Ishan Kishan struggled hard to fulfil his dreams dgtl
Cricket
রাতের পর রাত অনাহারে থেকে, বাসন মেজেও যোগ্য গুরুদক্ষিণা দেন অঙ্কে কাঁচা ঈশান কিশন
বছর দু’য়েক এ ভাবে কাটার পরে এক দিন বাড়ির লোক জেনে গেলেন তাঁদের ছেলের অনাহারে থাকার কথা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২১ ১৩:৩৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৩
জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকেই বাজিমাত করেছেন ঈশান কিশন। তাঁর এই সাফল্যের পিছনে লুকিয়ে আছে যন্ত্রণাবিদ্ধ অতীত। জীবনে চলার পথ মসৃণ ছিল না বেশির ভাগ সময়েই। ১২ বছর বয়সে পরিবার থেকে দূরে সরে যাওয়া থেকে শুরু করে অভুক্ত অবস্থায় ঘুমোতে যাওয়া— সমস্যা যত এসেছে, ঈশানের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন তত দৃঢ় হয়েছে।
০২১৩
১৯৯৮ সালের ১৮ জুলাই ঈশানের জন্ম বিহারের বুদ্ধগয়ায়। জন্মগত নাম ঈশান প্রণব কুমার পাণ্ডে কিশন। ঈশানের প্রথম ক্রিকেট কোচ ছিলেন উত্তম মজুমদার। তাঁর কথায় বুদ্ধগয়া ছেড়ে ঈশানকে চলে যেতে হয়েছিল রাঁচী। উত্তমের মনে হয়েছিল, বুদ্ধগয়ার মতো ছোট শহরে থাকলে ঈশানের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা কঠিন।
০৩১৩
এত সহজে অবশ্য বাড়ি ছেড়ে যাওয়া হয়নি। ঈশানের মা প্রবল বাধা দিয়েছিলেন। মাকে অনেক বুঝিয়ে ঈশান চলে গিয়েছিলেন রাঁচী। সেখানে জেলাস্তরের ক্রিকেটে স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড বা সেইল-এর দলে সুযোগ পেয়েছিলেন
০৪১৩
সে সময় তিনি একটি ঘরে থাকতেন ৪ জন সিনিয়রের সঙ্গে। রান্নাবান্না করতে হত নিজেদেরই। কিন্তু ঈশান রান্না করতে পারতেন না। তাই তাঁর উপর ভার ছিল বাসন মাজার। তার পরেও যে রোজ রাতে খাবার জুটত, তা নয়।
০৫১৩
ঈশানের ঘরে যে সিনিয়র ক্রিকেটাররা থাকতেন, তাঁরা প্রায়ই গভীর রাত অবধি ত্রিকেট খেলতেন। তার পর রান্না এবং খাওয়ার পর্ব। তত ক্ষণে জেগে থাকতে পারত না ছোট্ট ঈশান। সে ঘুমিয়ে পড়ত। বেশির ভাগ দিনই রাতের খাবার ছিল ঠান্ডা পানীয় এবং চিপস।
০৬১৩
কিন্তু নিজের অভুক্ত থাকার কথা বাড়িতে জানাতেন না। যখনই ফোনে কথা হত, ঈশান বলতেন তিনি একদম ঠিক আছেন। বছর দু’য়েক এ ভাবে কাটার পরে এক দিন বাড়ির লোক জেনে গেলেন তাঁদের ছেলের অনাহারে থাকার কথা।
০৭১৩
জানা মাত্রই দেরি করলেন না ঈশানের বাবা প্রণবকুমার পাণ্ডে। পেশায় ব্যবসায়ী প্রণব রাঁচীতে একটা ফ্ল্যাট কিনলেন। ঈশানের মা সুচিত্রা বুদ্ধগয়ায় নিজের সংসার ফেলে চলে গেলেন ছেলের কাছে।
০৮১৩
ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝাড়খণ্ডের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের দৌলতে ঈশানের সামনে বড় সুযোগের দরজা খুলে যেতে দেরি হয়নি। ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেলেন তিনি। দলের কোচ ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। ঈশানকে দলের অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়।
০৯১৩
ছেলের এই কৃতিত্বের পরেই আশ্বস্ত হন প্রণব— ক্রিকেটে কিছু করতে না পারলেও ছেলে অন্তত সরকারি চাকরি পাবেন। নয়তো ছোট থেকে পড়াশোনায় অনাগ্রহী, অঙ্কে কাঁচা ছেলেকে নিয়ে উদ্বিগ্নই ছিলেন তিনি।
১০১৩
এখন সেই ছেলের জন্যই পরিবারের মুখ উজ্জ্বল। ২০২১ সালের ১৪ মার্চ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচে জাতীয় দলের সিনিয়র পর্যায়ে অভিষেক হয় ঈশানের। সেই ম্যাচে তাঁর ৩২ বলে ৫৬ রান ছিল ভারতের ৭ উইকেটে জয়ী হওয়ার নেপথ্যের অন্যতম কারিগর। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও যায় তাঁর কাছেই।
১১১৩
এখনও অবধি ২টি টি-২০ ম্যাচে খেলেছেন তিনি। মোট রান ৬০। সর্বোচ্চ স্কোর ৫৬। বাঁ হাতি এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান এখনও ওয়ান ডে বা টেস্ট দলে সুযোগ পাননি। আইপিএল-এ খেলেছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। সব ধরনের ক্রিকেটে তরুণ ঈশানকে প্রলয় বিষাণ বাজাতে দেখার অপেক্ষায় দর্শকরা।
১২১৩
অভিষেক ম্যাচের অর্ধশতরান ঈশান উৎসর্গ করেছেন তাঁর প্রশিক্ষক উত্তমের প্রয়াত বাবার স্মৃতির উদ্দেশে। উত্তম জানিয়েছেন, পাঁচ ছ’ বছর বয়স থেকেই ঈশান তাঁর পরিবারেরই এক জন। কোচের বাবারও খুব প্রিয় ছিলেন তিনি।
১৩১৩
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে খেলতে নামার আগে উত্তম তাঁর শিষ্যকে হালকা ছলে বলেছিলেন যদি ঈশান মাঠে অর্ধশতরান করতে পারেন, তবে সেটা যেন তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত উত্তমের বাবার স্মৃতিতে উৎসর্গ করেন। যোগ্য গুরুদক্ষিণা দিতে পেরেছেন ঈশান।