ঈশান পোড়েল এবং ঋষভ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে গুরু প্রদীপ মন্ডল। ছবি: নিজস্ব চিত্র।
বহু ক্রিকেটার তালিম নিয়েছেন তাঁর কাছে। ঈশান পোড়েল থেকে অনুষ্টুপ মজুমদার— তাঁর হাত ধরেই শিখেছেন ক্রিকেটের অ-আ-ক-খ। তবুও প্রচারের আলো থেকে শত যোজন দূরে ঈশান-অনুষ্টুপদের ‘দ্রোণাচার্য’ প্রদীপ মণ্ডল।
ইস্টার্ন রেলে খেলতে খেলতেই তাঁর কোচিং জীবনের শুরু। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এই দলের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন তিনি। চন্দননগরে নিজের ক্যাম্পে খুদে ক্রিকেটারদের তৈরিতে ব্যস্ত প্রদীপবাবু। খুব কাছ থেকে কঠিন বাস্তব দেখা কোচ বলেন, “আমাদের ছেলেদের ট্যালেন্টের অভাব নেই। তবে প্রতিদিন বিভিন্ন সংগ্রামের সম্মুখীন হতে হয় ওদের। অনেকসময়েই বাধ্য হয়ে ওদের খেলা ছেড়ে দিতে হয়। আমার জীবন এমনই সব ক্রিকেটারদের জন্য। ওদেরকে ঘষে মেজে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারলেই তো আমার কোচিং জীবন সার্থক।’’
ঈশান বা অনুষ্টুপের গোড়ার দিকের দিনগুলি এখনও চোখের সামনে ভাসছে প্রদীপের। স্মৃতির পাতা উল্টে তিনি বলেন, ‘‘ওরা যখন আমার কাছে এসেছিল, তখন একদমই ছোট। বিশেষ করে অনুষ্টুপ যখন আসে, তখন আমি নিজের কোচিং জীবন সবে শুরু করেছি।ঈশান সম্পর্কে কী বলব আর? একদম ছোটবেলায় ওর বাবার হাত ধরে আমার কাছে এসেছিল। তখন ও এতটাই রোগা এবং লম্বা যে বল করার সময়ে, ওর ঘাড়টাই সোজা রাখতে পারত না। এমনকি ওর পা দু’টিও কোনাকুনি করে পড়ত। এই জায়গায় ওকে আরও উন্নতি করতে হবে।’’
প্রদীপবাবুর হাতে তৈরি ঈশান এখন বাংলা দলের বোলিং বিভাগের অন্যতম প্রধান ভরসা। নিয়মিত ভারত এ দলের জার্সি চাপিয়ে মাঠে নামছেন। ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী এই বোলার। ঈশানের সাফল্যের রহস্য কী? শিষ্য সম্পর্কে গুরু বলছেন, “ঈশান যখন আমার কাছে এসেছিল, তখন রোগা পাতলা ছিল। ওর আত্মবিশ্বাস এবং নিয়মানুবর্তিতা দেখে আমি সত্যিই বিস্মিত হয়েছিলাম। যে কোনও জায়গায় সাফল্য পেতে আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন। এই আত্মবিশ্বাসে ভর করেই সাফল্য পাচ্ছে ঈশান। আমার বহুদিনের স্বপ্ন সার্থক করছে ঈশান। তবে এখনও অনেক পথ চলা বাকি ওর। আইপিএল বা ওয়ানডে নয়, ওর সঠিক মুল্যায়ন হবে টেস্ট ক্রিকেট। আশা করি, সেদিনটা বেশি দূর নয়। ভারতের মনোগ্রামটা শীঘ্রই ঈশানের হেলমেটের সামনে দেখা যাবে। আমি এই স্বপ্নই দেখি।’’
অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়া কাপে আরব আমিরশাহির হয়ে বল হাতে ফুল ফুটিয়েছেন আর এক বঙ্গতনয় ঋষভ মুখোপাধ্যায়। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করে নজর কেড়েছেন ঋষভ। সুদূর দুবাই থেকে সময় পেলেই আমিরশাহির স্পিনার চলে আসেন গুরুর কাছে। জেনে নেন বোলিং-এর নতুন নতুন সব অস্ত্র। ঋষভের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ প্রদীপ, “আমার উপরে ঋষভের অসীম শ্রদ্ধা। আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি খুলে দিয়েছি ওর সামনে। শুধুমাত্র স্কিল নয়, কঠিন পরিশ্রমই হল সাফল্যের চাবিকাঠি। আজকে ঋষভ যে জায়গায় পৌঁছেছে, তার পিছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম।’’
ক্রিকেটার তৈরি করার ব্রত নিয়েছেন প্রদীপবাবু। নামী ক্রিকেটার তৈরি করেও তিনি থেকে যান অন্তরালে। প্রচারের আলো পড়ে না কেন তাঁর উপরে? প্রদীপ বলেন, “আমার ছাত্ররা ভাল খেললেই তো সবাই আমাকে চিনবে, জানবে।’’ তাঁর অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করবেন শিষ্যরা, এটাই আশা বর্ষীয়ান কোচের।
আরও পড়ুন: কোহালি তোমাকে অভিনন্দন, ভারত অধিনায়ককে আফ্রিদির টুইট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy