ্ধে গোল করলেও ধারাবাহিক নন। বিশেষ করে হতাশ করেছেন অজি স্ট্রাইকার ডেভিড উইলিয়ামস।

এসসি ইস্টবেঙ্গল: ব্রাইট আসার পর আক্রমণে ঝাঁজ বাড়লেও ধারাবাহিকতা নেই। মরসুমের শুরু থেকেই দলে গোল করার লোক নেই। এটাই লাল-হলুদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। বলবন্ত সিংহ ও জেজে একেবারে ফ্লপ। মাঠি স্টেনম্যান মাঝমাঠ থেকে উঠে এসে চারটি গোল করেছেন। তা-ও আবার গত ১৫ ম্যাচে। যা বিপক্ষের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। আর বাঙালির ‘বড় ম্যাচে’ এটাই ইস্টবেঙ্গলের চিন্তার বিষয়। কারণ, অ্যান্টনি পিলকিনটন গোল করার চেষ্টা করলেও ধারাবাহিক নন।

দুই দলের মাঝমাঠ

এদু না থাকলেও এটিকে মোহনবাগানের মাঝমাঠ সামাল দেওয়ার জন্য রয়েছেন কার্ল ম্যাকহিউ ও লেনি রদ্রিগেস। বিপক্ষের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক ফুটবল খেলার জন্য রয়েছেন প্রণয় হালদার। সেখানে লাল-হলদের মাঝমাঠে একাই লড়ে যান জার্মান মিডফিল্ডার স্টেনম্যান। জা মাঘোমা লড়াই করলেও তাঁর ফুটবলে মিস পাসের ছড়াছড়ি। সেটা ইতিমধ্যেই হাবাসের নোটবুকে উঠে গিয়েছে।

দুই দলের রক্ষণ

এখানেও অনেক এগিয়ে এটিকে মোহনবাগান। প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত ১০ বার ‘ক্লিন শিট’ রেখে মাঠে ছেড়েছেন সন্দেস-তিরি-প্রীতমরা। সেখানে লাল-হলুদ মাত্র ৩ বার ‘ক্লিন শিট’ রেখেছে। চোটের জন্য প্রথম ডার্বি ম্যাচ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মাঠ ছেড়েছিলেন ড্যানি ফক্স। এবার তিনি খেললেও কি রয় কৃষ্ণকে রুখতে পারবেন? আলোচনা তুঙ্গে।

তিন কাঠির নীচে কে সেরা?

এখানে কিন্তু দুই বাঙালির জোর টক্কর চলছে। অরিন্দম ভট্টাচার্য ও দেবজিৎ মজুমদার দু’জনেই কিন্তু বেশ সফল। ১৭ ম্যাচে ১৫৩০ মিনিট গোলকিপিং করেছেন অরিন্দম। এর মধ্যে রয়েছে সর্বাধিক ৪৮টি সেভ। তবে উত্তরপাড়ার দেবজিৎও পিছিয়ে নেই। ১৫ ম্যাচে ৫০টি সেভ করে নজর কেড়েছেন। তবে দেখার বিষয় ডার্বিতে লাল-হলুদের গোলের নিচে কে দাঁড়ান। কারণ ফাওলার আবার অভিজ্ঞ সুব্রত পালকে বেশ পছন্দ করেন। তাই দেবজিৎ না সুব্রত কে গোলের নিচে দাঁড়ান সেটাই দেখার।

রেফারিং নিয়ে দুই দলের ভয়

চলতি আইএসএলে সবার দলের মত দুই প্রধান জঘন্য রেফারিং নিয়ে জেরবার। হাবাস ও ফাওলার দু’জনেই একাধিকবার এই বিষয় নিয়ে অভিযোগ করেছেন। তবে লাভ হয়নি। উল্টে রেফারিদের বিরুদ্ধে একাধিকবার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাসিত হয়েছেন লিভারপুল কিংবদন্তি। তাই রেফারি নিয়ে দুই দলের কোচের মনেই কাজ করছে ‘ভয়’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy