সফল: ডার্বিতে গোল করে মন জয় করলেন মনবীর। টুইটার
নব্বইয়ের দশকে কুলজিৎ সিংহের সঙ্গে তাঁকেও সই করাতে চেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু পঞ্জাব রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের চাকরি ছেড়ে কলকাতা ময়দানে খেলতে আসার ঝুঁকি নিতে পারেননি কুলদীপ সিংহ।
গোয়ার বেশ কয়েকটি ক্লাবের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন একই কারণে। তবে ঠিক করেছিলেন, যে কোনও মূল্যে দুই ছেলেকে ফুটবলার তৈরি করবেন। এবং কলকাতায় খেলতে পাঠিয়ে নিজের অধরা স্বপ্ন পূরণ করবেন। শুক্রবার আইএসএলের প্রথম ডার্বিতেই এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে দুরন্ত গোল করে বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন এটিকে-মোহনবাগানের নতুন তারকা মনবীর সিংহ।
পঞ্জাবের জ়ালন্ধর জেলায় আদমপুরের কাছে ‘ডাউলিকে দূরে’ গ্রামে বাড়ি মনবীরের। অফিস থেকে ফিরেই দুই ছেলেকে নিয়ে মাঠে নেমে পড়তেন কুলদীপ। ছোট ছেলে মনবীর অল্প দিনের মধ্যেই নজর কাড়তে শুরু করেন। ডাক পান জেসিটি অ্যাকাডেমিতে। পঞ্জাবের একটি প্রতিযোগিতায় মনবীরকে দেখে পছন্দ হয় মিনার্ভা অ্যাকাডেমির কোচ সুরেন্দ্র সিংহের।
ছেলেকে নিয়ে যখন স্বপ্নে বিভোর কুলদীপ, তখনই ঘটে যায় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। ট্রান্সফর্মার মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হন তিনি। কোনও ক্রমে প্রাণে বাঁচলেও শরীরের নিম্নাংশ সম্পূর্ণ অসাড় হয়ে পড়ে। ২০১৪ সাল থেকেই পুরোপুরি শয্যাশায়ী কুলদীপ। প্রবল অসুস্থতার মধ্যেও খোঁজ নিতেন, মনবীর ঠিক মতো অনুশীলন করছেন কি না। ম্যাচে কেমন খেলছেন। কটা গোল করলেন।
২০১৬-তে মিনার্ভা এফসি-তে খেলার সময় মহমেডান প্রস্তাব দেয় মনবীরকে। কিন্তু অসুস্থ বাবাকে ছেড়ে কলকাতায় খেলতে আসবেন কী করে তা নিয়েই দ্বিধায় ভুগছিলেন। শেষ পর্যন্ত বাবার অনুপ্রেরণাতেই মাসিক ৩০ হাজার টাকা বেতনে সাদা-কালো দলে যোগ দেন ভারতীয় ফুটবলের প্রতিশ্রুতিমান স্ট্রাইকার। থাকতেন ইলিয়ট রোডে ক্লাবের মেসে। মহমেডানের কোচ তখন মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতা ময়দানে অভিষেকের মরসুমেই নজর কেড়ে নেন মনবীর। এর পরে সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার কোচ হন মৃদুল। সেখানও তাঁর প্রধান ভরসা ছিলেন মনবীর। ২০১৭ সালে বাংলা শেষ বার সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল গোয়ার বিরুদ্ধে করা মনবীরের একমাত্র গোলেই। তার পরেই আইএসএল খেলার জন্য যোগ দেন এফসি গোয়ায়। ডাক পান সিনিয়র জাতীয় দলেও। কেরলের বিরুদ্ধে চলতি আইএসএলে প্রথম ম্যাচে মনবীরের পাস থেকেই গোল করেছিলেন রয় কৃষ্ণ। ডার্বিতেও ফুল ফোটালেন এই দুই স্ট্রাইকার।
শনিবার বিকেলে উচ্ছ্বসিত মনবীরের বাবা ফোনে বলছিলেন, ‘‘আমি যা পারিনি, মনবীর তা করে দেখাল। এটিকে-মোহনবাগানের প্রস্তাব পাওয়ার পরে ও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, কী করব? বলেছিলাম, ‘‘পুত্তর এই সুযোগ বার বার আসবে না। আমার মতো ভুল করলে সারা জীবন আফসোস করতে হবে। কলকাতার বড় ক্লাবে না খেললে ফুটবলারের জীবন কখনও সম্পূর্ণ হয় না।’’ যোগ করলেন, ‘‘সবুজ-মেরুন দলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই রোজ বলতাম, ডার্বিকে পাখির চোখ করো। এই ম্যাচে গোল করলে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। মনবীর আমার কথা রেখেছে।’’
ডার্বি জয়ের পরে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাড়িতে ফোন করেছিলেন মনবীর। আবেগরুদ্ধ গলায় কুলদীপ বললেন, ‘‘ওর প্রথম কথাই ছিল, বাবা আমি কিন্তু পেরেছি। মনবীরকে বললাম, একটা ম্যাচে গোল করে উচ্ছ্বাসে ভেসে যেও না। তোমার লড়াই সবে শুরু হয়েছে। আমি জানি, মনবীর পারবে। ও-ই আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা।’’ মনবীরের প্রেরণাও তো বাবার অদম্য লড়াই।
কুলদীপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও মাহিলপুর অ্যাকাডেমির প্রাক্তন প্রধান কোচ আলি হাসান বলছিলেন, ‘‘খুব ছোটবেলায় মনবীর আমাদের অ্যাকাডেমিতে আসত। বরাবরই ওর মধ্যে শেখার প্রবল আগ্রহ ছিল। কুলদীপও দুর্দান্ত স্ট্রাইকার ছিল। মনবীর বাবার মতোই লড়াকু।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy