দাপট: ফাইনালে রাজস্থানের ভরসা বাটলার। ফাইল চিত্র।
আইপিএল ফাইনালের আগে সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেটারকে বাছতে বলা হলে, নিঃসন্দেহে একটা নাম সবার আগে চলে আসবে। জস বাটলার। চলতি আইপিএলে চারটে সেঞ্চুরি, ৮২৪ রান। স্ট্রাইক রেট ১৫১.৪৭, গড় ৫৮.৮৫।
শুধু এই অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতাই নয়, যে অনায়াস ভঙ্গিতে ইংল্যান্ডের বিস্ফোরক এই ব্যাটার মিড উইকেট-মিড অন অঞ্চল দিয়ে বল গ্যালারিতে ফেলে দিতে পারেন, তাও সাড়া ফেলেছে ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে। বাটলারের তূণে কোথা থেকে এল এ রকম ভয়ঙ্কর অস্ত্র?
ইংল্যান্ডে বাটলারের প্রাক্তন কয়েক জন কোচের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে এই সব শটের উৎস-কাহিনি। জানা যাচ্ছে, বেসবল স্টান্স, হকির ফ্লিক শট, টেনিস ফোরহ্যান্ডই তাঁকে এ রকম ভয়ঙ্কর করে তুলেছে।
বাটলার যে স্কুল আর গুরুর হাত ধরে বড় হয়েছেন, সেই কিংস কলেজ, টনটনের ডিরেক্টর অব স্পোর্টস ফিল লুইস বলছিলেন, ‘‘সবাই এই কথাটাই এখন বলে। কী ভাবে বাটলার মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ও রকম সব শট খেলে। ছোটবেলায় আমাদের স্কুলে ও ক্রিকেটের পাশাপাশি টেনিস, হকি— সব ধরনের খেলাই খেলত। আর সে সব খেলাই ওর ক্রিকেট ভিত মজবুত করে দিয়েছে।’’
কী রকম সেটা? ছোটবেলার কোচের ব্যাখ্যা, ‘‘টেনিস হোক বা হকি, দু’টোতেই দ্রুত পায়ের নড়াচড়া এবং শক্তিশালী কব্জির প্রয়োজন হয়। শটের পিছনে পুরো শক্তিটা সঞ্চারিত হয়ে কোমর-পিঠ থেকে।’’ জানা যাচ্ছে, হকির ফ্লিক শট বা টেনিসের ফোরহ্যান্ডের মতো শট খেলাটা ছোটবেলা থেকেই রপ্ত করেছিলেন বাটলার। নিয়মিত অনুশীলনও চলত কিংস কলেজে। যা থেকেই জন্ম নিয়েছে বাটলারের ভয়ঙ্কর সবক্রিকেট শট।
সে গেল একটা দিক। ক্রিকেট ব্যাট হাতে এখনকার সব শটের পিছনে যে শক্তিটা সঞ্চারিত হচ্ছে, তার উৎস কিন্তু বাটলারের স্টান্সও। দু’টো পা ফাঁক করে, শরীরটাকে একটু ঝুঁকিয়ে দাঁড়ান বাটলার। যাকে অনেকেই বলছেন ‘বেসবল স্টান্স’।
সমারসেট কাউন্টি ক্লাবের প্রধান কোচ জেসন কেরের চোখের সামনেই বেড়ে ওঠা বাটলারের। কেরও মনে করেন, ছোটবেলায় বিভিন্ন ধরনের খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকাই বাটলারকে এখন সাহায্য করছে। বাটলারের এই স্টান্স প্রসঙ্গে কেরের মন্তব্য, ‘‘এই বেসবল স্টান্সে ব্যাটার দু’পা একটু ছড়িয়ে দাঁড়ায়। তার পরে শট খেলার কয়েক মুহূর্ত আগে শরীরটা পিছনে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ইলাস্টিকের মতো সামনে এসে শটটা খেলে। এতে যে রকম মসৃণ ভঙ্গিতে শট খেলা যায়, সে রকম শক্তিও আনা যায় শটের মধ্যে। বাটলারও ঠিক তাই করছে।’’
শুধু শট খেলার দক্ষতাই নয়, বাটলারের মানসিক কাঠিন্য এবং ক্রিকেট বুদ্ধি তাঁকে এ রকম ভয়ঙ্কর করে তুলেছে বলে জানাচ্ছেন দুই কোচ। ফিল বলে দিচ্ছেন, ‘‘কতটা ঝুঁকি নিলে সাফল্য আসবে, সেটা ভাল করে জানে বাটলার। ও খুব বুদ্ধিমান ক্রিকেটার। জানে কী ভাবে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়।’’ জেসন কেরও একমত। ‘‘বাটলার মানসিক ভাবেও খুব শক্তিশালী। যে কারণে কঠিন পরিস্থিতি আর চাপ কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে,’’ বলেছেন তিনি। তবে দু’জনেই একমত, বাটলারের শক্তি তাঁর ব্যাটিংকে অন্য মাত্রায় তুলে নিয়ে গিয়েছে।
কিন্তু এই শক্তি কী ভাবে পান বাটলার? শোনা যায়, বাটলারের প্রিয় ব্যায়াম ছিল পাঞ্চিং ব্যাগে ব্যাট মেরে নিজেকে শক্তিশালী করা। কিন্তু ইংল্যান্ড দলের ফিজ়িয়ো, ট্রেনাররা যে রুটিন করে দিয়েছেন, তাতে এই ব্যায়ামটা নেই। ইংল্যান্ডে খোঁজ নিয়ে বাটলারের জিম রুটিনের যে হদিশ পাওয়া গেল, তা মোটামুটি এ রকম:
এক, বারবেল জাম্প। দুই, বারবেল স্প্লিট স্কোয়াট। তিন, চিন আপ। চার, মেডিসিন বল সাইড থ্রো। পাঁচ, স্পট জাম্প। শুধু শক্তি বাড়ানোই নয়, বাটলার জোর দেন ক্ষিপ্রতা বাড়ানোর উপরেও। যে কারণে ‘এক্সপ্লোসিভ ট্রেনিং’-এর উপরেও নজর থাকে। যেখানে ওজন তোলা হয় অত্যন্ত দ্রুত গতির সঙ্গে।
এই মুহূর্তে বাটলার যে রকম ছন্দে আছেন, তাতে সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁকে এক নম্বর বলতে দ্বিধা নেই ছোটবেলার কোচের। ফিলের কথায়, ‘‘কোনও সন্দেহ নেই সাদা বলের ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার এখন বাটলারই। ওর শটে শক্তি তো আছেই, কিন্তু পাশাপাশি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শরীরটাকে স্থির রেখে বলটাকে দেখে বলে ও এত ভয়ঙ্কর।’’
আজ, রবিবার, আইপিএল ফাইনালে তাঁর ছাত্রের ব্যাট থেকে আরও একটা অবিস্মরণীয় ইনিংস দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন বাটলারের কৈশোরের গুরু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy