মায়াঙ্ক যাদব। —ফাইল চিত্র।
মায়াঙ্ক যাদব। বয়স ২১ বছর। ডান হাতি পেসার এর মধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছেন। আইপিএলে তাঁর গতি চমকে দিয়েছে সকলকে। নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে বল করছেন। সেই সঙ্গে লাইন ও লেংথের উপরে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একটি মাত্র ম্যাচ খেলা এই মায়াঙ্ক কি জায়গা করে নেবেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া ভারতীয় দলে?
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল এখনও ঠিক হয়নি। তবে আইপিএলে ভাল খেললে সরাসরি বিশ্বকাপের দলে যে ঢুকে পড়া যায় তার সেরা উদাহরণ বরুণ চক্রবর্তী। ২০২১ সালের আইপিএলে ভাল খেলে জায়গা করে নিয়েছিলেন বিশ্বকাপের দলে। মায়াঙ্কও সেই তালিকায় নাম তুলতে পারেন। টি-টোয়েন্টি দলে পেসার হিসাবে যশপ্রীত বুমরার জায়গা পাকা। কিন্তু তাঁর সঙ্গী কে হবেন? মহম্মদ শামির চোট। তাঁকে পাওয়া যাবে না। মহম্মদ সিরাজ এ বারের আইপিএলে যে ফর্মে রয়েছেন, তাতে হায়দরাবাদের পেসারকে দলে নিলে প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রতি ম্যাচে রান দিচ্ছেন তিনি। সিনিয়র পেসার হয়েও দায়িত্ব নিয়ে খেলতে ব্যর্থ সিরাজ। ফলে তাঁর জায়গা পাকা, এমনটা এখনই বলা যাবে না। তা হলে বুমরার সঙ্গী কে হবেন?
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক চুক্তিতে বুমরা, সিরাজ, শামি ছাড়া রয়েছেন মুকেশ কুমার, আকাশ দীপ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ এবং আবেশ খানের মতো পেসার। মুকেশ এ বারের আইপিএলে নিয়মিত নন। ২ ম্যাচে নিয়েছেন ৪ উইকেট। আকাশ এখনও পর্যন্ত এ বারের আইপিএলে একটি মাত্র ম্যাচ খেলেছেন। প্রসিদ্ধের চোট রয়েছে। আবেশ পাঁচ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র তিনটি উইকেট। এমন অবস্থায় মায়াঙ্ক অবশ্যই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ঢোকার দাবি করতে পারেন।
মায়াঙ্কের সঙ্গে লড়াই হবে আরশদীপ সিংহের। এ বারের আইপিএলে ৫ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে কমলা টুপির লড়াইয়ে আছেন বাঁ হাতি পেসার। তিনি পরীক্ষিত। ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলেছেন। দেশের জার্সিতে ৪৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। এই বছর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও টি-টোয়েন্টি দলে রাখা হয়েছিল তাঁকে। ফলে বিশ্বকাপের দলে তিনি থাকতেই পারেন।
মায়াঙ্ক সেখানে ম্যাচ খেলেছেন তিনটি। তার মধ্যে একটি ম্যাচে এক ওভার বল করেই মাঠ ছেড়ে উঠে যান। তাঁর কোমরে ব্যথা। দু’টি ম্যাচে ৬ উইকেট তুলে নেন মায়াঙ্ক। সেই দু’টি ম্যাচেই তিনি সেরার পুরস্কার পান। মায়াঙ্কের বলের গতি দেখে ইয়ান বিশপ বলেন, “মায়াঙ্ক যাদবকে নিয়ে কথা হচ্ছিল এক বন্ধুর সঙ্গে। এমন প্রতিভাকে সামলে রাখতে হবে। আগামী দু’বছর ওর ব্যক্তিগত ট্রেনার প্রয়োজন হবে, চিকিৎসক লাগবে। ওকে সাবধানে রাখতে হবে।” বিশপের চিন্তা যে অমূলক ছিল না, তার প্রমাণ অবশ্য পাওয়া গিয়েছে। মায়াঙ্ক চোটের কারণে দলের বাইরে। লখনউ সুপার জায়ান্টসের সিইও বিনোদ বিস্ত বলেন, “মায়াঙ্কের তলপেটে ব্যথা হচ্ছিল। সেই কারণেই তাঁকে তুলে নেওয়া হয়। এই সপ্তাহে হয়তো ও আর খেলবে না। বিশ্রাম প্রয়োজন মায়াঙ্কের। তবে খুব তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরবে ও।”
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সুস্থ হয়ে মায়াঙ্ক যদি তাঁর ফর্ম ধরে রাখতে পারেন তা হলে যে একেবারে সুযোগ নেই তা বলা যায় না। বাংলার সহকারী কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী বললেন, “ভারতে এখন একের পর এক পেসার উঠে আসছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে তরুণ পেসারেরা উঠে আসছে। এর নেপথ্যে অবশ্যই রাজ্য স্তরের কোচেরা। হঠাৎ করে তো আর এত পেসার উঠতে পারে না। তাদের জন্য সময় দিতে হয়। কত ম্যাচ খেলাব, সেই হিসাব রাখতে হয়। না হলে পেসারদের চোট লাগবেই। মায়াঙ্ক যদি সুস্থ হয়ে ফিরে ওই গতিতে বল করে যায়, তা হলে সুযোগ তো পেতেই পারে।”
মায়াঙ্ককে তৈরি করেছেন তাঁর বাবা। আইপিএলে ভাল খেলা ছেলেকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি। মায়াঙ্কের বাবা বলেন, “ওর যখন ১২ বছর বয়স, তখনই বুঝে গিয়েছিলাম যে ও ক্রিকেটার হবে। আমার হাত ধরেই ওর খেলা শুরু। ১৪ বছর বয়সে যখন ও প্রথম ট্রায়ালে গেল তখনই বাকিদের থেকে এগিয়ে ছিল। তার পরেও মায়াঙ্ক প্রচুর পরিশ্রম করেছে। কোনও দিন আমার কথা ফেলেনি। আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ও ভারতীয় দলে খেলবে।”
মায়াঙ্ক নিজে যদিও এখনই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার কথা ভাবছেন না। তাঁর মাথায় শুধুই আইপিএল। মায়াঙ্ক বলেছিলেন, “টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে আমি এখনই ভাবছি না। আমি শুধু ভাল বল করে যেতে চাই। এখন ভাল বল করছি, তাই ভাল লাগছে। আমি এখনকার পারফরম্যান্সেই নজর দিতে চাই। আইপিএলেই মন দিতে চাই আপাতত।” তবে ভারতীয় দলে তিনি অবশ্যই খেলতে চান সে কথা জানিয়ে মায়াঙ্ক বলেছিলেন, “পর পর দুটো ম্যাচে সেরার পুরস্কার পেয়ে খুব ভাল লাগছে। তবে আরও বেশি খুশি ম্যাচ দুটো জিততে পেরে। আমার আসল লক্ষ্য দেশের হয়ে খেলা। সবে তো যাত্রা শুরু হল।”
মায়াঙ্কের আগে উমরান মালিককে নিয়ে আলোচনা হত আইপিএলে। তিনিও ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে বল করতে পারতেন। কিন্তু এক মরসুমেই শেষ হয়ে যায় সেই আলোচনা। এখন উমরান প্রতি ম্যাচে জায়গাও পান না। মায়াঙ্ক আর উমরানের মধ্যে যদিও একটা তফাত রয়েছে। মায়াঙ্কের লাইন এবং লেংথের উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সেটাই উমরানের ছিল না। শুধু গতি দিয়ে এখনকার ব্যাটারদের আটকে রাখা যায় না। উমরান তাই প্রথম কিছু দিন সাফল্য পেলেও এখন আড়ালে চলে গিয়েছেন। মায়াঙ্ক কী করেন সেই দিকে নজর থাকবে। তবে লখনউয়ের বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল বলেন, “মায়াঙ্ক শুধু ভাল বলই করেনি, গুরুত্বপূর্ণ উইকেটগুলোও তুলে নিয়েছে। গত মরসুমটা ওর ভাল যায়নি। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচেই চোট পেয়েছিল। আমি ওকে একটা কথাই বলেছি, ভাল ক্রিকেট খেলার জন্য প্রয়োজন প্রাথমিক বিষয়গুলো ঠিক ভাবে করা। বলের লাইন এবং লেংথের ব্যাপারে সতর্ক থাকার কথা বলেছি। মায়াঙ্ক সেটাই করার চেষ্টা করে। ম্যাচেও বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করেনি। ওর বলের গতি বাড়তি পাওনা।”
মায়াঙ্ক এ বারের আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ক্যামেরন গ্রিনের বিরুদ্ধে ১৫৬.৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে বল করেছিলেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই বোলার জায়গা পেলে অনেক ব্যাটারের ঘুম উড়বে তা বলাই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy